Published : 12 May 2024, 06:17 PM
শুরু থেকেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের চাহিদা আগ্রাসী ব্যাটিং। নিয়মিত বাউন্ডারি আসবে, রানের ফোয়ারা ছুটবে, এটিই এই সংস্করণের মূল মন্ত্র। কিন্তু সেই কাজে এখনও অনেকটাই পিছিয়ে বাংলাদেশ। কুড়ি ওভারের ক্রিকেটেও প্রায় সময়ই দেখা যায় ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিং। তবে স্ট্রাইক রেট নিয়ে আলোচনা এদেশে একটু বেশিই হয় বলে মনে করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশ অধিনায়কের মতে, ভালো উইকটে খেলতে থাকলেই স্ট্রাইক রেটে উন্নতি হবে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত সিরিজের শেষ তিন ম্যাচে আগে ব্যাটিং করলেও কোনো ম্যাচে ১৭০ ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে করা ১৬৫ রানই সিরিজের সর্বোচ্চ। মিরপুরে পরের দুই ম্যাচে বড় স্কোরের সম্ভাবনা জাগিয়েও স্বাগতিকরা থামে ১৪৩ ও ১৫৭ রানে।
দলের স্কোরের মতোই বড় কোনো ইনিংস নেই ব্যাটসম্যানদের। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ৬৭ রান করেন তানজিদ হাসান। সেটিও তিনবার জীবন পাওয়ার পর। এছাড়া গোটা সিরিজে ফিফটি হয় আর মাত্র তিনটি। কোনোটিতেই দেড়শর ওপরে যায়নি কোনো ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইক রেট।
সিরিজে সার্বিক স্ট্রাইক রেটও ভালো নয় স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের। পাঁচ ম্যাচ মিলিয়ে ১৪০ ছুঁয়েছে শুধু তাওহিদ হৃদয়ের স্ট্রাইক রেট। তিনি ১৪৭.৩৬ স্ট্রাইক রেটে করেন ১৪০ রান। সিরিজে সর্বোচ্চ ১৬০ রান করা তানজিদের স্ট্রাইক রেট ১২৩.০৭।
সবচেয়ে নাজুক অবস্থা শান্তর। তার ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট এমনিতেই সন্তোষজনক নয় (১১১.১৬ )। এই সিরিজে আরও কমেছে সেটি। পাঁচ ম্যাচে তিনি ৮১ রান করেছেন ১০৩.৮৪ স্ট্রাইক রেটে।
এখানে রাতারাতি উন্নতির উপায় দেখছেন না শান্ত। সিরিজ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বললেন, ভালো উইকেটে টানা খেললে সবার স্ট্রাইক রেটেই উন্নতি হবে।
"আমাদের দেশে স্ট্রাইক রেট নিয়ে অনেক কথা হয়। কিন্তু জিনিসটা হলো, আমরা সম্প্রতি ভালো উইকেটে খেলা শুরু করেছি। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যে টি-টোয়েন্টি সিরিজটা খেললাম, ওটা ভালো উইকেটে খেলেছি। এই জিনিসটা সময় দিতে হবে।"
"আমরা যদি লম্বা সময় ধরে ভালো উইকেটে খেলা শুরু করি... ছয় মাস, এক বছর, দুই বছর, তারপর দেখবেন প্রত্যেকটা ব্যাটসম্যান ভালো স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করছে। শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হলে হবে না, একইসঙ্গে আমরা যে বিপিএলে খেলি, সেখানেও লম্বা সময় ধরে ভালো উইকেটে খেলতে হবে। তারপর (স্ট্রাইক রেটে) পার্থক্যটা দেখতে পাবেন।"
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শুধু স্ট্রাইক রেট নয়, পাঁচ ম্যাচের সিরিজে সার্বিক ব্যাটিংও তেমন ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে ফিফটি শুধু ৪টি। দলের দেড়শ ছোঁয়া ইনিংস দুটি। এর একটি পরাজিত ম্যাচে।
চট্টগ্রামে তিন ম্যাচেই ব্যর্থ হয় টপ-অর্ডার। পরে ঢাকায় ফিরে চতুর্থ ম্যাচে দুই ওপেনার ভালো করলেও রান আসেনি মিডল-অর্ডার থেকে। শেষ ম্যাচে আবার শুরুতে বিপর্যয়। তা সামলে বড় স্কোরের ভিত পেলেও শেষ পর্যন্ত ১৫৭ রানের বেশি করতে পারেনি তারা।
সিরিজজুড়ে দলের ব্যাটিংয়ের এমন অবস্থার পেছনে উইকেটের আচরণের কথাই বললেন শান্ত।
"সাধারণত চট্টগ্রামে ভালো উইকেট থাকে। তবে এবার আমরা যে তিন ম্যাচ চট্টগ্রামে খেলেছি, নতুন বলে ব্যাটিং করা সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ ছিল। এটা হয়তো অনেকে বাইরে থেকে দেখলে মনে করবে চট্টগ্রামের উইকেটে রান হয় অনেক। তবে এবার আমরা যে তিনটা ম্যাচ খেলেছি নতুন বলে খুব কঠিন ছিল ব্যাটিং।"
"এর মধ্যে দুই ম্যাচে বৃষ্টির কারণে ব্যাটিংয়ে বারবার বিরতি পড়েছে। তাই মোমেন্টাম সেভাবে আসেনি। এগুলো সব অজুহাত মনে হতে পারে। তবে আমরা যেভাবে উইকেটের আচরণ বুঝেছি, ব্যাটসম্যানদের পুরো স্বাধীনতা ছিল। তারা উইকেটটা পড়ে, সেভাবে ব্যাটিংয়ের চেষ্টা করেছে।"
তবে টপ-অর্ডারে ঘাটতির জায়গা থাকার কথা মানছেন শান্ত। সামনের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো কিছুর জন্য ব্যাটিংয়ের শুরুটা ভালো করার তাগিদ বাংলাদেশ অধিনায়কের কণ্ঠে।
"টপ অর্ডারে যদি আরেকটু ভালো ব্যাটিং করতে পারি, তাহলে আমার মনে হয় যে, দলের জন্য ভালো হবে। মোমেন্টামটা দলের খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমরা যে উইকেটে খেললাম, এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা না করে সামনের জন্য যেন চিন্তা করি। এই জায়গাটায় যদি আমরা ভালো শুরু দিতে পারি, তাহলে দলটা আরেকটু এগিয়ে থাকবে।"