Published : 07 Jan 2025, 08:39 AM
যে কোনো অনুশীলন সেশনে বরাবরই বেশ সক্রিয় দেখা যায় খালেদ মাহমুদকে। এক নেট থেকে আরেক নেটে ছুটোছুটি করেন তিনি। কখনও এর সঙ্গে কথা বলেন তো কখনও ওকে সাহায্য করেন। ঢাকা ক্যাপিটালসের নেটে তাকে সোমবার অনেকটা সময় দেখা গেল লিটন কুমার দাসের সঙ্গে সময় কাটাতে। ঢাকার কোচ পরে বললেন, স্টাইলিশ এই ব্যাটসম্যানকে রানে ফিরতে দেখতে তিনি উদগ্রীব হয়ে আছেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি লিটনের ব্যাটিংয়ের বড় ভক্ত। কোচ হিসেবেও তার জানা, দলের জয়ের জন্য এই ব্যাটসম্যানের রানে ফেরাটা কত জরুরি।
লিটন ছন্দে থাকলে কী করতে পারেন, সেটা অজানা নয় কারও। সমস্যা হলো, তাকে সেই চেহারায় পাওয়া যাচ্ছে না অনেক দিন ধরেই। বাংলাদেশ দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে অসাধারণ নেতৃত্ব দিয়ে তিনি নজর কেড়েছেন। কিন্তু তার ব্যাট ছিল একদমই নিষ্ক্রিয়। টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে ওয়ানডেতে তিনি চিরেন যেন ঘুমিয়ে।
সবশেষ ১৩ ওয়ানডেতে তার ফিফটি নেই। এর সবশেষ সাত ইনিংসেই তিনি আটকা পড়েছে দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগে। টি-টোয়েন্টিতে সবশেষ ২৪ ইনিংসে তার ফিফটি মোটে একটি।
জাতীয় দলের সেই ফর্মহীনতা তাকে ছেড়ে যায়নি বিপিএলেও। প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং উইকেটে ৩১ রান করতে বল খেলেছিলেন ২৭টি। পরের দুই ম্যাচে রান ২ ও শূন্য।
লিটনের ব্যাটিংয়ের প্রসঙ্গ উঠতেই কোচ খালেদ মাহমুদের কণ্ঠে খেলে গেল আক্ষেপ-হতাশা-হাহাকার, সব কিছুই।
“আমি নিজেই খুব চাপে থাকি, যখন লিটন রান না করে। আমার সবচেয়ে প্রিয় ক্রিকেটারদের একজন সে, বাংলাদেশের ক্রিকেটে। যদিও সবাই বারবার আমাকে বলে, তবে আমি বারবারই বলব, লিটন ১০ রান করলেও দলে রাখতে চাই। কারণ লিটনের এত বড় ভক্ত আমি। আমি জানি, ওর সামর্থ্য কতটা। সবাই জানে এটা, অনেক বছর ধরে যারা তার ব্যাটিং দেখছে।”
“লিটনের একটা ব্যাডপ্যাচ যাচ্ছে। সবারই যায় এটা। একটা ভালো ইনিংস দরকার। ভালো শুরু করেছিল প্রথম ম্যাচে। টি-টোয়েন্টির বিচারে স্ট্রাইক রেটের দিক থেকে খুব বড় ইনিংস নয়, তার পরও… ওর ব্যাটিং দেখলে ওই ৩০ রান দেখতেও ভালো লাগে। তখন ভাবলাম যে, ৩০ করেছে, তাহলে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু পরের দুটি ম্যাচে ব্যর্থ হলো। ও নিজেও জানে… বিশেষ করে শেষ ম্যাচে যখন স্পিনে মারতে গিয়ে আউট হলো, কতটা বাজে বলে আউট হলো, নিজেও জানে। আমার বলার দরকার নেই।”
কোচ হিসেবে আশার কথাই শোনাতে হয় সবসময়। তবে শুধু শোনানোর খাতিরে নয়, খালেদ মাহমুদের সত্যিই বিশ্বাস, দ্রুতই লিটনকে দেখা যাবে আপন রূপে।
“আজকে অনুশীলনে সে খুবই সিরিয়াস ছিল। তবে এখানে শুধু সিরিয়াস হলে হবে না। মানসিক ব্যাপার থাকে। লিটন রান করলে ঢাকা ক্যাপিটালসকে জয়ের জন্য এত চিন্তা করতে হবে না। আমার বিশ্বাস, লিটন পরের ম্যাচেই ফর্মে ফিরবে।”
মজার ব্যাপার হলো, লিটন যেন নির্ভার হয়ে শুধু নিজের ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দিতে পারেন, এজন্য তাকে অধিনায়কত্ব দেয়নি ঢাকা ক্যাপিটালসের মালিকপক্ষ। থিসারা পেরেরাকে ঢাকার অধিনায়ক করায় প্রশ্ন ছিল অনেকেরই। সেই প্রশ্নগুলো আরও উচ্চকিত হয়েছে দল টানা তিন ম্যাচে হারায়। থিসারা নিজে যদিও পারফর্ম করছেন, তবে বিদেশি একজনকে দলের ভার দেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে অনেক। স্বয়ং খালেদ মাহমুদই আছে সেই দলে।
এমনিতে অধিনায়ক হিসেবে থিসারাকে অপছন্দ নয় ঢাকা ক্যাপিটালস কোচের। তবে তার চাওয়া ছিল লিটনকেই অধিনায়কত্ব দেওয়া।
“দেশি অধিনায়ক হলে ভালো হতো হয়তোবা, এটা তো আমি বলতে পারব না…। অবশ্যই চাওয়া তো ছিলই (দেশী অধিনায়ক), যেহেতু লিটন ভালো করছিল টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব। তবে এটা একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট, আবাহনী ক্লাব নয়। এখানে উনাদেরও (দলের মালিকপক্ষ) একটা কথার মূল্য থাকে। উনারা চেয়েছেন থিসারা হোক (অধিনায়ক)।”
“এখানেও ভুল নেই, থিসারা অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। উনারা এটাও চেয়েছেন, লিটন যেন চাপহীন খেলেন। লিটনের কাছ থেকে যেন সেরা সার্ভিসটা পাই। এটাও আমি শুনেছি, দলের ভেতরে যে কথা হচ্ছে। লিটন হলে ভালো হতো। তবে থিসারাও আমাদের দেশে অনেক খেলেছে। এখানকার ক্রিকেটারদের সে চেনে-জানে। খুব ভালো মানুষ সে। ভালো ছেলে। সবকিছু মিলিয়ে… নাথিং রং। লিটন তো আছেই সাপোর্ট করার জন্য। তবে হয়তোবা (লিটন অধিনায়ক) হলে ভালো হতো।”
বিপিএলে প্রথম জয়ের আশায় মঙ্গলবার ঢাকার প্রতিপক্ষে আসরে কোনো ম্যাচ না হারা রংপুর রাইডার্স।