Published : 22 Apr 2025, 04:33 PM
৬ রানে একবার। ১৮ রানে আরেকবার। দুই দফায় ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন মাহমুদুল হাসান জয়। ৩৩ রানে আর রক্ষা হলো না। স্লিপে ধরা পড়ে ফিরলেন বাংলাদেশের ওপেনার। বলা যায়, মুক্তিও পেলেন একরকম। শর্ট বলের সামনে যেভাবে ধুঁকছিলেন, মনে হচ্ছিল যেন আউট হলেই বেঁচে যান!
শর্ট বলের সামনে তার অস্বস্তি ধরতে পেরেই বারবার শর্ট বল করে যাচ্ছিলেন ব্লেসিং মুজারাবানি। অপেক্ষা খুব একটা করতে হলো না। বাড়তি লাফিয়ে ওঠা একটি ডেলিভারি সামলাতে না পেরে বিদায় নিলেন। তার ব্যর্থতার পালা দীর্ঘায়িত হলো আরও।
২০২৩ সালের নভেম্বরে এই সিলেটেই নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন জয়। এরপর ১৭ মাস হতে চলেছে। খেলে ফেলেছেন তিনি আরও ১৭ ইনিংস। ফিফটির দেখা পাননি আর একবারও।
এই ১৭ ইনিংসের ১২টিতেই তার রান ১৫ স্পর্শ করেনি। ৭ ইনিংসে আউট হয়েছেন দু অঙ্ক ছোঁয়ার আগে।
এই পরিসংখ্যানের চেয়ে ভয়ানক অবস্থা আসলে তার ব্যাটিংয়ের। উইকেটে যতক্ষণ থাকেন, কখনোই স্বস্তিতে খেলতে পারেন বলে মনে হয় না এখন। প্রতিটি ইনিংসের শুরুতেই নড়বড়ে থাকেন। বেশির ভাগ সময় তো দ্রুতই আউট হয়ে যান। কখনও টিকে গেলেও তার ব্যাটিংয়ে নির্ভরতার ব্যাপারটি চোখে পড়ে না।
সিলেট টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে যেমন তিনি উইকেটে ছিলেন দেড় ঘণ্টা। কিন্তু কখনোই মনে হয়নি তিনি থিতু হয়েছেন।
সবচেয়ে হতাশাজনক তার আউট হওয়ার ধরন। সবশেষ ১০ ইনিংসের ৯টিতেই তিনি আউট হয়েছেন উইকেটের পেছনে। ধরা পড়েছেন কিপারের গ্লাভসে বা স্লিপে।
ইনিংনের পর ইনিংসে অফ স্টাম্পের একটু বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে বা ব্যাট পেতে দিয়ে তিনি আউট হচ্ছেন। কখনও ভালো ডেলিভারি, কখনও নির্বিষ ডেলিভারিতেও। কিন্তু সেই দুর্বলতার জায়গায় উন্নতির কোনো ছাপ নেই। একজন টেস্ট ওপেনার বা টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের মৌলিক জায়গাটিতেই যদি এত বড় ঘাটতি থাকে, তার পরিণতি এমনই হওয়ার কথা!
১৮ টেস্টের ক্যারিয়ারেই ১৪ বার দু অঙ্ক ছোঁয়ার আগে আউট হয়ে গেছেন তিনি। এরপর মধ্যে ৭ বার ফিরেছেন শূন্যতে।
অথচ তার টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরু বাংলাদেশের আশার সীমানাটা অনেক বাড়িয়ে দিয়ে। অভিষেক টেস্টে ভালো করতে না পারলেও দ্বিতীয় টেস্টেই ৭৮ রানের ইনিংস খেলেন মাউন্ট মঙ্গানুইয়েই সেই অবিস্মরণীয় জয়ের ম্যাচে। পরের ম্যাচেই ডারবানে উপহার দেন ১৩৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস।
রানের চেয়েও ওই দুই ইনিংসে চোখে পড়ার মতো ব্যাপার ছিল তার টেম্পারমেন্ট। বাংলাদেশের নবীন এক ব্যাটসম্যান ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টে নিউ জিল্যান্ডের কন্ডিশনে ২৯২ মিনিট ব্যাট করছেন, তৃতীয় টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ৪৪২ মিনিট ক্রিজে কাটিয়ে দিচ্ছেন, তাকে নিয়ে তো বড় স্বপ্ন দেখবেই দেশের ক্রিকেট!
টেম্পারমেন্টের প্রমাণ তিনি পরেও দিয়েছেন। আরও তিনটি ইনিংসে ২০০ মিনিটের বেশি ব্যাট করেছেন, আরেকটিতে ১৯৯ মিনিট। কিন্তু গত কিছুদিনে টেকনিকের যে দুর্বলতা প্রকাশ্য হয়েছে, তা তিনি ঢেকে দিতে পারছেন না টেম্পারমেন্ট দিয়ে।
দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, দলের ব্যাটিং কোচের কাজটিও এখন যিনি মূলত করছেন, সিলেট দিনেরটেস্টের প্রথম খেলা শেষে জয়ের একই ধরনের আউটের প্রসঙ্গে টেকনিককে দায় না দিয়ে বলেছিলেন সমস্যাটি ট্যাকটিকাল। সেটিও যদি হয়, তার দুর্বলতা তো আড়াল হচ্ছে না!
মাহমুদুল হাসান জয় ও জাকির হাসানের ফর্ম নিয়ে দুর্ভাবনার ব্যাপারটি স্বীকার করে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন দল ঘোষণার সময় বলেছিলেন, জিম্বাবুয়ের মতো দলের বিপক্ষে এই ব্যাটসম্যানরা রানে ফিরবেন বলে আশা করছেন তারা। টানা ১৩ ইনিংস ধরে ফিফটি না পাওয়া জাকির এই টেস্টে সুযোগ পাননি। জয় সুযোগ পেয়ে প্রধান নির্বাচকের আশাকে পিষ্ট করে আগের রূপেই রইলেন।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও যখন পারলেন না জয়, তখন তার ফর্মে ফেরার আশারও মৃত্যু ধরে নেওয়া যায়। এখন দলের বাইরে গিয়ে ব্যাটিং নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করতে পারেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে যেতে পারেন, সেখানে পারফর্ম করে হাই পারফরম্যান্স দল ও ‘এ’ দলে খেলে নিজেকে আরও পোক্ত করতে পারেন। তখন আবার জাতীয় দলে ফেরার প্রেক্ষাপটও তৈরি হতে পারে।
কিন্তু এখন বলতেই হয়, টেস্ট দল থেকে আপাতত তার মুক্তির সময় হয়েই গেছে।