Published : 10 Nov 2021, 06:15 PM
জাতীয় ক্রিকেট লিগের চতুর্থ রাউন্ডে প্রথম স্তরের ম্যাচটিতে সিলেট বিভাগের বিপক্ষে ঢাকার জয় ৩ রানে। চতুর্থ ও শেষ দিন বুধবার ১০২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় সিলেট গুটিয়ে যায় ৯৮ রানে।
অথচ প্রথম তিন দিন ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল সিলেটের হাতেই। শুরুর দিনে ৭ বলের মধ্যে শূন্য রানে প্রথম ৪ উইকেট হারিয়েছিল ঢাকা। প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়েছিল তারা মাত্র ১২৩ রানে, সিলেটের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছিল ১৪২ রানে। শেষ দিনে দারুণ বোলিংয়ে সেই দলটিই জিতে নিল ম্যাচ।
বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে রানের দিক থেকে যৌথভাবে সবচেয়ে ছোট জয় এটি। ২০১৮ সালে রাজশাহীতে জাতীয় লিগেই ঢাকা মেট্রোর বিপক্ষে ৩ রানে জিতেছিল সিলেট।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ উইকেটে ২৩৪ রান নিয়ে শেষ দিন শুরু করে ঢাকা যোগ করতে পারে আর ৯ রান। প্রথম ইনিংসের বড় ঘাটতি পুষিয়ে তাদের পুঁজি দাঁড়ায় মাত্র ১০১।
নাজমুল ও এনামুল হককে ফিরিয়ে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন নাসুম। প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেট নেওয়া বাঁহাতি এই স্পিনারের ম্যাচে উইকেট ১২টি।
ছোট লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে সিলেট। বিস্ময়করভাবে, প্রথম আট ব্যাটসম্যানের মধ্যে দুই অঙ্কে যেতে পারেন স্রেফ একজন! তাও আবার মাত্র ১০ রান করতে পারেন অমিত মজুমদার।
আট ওভারের মধ্যে দুই ওপেনার ইমতিয়াজ হোসেন ও সায়েম আলমকে বিদায় করেন পেসার সুমন খান। নিজের পরপর দুই ওভারে জাকির হাসান ও রাহাতুল ফেরদৌসকে এলবিডব্লিউ করে দেন বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল। মাঝে এনামুল হকের শিকার অলক কাপালি।
অমিত কাটা পড়েন রান আউটে। টিকতে পারেননি শাহানুর রহমান। কিপার-ব্যাটসম্যান জাকের আলিকে বোল্ড করেন নাজমুল।
তখন ৫৩ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল সিলেট। এরপরই রেজাউর রহমান রাজাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন নাসুম। তাদের জুটিতে একটু একটু করে জয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল দল।
জয় থেকে যখন আর ১৩ রান দূরে সিলেট, নাসুমকে ফিল্ডার জয়রাজ শেখের ক্যাচ বানিয়ে ৩৬ রানের জুটি ভাঙেন তাইবুর রহমান। ৫৮ বলে নাসুম করেন ১৯ রান।
পরের ওভারে নাজমুলকে ছক্কায় ওড়ান রেজাউর। ইবাদত হোসেন পরের ওভারে নেন ৩ রান। কমে আসে ব্যবধান। কিন্তু এর পরের ওভারেই ইবাদতকে এলবিডব্লিউ করে উল্লাসে মাতেন নাজমুল। ৪৯ বলে ২ ছক্কায় ২০ রানে অপরাজিত থাকেন পেসার রেজাউর।
প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে বড় অবদান রেখে ম্যাচ সেরা হন নাজমুল।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে দেশে ফেরার একদিন পরই খেলতে নামা নাসুম ম্যাচে ১১৩ রানে নিলেন ১২ উইকেট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার ক্যারিয়ারে সেরা বোলিং এটি। কিন্তু উপলক্ষটা জয়ে রাঙাতে পারলেন না তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা বিভাগ ১ম ইনিংস: ১২৩
সিলেট বিভাগ ১ম ইনিংস: ২৬৫
ঢাকা বিভাগ ২য় ইনিংস: ১০৯.৩ ওভারে ২৪৩ (আগের দিন ২৩৪/৮) নাজমুল ২১, এনামুল ৮, হোসেন আলি ০*; ইবাদত ২৪-৬-৪২-২, নাসুম ৩৯.৩-১০-৭০-৫, রেজাউর ১৫-৫-২২-১, শাহানুর ১৭-৩-৪৬-১, রাহাতুল ১০-০-৪৫-০, কাপালি ৪-০-১০-১)
সিলেট বিভাগ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ১০২) ৪৭.২ ওভারে ৯৮ (ইমতিয়াজ ৯, সায়েম ৮, অমিত ১০, জাকির ৬, কাপালি ১, রাহাতুল ২, জাকের ৯, শাহানুর ৪, নাসুম ১৯, রেজাউর ২০*, ইবাদত ৩; নাজমুল ২৩.২-৫-৪৩-৪, সুমন ৬-১-১৩-২, তাইবুর ৯-১-২৩-২, এনামুল ৮-৪-৯-১, রুবেল ১-০-৫-০)
ফল: ঢাকা বিভাগ ৩ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাজমুল ইসলাম অপু।
সেঞ্চুরি করে ফেরার পর জুনায়েদ সিদ্দিক
দ্বিতীয় স্তরে রাজশাহী বিভাগ ও ঢাকা মেট্রোর ম্যাচ নিষ্প্রাণ ড্র হয়েছে। শেষ দিনে সেঞ্চুরি করেছেন রাজশাহীর জুনায়েদ সিদ্দিক।
সাভারে বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ২৪১ রান নিয়ে শেষ দিনে ব্যাটিং শুরু করে রাজশাহী। তারা ৮ উইকেটে ৪৩৩ রান তোলার পর ড্র মেনে নেয় দুই দল। মেট্রো তাই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পায়নি।
আগের দিন ৫৯ রানে অপরাজিত থাকা জুনায়েদ লাঞ্চ বিরতির পর সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ২৯৭ বলে। শহিদুল ইসলামের বলে কট বিহাইন্ড হন তিনি ১১৭ রানে। ৩৪৬ বলে ৮টি চারে গড়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার ১৭তম সেঞ্চুরি এটি।
আট নম্বরে নেমে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ১০৩ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৯ রান করেন স্পিনার সানজামুল ইসলাম।
প্রথম ইনিংসে ৪৮ রানে ৭ উইকেট নেওয়া শহিদুল দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৩ রানে নেন ২টি। ম্যাচে ১২১ রানে ৯ উইকেট নিয়ে তিনিই জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার ইনিংস ও ম্যাচ সেরা বোলিং, দুটিই এই ম্যাচে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রাজশাহী বিভাগ ১ম ইনিংস: ২৩২
ঢাকা মেট্রো ১ম ইনিংস: ৩৯৮
রাজশাহী বিভাগ ২য় ইনিংস: ১৪৭ ওভারে ৪৩৩/৮ (আগের দিন ২৪১/৪) (জুনায়েদ ১১৭, প্রিতম ২৪, ফরহাদ রেজা ৬, সানজামুল ৭৯, মুক্তার ২০*, সাকলাইন ১*; আবু হায়দার ২১-২-৬২-১, শহিদুল ২৬-৫-৭৩-২, স্বাধীন ১৪-১-৫০-১, শরিফুল্লাহ ৪২-১৮-৮৪-০, রকিবুল ২২-৮-৪৬-৩, আমিনুল ১৭-১-৮৩-১, সাদমান ৩-০-২২-০, শামসুর ২-০-৩-০)
ফল: ম্যাচ ড্র
ম্যান অব দা ম্যাচ: শহিদুল ইসলাম।