Published : 10 Jun 2025, 08:50 AM
কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে এমনিতেই বেছে বেছে সিরিজ খেলতেন নিকোলাস পুরান। এবার সেই অধ্যায়েরও সমাপ্তি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরই নিয়ে ফেললেন বিধ্বংসী এই ব্যাটসম্যান।
ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন পুরান। সামাজিক মাধ্যমে ঘোষণাও দিয়েছেন ভক্ত-সমর্থকদের জন্য।
এই নিয়ে দিন দশেকের ভেতর অবসরের ঘোষণা দিলেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বিশ্ব ক্রিকেটের তিন বড় তারকা। ওয়ানডেকে বিদায় বলে দেওয়া গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বয়স তবু ৩৬ পেরিয়েছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে যাওয়া হাইনরিখ ক্লসেনের বয়স ৩৩। পুরান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা থামালেন স্রেফ ২৯ বছর বয়সেই।
ম্যাক্সওয়েল-ক্লসেনের মতো পুরানও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের কাঙ্ক্ষিত এক নাম। গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে ধারাবাহিক ও বিস্ফোরক টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানদের একজন তিনি। বছরজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলে বেড়ান তিনি ক্রিকেট বিশ্বময়। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই কারণেই বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে তিনি থাকেননি এবং এই কারণেই তার অকাল-অবসর।
আইপিএলে লাক্ষ্নৌ সুপার জায়ান্টসে খেলে এসে বিশ্রামে থাকা পুরান ওয়েস্ট ইন্ডিজের চলতি ইংল্যান্ড সফরে যাননি। অধিনায়ক শেই হোপকে জিজ্ঞাসাও করা হয়েছিল এমন একজন ব্যাটসম্যানের অনুপস্থিতি নিয়ে। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক বলেছিলেন, এই সফরে না এলেও ভবিষ্যতে পুরানকে দলে নির্বাচনা করা নিয়ে কোনো বাধা থাকবে না। কিন্তু শুধু সফর নয়, দল থেকেই দূরে সরে গেলেন তিনি।
২০১৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে পুরানের আন্তর্জাতিক অভিষেক। ওই সিরিজে তিন ম্যাচে ব্যর্থতার পর বাইরে চলে যান। দুই বছরের বেশি সময় পর ফেরেন ভারতের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে। এবার দ্বিতীয় ম্যাচেই উপহার দেন ২৫ বলে ৫৩ রানের ইনিংস।
এরপর থেকে ক্রমেই এগিয়ে যাওয়া। অকালে থেমে গেলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফলতম টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান তিনিই। ১০৬ ম্যাচ খেলে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তার রান ২ হাজার ২৭৫। স্ট্রাইক রেট ১৩৬.৩৯। ফিফটি ১৩টি, সর্বোচ্চ ৯৮। ছক্কা মেরেছেন ১৪৯টি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ, রান, ছক্কা, সব রেকর্ডই তার।
২০১৯ সালে অভিষেকের পর থেকে এখনও পর্যন্ত ওয়ানডে খেলেছেন তিনি ৬১টি। প্রায় ১০০ স্ট্রাইক রেট ও ৩৯.৬৬ গড়ে রান ১ হাজার ৯৮৩। সেঞ্চুরি ৩টি, ফিফটি ১১টি।
মূলত কিপার হলেও মাঝেমধ্যে হাত ঘুরিয়েছেন। ওয়ানডেতে তার উইকেটও আছে ৬টি।
টেস্ট ক্রিকেটের ধারেকাছে কখনও ছিলেন না বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। প্রথম শ্রেণির ম্যাচই খেলেছেন স্রেফ ৫টি।
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়কও ছিলেন তিনি কিছুদিন। নেতৃত্ব দিয়েছেন ১৭ ওয়ানডে ও ২৩ টি-টোয়েন্টিতে।
এত কম বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়লেও বিদায়ী বার্তায় পুরান বললেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ তার হৃদয়ে রয়ে যাবে সবসময়।
“অনেক চিন্তা ও ভেবে দেখার পর, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের ভালোবাসার এই খেলাটি আমাকে এতকিছু দিয়েছে এবং দিয়ে যাবে- আনন্দ, অভিপ্রায়, অবিস্মরণীয় স্মৃতি ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করার সম্মান। মেরুন জার্সি গায়ে চাপানো, জাতীয় সঙ্গীতের জন্য মাঠে দাঁড়ানো এবং মাঠে নামার পর নিজের সবটুকু উজাড় করে দেওয়া— এসব আমার জন্য কতটা, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। অধিনায়ক হিসেবে দলকে নেতৃত্ব দেওয়াও ছিল অনেক বড় সম্মানের এবং সবসময় তা আমার হৃদয়ের খুব কাছে থাকবে।”
“যদিও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার অধ্যায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের জন্য আমার ভালোবাসা মিইয়ে যাবে না। সামনের পথচলার জন্য এই দল ও এই অঞ্চলের প্রতি আমার কেবল শুভকামনাই থাকবে।”
অবশ্য বিদায়ের ঘোষণা দিলেও ডোয়াইন ব্রাভো, আন্দ্রে রাসেল বা ক্যারিবিয়ানের আরও তারকাদের মতো ভবিষ্যতে পুরানকেও বড় আসর বা বিশ্বকাপে অবসর ভেঙে ফিরতে দেখলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না।