বিপিএল
Published : 31 Dec 2024, 06:33 PM
উইলিয়াম বোসিস্টোকে বিপিএলে খেলতে দেখে অনেকের মনে অনেক কিছু খেলা করতে পারে। তিনি এখনও খেলেন? এতদিন কোথায় ছিলেন? সবশেষ কবে খেলেছেন? বিগ ব্যাশের মৌসুমে তিনি বিপিএলে কেন!
সব প্রশ্নের উত্তর এক সুতোয় গাঁথা যায় অনায়াসেই। ক্রিকেট ও জীবনের পথে অনেক পোড় খেয়ে বোসিস্টো সবকিছু শুরু করেছেন নতুন করে। ৩১ বছর বয়সে নতুন এই পথচলায় তার বিপিএলের ঠিকানা খুঁজে পাওয়ার গল্পটিও চমকপ্রদ। যেখানে মিশে আছে মিচেল মার্শ, ইমরুল কায়েস ও তালহা জুবায়েরের নাম।
বিপিএল অভিষেকে মঙ্গলবার খুলনা টাইগার্সের হয়ে ইনিংস শুরু করতে নেমে পুরো ২০ ওভার খেলে ৫০ বলে ৭৫ রানের ইনিংস খেলেন বোসিস্টো। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার প্রথম ফিফটি এটি।
এই ম্যাচের আগে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবশেষ ম্যাচটি তিনি খেলেছিলেন ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বিগ ব্যাশে পার্থ স্কর্চার্সের হয়ে। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তার সবশেষ ম্যাচ আরও দুই বছর আগে। স্বীকৃতি ক্রিকেটে তাকে সবশেষ দেখা গেছে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। শেফিল্ড শিল্ডে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছিলেন ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
সাউথ অস্ট্রেলিয়ার চরম ব্যর্থ ওই মৌসুম শেষে পাঁচ জন ক্রিকেটারের চুক্তি বাতিল হয়। তাদের একজন ছিলেন বোসিস্টো।
চুক্তি থেকে বাদ পড়ে আবার ফিরে আসা তো ক্রিকেটারদের জীবনেরই অংশ। কিন্তু বোসিস্টো সেই ধাক্কার পর এত দূরে ছিটকে পড়েন যে, ক্রিকেটের দুনিয়া থেকেই অনেকটা আড়ালে চলে যান। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের কৌতূহল জাগানিয়া এক অধ্যায় এটি।
একসময় তিনি ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় তরুণ ক্রিকেটারদের একজন। ২০১২ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলা দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। ফাইনালে উন্মুক্ত চাঁদের সেঞ্চুরিতে ভারত জিতে গেলেও বোসিস্টো খেলেছিলেন ৮৭ রানের ইনিংস। ২৭৬ রান করে ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন তিনিই। গোটা আসরে ছয় ম্যাচে আউট হয়েছিলেন স্রেফ এক ম্যাচে। বয়সের তুলনায় তাকে অনেক পরিণত বলাবলি হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যমে।
তার নেতৃত্বে সেই দলে খেলা ট্রাভিস হেড এখন অস্ট্রেলিয়া দলের প্রাণভ্রোমরা। সেই যুব বিশ্বকাপে খেলে পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছাপ রেখেছেন ক্যামেরন ব্যানক্রফট, অ্যাশটন অ্যাগার, অ্যাশটন টার্নার, কার্টিস প্যাটারসনরা। কিন্তু বোসিস্টো পারেননি তার বৈশিষ্ট ধরে রাখতে। যুব বিশ্বকাপ শেষে যখন আরও এগিয়ে যাওয়ার পালা, তখন তিনি পারেননি সম্ভাবনার পথ ধরে ছুটতে।
ঘরোয়া ক্রিকেটে খুব ধারাবাহিক হতে পারেননি। নিজ রাজ্য ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে পাড়ি জমান সাউথ অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানেও নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। সেখানেই চুক্তি হারান ২০২১ সালে। ২৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে সেঞ্চুরি ছিল দুটি। ব্যাটিং গড় ২২.৫৩। লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ ১৪টি, টি-টোয়েন্টি ১১টি। ওখানেই থমকে থাকে ক্যারিয়ার।
শুধু ক্রিকেট নয়, কিছুটা এলেমেলো হয়ে পড়ে তার জীবনও। পারিবারিক নানা ঝামেলা, সন্তানের অসুস্থতা মিলিয়ে এরকম হারিয়েই যান তিনি। তার নামও চাপা পড়ে যায় ক্রিকেটীয় দুনিয়ার নিয়মিত ব্যস্ততায়।
হঠাৎই তাকে কদিন আগে দেখা যায় নেপাল প্রিমিয়ার লিগে। প্রায় চার বছর পর ফেরেন ক্রিকেটে। কার্নালি ইয়াকসের হয়ে ছয়টি ইনিংস খেলে দুটি ফিফটিতে ১৯৪ রান করেন ৩৮.৮৮ গড়ে। এরপর বিপিএল অভিষেকে মঙ্গলবার খুলনার হয়ে এই ইনিংস।
হঠাৎ করে আবার আবির্ভাব হলেও নিশ্চয়ই বেশ লম্বা প্রস্তুতি নিয়েই তিনি ফিরেছেন স্বীকৃতি পর্যায়ের ক্রিকেটে। অস্ট্রেলিয়ায় গ্রেড ক্রিকেটেও খেলে থাকতে পারেন। সেই গল্প হয়তো তার কাছ থেকেই জানা যাবে সামনে। তাকে খুলনা দলে নেওয়ার গল্পটি শোনালেন কোচ তালহা জুবায়ের। সেখানেই উঠে এলো মিচেল মার্শ ও ইমরুল কায়েসের সংযোগ।
“ইমরুল কায়েসকে মিচেল মার্শ সুপারিশ করেছিল বোসিস্টোর কথা। ইমরুল কায়েস যখন আমাকে ভিডিওটা পাঠায় ওর এবং আমি ইউটিউবে যখন ওর অনেক ভিডিও দেখেছি। আগের ভিডিও দেখেছি, সেটার সঙ্গে এখনকার ব্যাটিংয়ের কোনো মিলই নাই। ও অনেক দিন ক্রিকেটের বাইরে ছিল কিছু ব্যক্তিগত কারণে। ও যেভাবে ওর খেলা বদলে ফেলেছে এবং যেভাবে ওপরে উঠেছে ওর খেলা…আমার দলের মালিক ইকবাল ভাইয়ের কাছে অনুরোধ করেছি, এই খেলোয়াড়কে যে কোনোভাবে আমার দরকার।”
“ওর খুব একটা চাহিদাও ছিল না। ও স্রেফ খেলতে চায়। প্রমাণ করতে চায়, ও আসলে কেমন খেলোয়াড়। অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক ছিল। ওখান থেকে কোনো কারণে পিছিয়ে গেছে। ও আসার পর থেকে ওর সঙ্গে যখন কথা হচ্ছে, একটা জিনিসই বলেছি যে নিজের খেলাটা খেলো এবং আমি চাই ভালো পারফর্ম করো এবং ও শুরুটা চমৎকার করেছে।”
ইমরুল এখন নিয়মিতই অস্ট্রেলিয়ায় যান। বছর দুয়েক আগে সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন। সেখানে টুকটাক ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি কোচিং কোর্স করেছেন। সামনে সেখানে একটি একাডেমি পরিচালনা করার পরিকল্পনাও তার আছে, যেখানে সঙ্গী হবেন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসন। সেই পরিক্রমাতেই হয়তো মিচেল মার্শ তাকে বলেছেন বোসিস্টোর কথা। ইমরুল এবার বিপিএলে খেলছেন খুলনার হয়েই।
তালহা যেভাবে ভিডিও দেখে মরিয়া হয়েছিলেন তাকে দলে নিতে, প্রথম ম্যাচেই সেটির প্রতিদান দিলেন বোসিস্টো। এবার নিজেকে আরও মেলে ধরার পালা। কে জানে, বিপিএল খেলে হয়তো আবার অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের মূল স্রোতে ফিরবেন তিনি!