শ্রীলঙ্কা-নিউ জিল্যান্ড সিরিজ
Published : 18 Nov 2024, 12:20 AM
আগের ম্যাচে কুসাল মেন্ডিস দেড়শর কাছাকাছি ইনিংস খেলেছিলেন একশর বেশি স্ট্রাইক রেটে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সেই তিনিই এবার তার সহজাত আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দিলেন লাগাম। ব্যাটিং দুরূহ উইকেটে খেললেন দায়িত্বশীল ইনিংস। দারুণ বোলিংয়ের পর মেন্ডিসের সঙ্গে মহাগুরুত্বপূর্ণ জুটিতে ব্যাট হাতেও আলো ছড়ালেন মাহিশ থিকশানা। নিউ জিল্যান্ডকে আবার হারিয়ে ভুলে যাওয়া স্বাদ পেল শ্রীলঙ্কা।
মেন্ডিসের সঙ্গে থিকশানা জুটি বাঁধেন যখন, ৩ উইকেট হাতে নিয়ে তখনও শ্রীলঙ্কার দরকার ছিল ৪৭ রান। অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেন তারা।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ডাকওয়ার্থ লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ৩ উইকেটের জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিল শ্রীলঙ্কা।
১২ বছর পর নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল লঙ্কানরা। এই সংস্করণে চলতি বছরে তাদের পঞ্চম সিরিজ জয় এটি।
পাল্লেকেলেতে রোববার বৃষ্টির কারণে ৪৭ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে নিউ জিল্যান্ড অল আউট হয় ২০৯ রানে। শ্রীলঙ্কা লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে এক ওভার বাকি থাকতে।
ডাম্বুলায় প্রথম ম্যাচে ১২৮ বলে ১৭ চার ও ২ ছক্কায় ১৪৩ রানের ইনিংস খেলা মেন্ডিস এবার ১০২ বলে করেন ৭৪। যেখানে চার স্রেফ ৬টি, নেই কোনো ছক্কা। খুব গুরুত্বপূর্ণ এই ইনিংসে ম্যাচ-সেরার পুরস্কার জেতেন ২৯ বছর বয়সী কিপার-ব্যাটসম্যান।
৪৪ বলে ২ চার ও এক ছক্কায় ২৭ রান করেন থিকশানা। এই অফ স্পিনার বল হাতে ৯.১ ওভারে স্রেফ ৩১ রানে নেন ৩ উইকেট।
৩ উইকেট শিকার করেন লেগ স্পিনার জেফ্রি ভ্যান্ডারসেও। শ্রীলঙ্কার স্পিনাররা মিলে নেন নিউ জিল্যান্ডের ৮ উইকেট।
নিউ জিল্যান্ডের ইনিংসকে ভাগ করা যায় তিন ভাগে। প্রথম ৩০ ওভারে তারা ৪ উইকেটে করে ১১১ রান। পরের ৬ ওভারে বিনা উইকেটে ৬২, এর পরের ৯.১ ওভারে ৩৬ রান তুলতে শেষ ৬ উইকেট হারায় সফরকারীরা।
চারে নেমে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৮১ বলে ৭৬ রানের ইনিংস খেলেন মার্ক চ্যাপম্যান। ৪টি চারে ৬২ বলে ৪৯ রান করেন কিপার-ব্যাটসম্যান মিচেল হে।
স্পিন সহায়ক উইকেটে জবাব দিতে নেমে ৯৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা। তবে মেন্ডিসের লড়িয়ে ইনিংস ও লোয়ার-মিডল অর্ডারের ছোট ছোট অবদানে জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে তারা।
এই ম্যাচে শ্রীলঙ্কার আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল তাদের ফিল্ডিং। তিনটি ক্যাচ নেন আভিশকা ফার্নান্দো, যার দুটি ছিল বেশ কঠিন। দারুণ একটি ক্যাচ নেন পাথুম নিসাঙ্কা।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই টিম রবিনসনকে হারায় নিউ জিল্যান্ড। একাদশে ফিরে নিজের প্রথম ওভারে উইকেটের দেখা পান বাঁহাতি স্পিনার দুনিথ ওয়েলালাগে। অষ্টম ওভারে থিকশানার বল স্টাম্পে টেনে আনেন হেনরি নিকোলস। নবম ওভারের পর বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকে আধা ঘন্টার মতো।
তৃতীয় উইকেটে চ্যাপম্যানের সঙ্গে ৩৮ রানের জুটি গড়েন উইল ইয়াং। ভ্যান্ডারসেকে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় বলের লাইন মিস করে স্টাম্পড হন ইয়াং (৪০ বলে ২৬)। একটু পর আরেক দফা বৃষ্টিতে কমে আসে ম্যাচের দৈর্ঘ্য।
বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি গ্লেন ফিলিপস। আভিশকার দারুণ ক্যাচে তিনি বিদায় নেন যখন, ৯৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে তখন নিউ জিল্যান্ড। সেখান থেকে পঞ্চম উইকেটে চ্যাপম্যান ও হের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় কিউইরা।
৩৬ ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে ১৭৩। সেখান থেকে আড়াইশ রান মনে হচ্ছিল খুব সম্ভব। কিন্তু চিত্র পাল্টে যায় দ্রুতই। পরের ওভারে আসিথা ফার্নান্দোর দুটি শর্ট বলে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন চ্যাপম্যান ও মাইকেল ব্রেসওয়েল।
চ্যাপম্যান ও হের জুটিতে আসে ৭৮ বলে ৭৫ রান। এর মধ্যে প্রথম ৪১ বলে রান ছিল কেবল ১৩, পরের ৩৭ বলে ৬২।
ভ্যান্ডারসে একই ওভারে ফিরিয়ে দেন মিচেল স্যান্টনার ও ন্যাথান স্মিথকে। ইশ সোধিও ফেরেন দ্রুতই। এক প্রান্তে আগলে রেখে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে প্রথম ফিফটির আশা জাগান হে। তবে ৪৯ রানে তাকে ফিরিয়েই নিউ জিল্যান্ডের ইনিংস গুটিয়ে দেন থিকশানা।
লক্ষ্য তাড়ায় শ্রীলঙ্কার শুরুটাও ভালো ছিল না। প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান আভিশকা এবার দুই অঙ্কে যেতে পারেননি। আরেক ওপেনার নিসাঙ্কা ফেরেন ৩৩ বলে ২৮ রান করে। কামিন্দু মেন্ডিস ফেরেন শূন্য রানে। টিকতে পারেননি অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কাও।
৬৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে শ্রীলঙ্কা। যার ৩টিই নেন অফ স্পিনার ব্রেসওয়েল। দলের স্কোর একশ হওয়ার আগে ফিরে যান সাদিরা সামারাউইক্রামা।
সেখান থেকে ষষ্ঠ উইকেটে জানিথ লিয়ানাগের (২২) সঙ্গে ৩৯, এরপর ওয়েলালাগের (১৮) সঙ্গে ৩১ রানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন মেন্ডিস। এর মাঝে ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি ৮৪ বলে।
সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়েলালাগেকে ফিরিয়ে ব্রেসওয়েল চতুর্থ শিকার ধরলেন যখন, ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ তখন অনেকটাই নিউ জিল্যান্ডের হাতে। কিন্তু তাদের মুঠো থেকে ম্যাচ বের করে নেয় মেন্ডিস ও থিকশানার জুটি।
বিফলে যায় ব্রেসওয়েলের দারুণ বোলিং। প্রথম ম্যাচে ৯ ওভারে ৭৩ রান দেওয়া বোলার এবার ১০ ওভারে ৩৬ রানে ৪ নেন উইকেট।
একই মাঠে মঙ্গলবার শেষ ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের সামনে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর চ্যালেঞ্জ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ৪৫.১ ওভারে ২০৯ (ইয়াং ২৬, রবিনসন ৪, নিকোলস ৮, চ্যাপম্যান ৭৬, ফিলিপস ১৫, হে ৪৯, ব্রেসওয়েল ০, স্যান্টনার ৬, স্মিথ ০, সোধি ৯, ডাফি ৪*; আসিথা ৭-০-৩৭-২, ওয়েলালাগে ৮-০-৪৬-১, থিকশানা ৯.১-০-৩১-৩, লিয়ানাগে ৩-০-১৮-০, ভ্যান্ডারসে ১০-০-৪৬-৩, আসালাঙ্কা ৮-০-২৯-১)
শ্রীলঙ্কা: (৪৭ ওভারে লক্ষ্য ২১০) ৪৬ ওভারে ২১০/৭ (নিসাঙ্কা ২৮, আভিশকা ৫, মেন্ডিস ৭৪*, কামিন্দু ০, আসালাঙ্কা ১৩, সামারাউইক্রামা ৮, লিয়ানাগে ২২, ওয়েলালাগে ১৮, থিকশানা ২৭*; স্যান্টনার ১০-১-৩৩-১, ডাফি ৫-০-৩৬-০, ব্রেসওয়েল ১০-০-৩৬-৪, সোধি ৯-০-৩৭-০, ফিলিপস ৯-০-৪১-১, স্মিথ ৩-০-২১-১)
ফল: ডাকওয়ার্থ লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে শ্রীলঙ্কা ৩ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে প্রথম দুটির পর ২-০তে এগিয়ে শ্রীলঙ্কা
ম্যান অব দা ম্যাচ: কুসাল মেন্ডিস