Published : 15 Feb 2023, 10:21 AM
ফিল্ডিংয়ের শুরু থেকে মুশফিকুর রহিমের মাঠে না থাকা ও পরে শেষ দিকে তার মাঠে নামা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রংপুর রাইডার্সের কোচ সোহেল ইসলাম। তার মতে, মুশফিকের মাঠে নামা ও কিপার বদলের প্রক্রিয়ায় অনেকটা সময় চলে গেছে। যা রংপুরের ব্যাটিংয়ের ছন্দ নষ্ট করেছে।
সোহেল ইসলাম যে সময়টার কথা বলছেন, তার আগে ১৮ বলে ৩৩ রান দরকার ছিল রংপুরের। রনি তালুকদার ও নুরুল হাসান সোহানের জুটির রান তখন ৫১ বলে ৮২। কিন্তু ওই বিরতির পর প্রথম বলেই আউট হয়ে যান সোহান। পরের সময়টায় আর পরিস্থিতির দাবি মেটাতে পারেনি রংপুর। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ১৯ রানের জয়ে বিপিএলের ফাইনালে পৌঁছে যায় সিলেট স্ট্রাইকার্স।
সিলেটের হয়ে এ দিন ৬ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫ বলে ৬ রান করে আউট হয়ে যান মুশফিক। পরে ফিল্ডিংয়ে নামতে দেখা যায়নি তাকে। কিপিং করেন বদলি হিসেবে নামা আকবর আলি।
১৭ ওভার শেষে ফিল্ডিংয়ে নামেন মুশফিক। নিয়ম অনুযায়ী, দায়িত্বপ্রাপ্ত কিপার মাঠে থাকলে তখন আর বদলি কাউকে দিয়ে কিপিং করানো যায় না, একাদশে থাকা কারও হাতেই থাকতে হয় কিপিং গ্লাভস। আকবর তখন মাঠ ছেড়ে যান, কিপিং প্যাড-গ্লাভস পরেন দলে থাকা জাকির হাসান। এটা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি, আম্পায়ারদের সঙ্গে মুশফিকের কথোপকথন, আম্পায়ারদের সঙ্গে রংপুর অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানের কথোপকথন, এসব প্রক্রিয়ায় অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়।
সেই বিরতি শেষে খেলা শুরু হতেই তানজিম হাসান সাকিবের স্লোয়ার বল উড়িয়ে মেরে টাইমিং করতে না পেরে লং অনে ধরা পড়েন সোহান। মাঠ ছাড়ার সময় বেশ উত্তেজিত দেখা যায় তাকে। এরপর আর ছন্দটা ফিরেই পায়নি রংপুর।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে রংপুর কোচ সোহেল শুরুতে বললেন নিজেদের ব্যর্থতার কথাই।
“টি-টোয়েন্টি খেলা মোমেন্টামের খেলা। শেষ ৫ ওভারে, ১৬-১৭-১৮ নম্বর ওভারগুলোয় আমরা ওভাবে খেলতে পারিনি, রান যেভাবে দরকার ছিল…। ওই জায়গাটায় আমাদের মোমেন্টাম নিচের দিকে ছিল। তার পরও ১৮ বলে ৩৩ রান সম্ভব ছিল। কিন্তু আমরা ওই জায়গাটা সেভাবে কাজে লাগাতে পারিনি।”
তবে ‘মোমেন্টাম’ নষ্ট হওয়া আর সোহানের ক্ষিপ্ত হয়ে মাঠ ছাড়ার প্রসঙ্গে রংপুর কোচ ইঙ্গিত দিলেন মুশফিকের মাঠে নামা ও সিলেটের সময়ক্ষেপণের দিকে।
“ওই সময় মোমেন্টাম আমাদের দিকে ছিল। খেলার একটা ‘ফ্লো’ ছিল। ওই সময় জাকির (আকবর আলি) বের হলো এবং কিপার বদল হলো… একটা মোমেন্টাম চলছিল (আমাদের), ওটা ব্রেকডাউন হয়। এটা কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে খুবই একটা… দলের একটা ফ্লো থাকলে, এরপর ব্রেক ডাউন হলে এরকমটা হতে পারে। আসলে সেটাই হয়েছে।”
আউট হয়ে সোহানের শরীরী ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ শুধু নিজের ভেতরই ছিল না, ড্রেসিং রুমের সামনে গিয়ে নিজেদের সাপোর্ট স্টাফের সঙ্গেও ক্ষুব্ধ হয়ে কথা বলতে দেখা যায় তাকে। অধিনায়ক তখন কী বলছিলেন, সেটিও জানালেন রংপুর কোচ।
“সে (সোহান) আমাদেরকে বলছিল যে, কেন আমরা ওই সময়টায় বলিনি যে আরও তাড়াতাড়ি যেন খেলাটা শুরু হয়।”
প্রতিপক্ষের মোমেন্টাম বা ছন্দে ছেদ টানার জন্য সময়ক্ষেপণ করা অবশ্য নতুন কিছু নয় ক্রিকেটে। যুগে যুগে অনেক অসংখ্যবার ক্রিকেট মাঠে দেখা গেছে, ছন্দে থাকা ব্যাটসম্যানদের মনোযোগে চিড় ধরাতে বা ভিন্ন কিছু ভাবাতে অধিনায়করা নানা সময়ে একটু বাড়তি সময় নিয়ে মাঠ সাজান বা বোলারদের সঙ্গে কথা বলেন কিংবা মাঠেই ছোটখাটো মিটিং সেরে নেন। বেশ প্রচলিত কৌশল এটি। আধুনিক ক্রিকেটে মহেন্দ্র সিং ধোনিকে এই কৌশল অনেকবারই কাজে লাগাতে দেখা গেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও আইপিএলে।
সিলেটের এটিও কৌশল ছিল কি না, এই প্রশ্ন ছুটে গেল রংপুর কোচের দিকে। তিনি তা নিশ্চিত বলতে পারলেন না। তবে তার সন্দেহ মুশফিকের অসুস্থতার বিষয়টি নিয়ে।
“আমি আসলে জানি না, এটা ট্যাকটিকস ছিল কি না বা কিছু… কিন্তু যেটা হয়েছে, মুশফিক ব্যাটিং করেছে। আমি তৃতীয় আম্পায়ারকে জিজ্ঞেস করেছি যে, কিসের জন্য সে বাইরে আছে (ফিল্ডিংয়ের সময়)। তারা বলছে যে, তার জ্বর আসছে, এজন্য বাইরে। আমার কথা হচ্ছে যে, জ্বর যখন আসবে, তার দায়িত্ব কি অন্য দল নেবে? নিশ্চয়ই নয়! সেই ব্যাপারটি নিয়েই কথা হচ্ছিল।”
“পরবর্তীতে মুশফিক যখন নামে, তখন বেশ কিছু সময় চলে যায়। এক-দুই মিনিটের ব্যাপার নয়, প্রায় ৫-৬ মিনিটের ব্যাপার ছিল। ওই সময়টায় আমরা ভালো অবস্থায় ছিলাম। একটা ফ্লো ছিল। এই ফ্লো নষ্ট হয়ে যাওয়াটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর ছিল।”
পরে আরেকটি প্রশ্নেও রংপুর কোচের কণ্ঠে থাকল মুশফিকের অসুস্থতা নিয়ে সংশয়ের রেশ।
“জ্বর আসছে, আবার মাঠে নামছে… এমন একটা সময়ে নামছে, ওই সময় মোমেন্টাম নষ্ট করে হয়েছে।