Published : 10 Oct 2022, 08:20 PM
ঠিক দুই মাস পর ম্যাচ খেলতে নামলেন তামিম ইকবাল। উইকেটে কাটালেন দেড় ঘণ্টার বেশি সময়। কিন্তু অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান পারলেন না ইনিংস বড় করতে। জাতীয় ক্রিকেট লিগের প্রথম দিনে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়কের ব্যর্থতার দিনে অল্প রানে গুটিয়ে গেল তার দল চট্টগ্রাম বিভাগ।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে সোমবার চট্টগ্রামকে ১৪১ রানে গুটিয়ে দিয়ে সিলেট বিভাগ দিন শেষ করেছে বিনা উইকেটে ১৫ রান তুলে।
৬৯ বলে ৩টি চারে ৩১ রান করেন তামিম। এটিই চট্টগ্রামের ইনিংসে সর্বোচ্চ। আর কেউ ২০ রানেও যেতে পারেননি।
তাদের গুঁড়িয়ে দিতে ৪৭ রানে ৫ উইকেট নেন নাবিল সামাদ। ৩৬ বছর বয়সী বাঁহাতি স্পিনার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৬তম বার পেলেন এই স্বাদ।
২৪তম জাতীয় ক্রিকেট লিগ শুরুর দিনে চার ম্যাচেই দাপট দেখিয়েছেন মূলত বোলাররা। ৫ উইকেট পেয়েছেন ঢাকা বিভাগের পেসার সুমন খানও। এ দিন ব্যাট হাতে পঞ্চাশ ছুঁতে পেরেছেন কেবল বরিশাল বিভাগের দুজন।
সিলেটের বিপক্ষে চট্টগ্রাম ব্যাটিংয়ে নামে টস হেরে। গত অগাস্টে জিম্বাবুয়েতে ওয়ানডে সিরিজের পর ম্যাচ খেলতে নামা তামিম রানের খাতা খোলেন মুখোমুখি প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে। পঞ্চম ওভারে থার্ড ম্যান দিয়ে তিনি একটি চার পেয়ে যান আবু জায়েদ চৌধুরির বল ঠিকমতো খেলতে না পেরেও। এরপর সুইপ ও রিভার্স-সুইপে দুটি চার মারেন নাবিলের একই ওভারে।
সপ্তদশ ওভারে সাব্বির হোসেনের বিদায়ে ৪২ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পরই চট্টগ্রামের পথ হারানোর শুরু। অফ স্পিনার শাহানুর রহমানকে জায়গায় দাঁড়িয়ে কাট করার চেষ্টায় স্লিপে ধরা পড়েন তামিম।
এরপর নিয়মিত উইকেট হারিয়ে অল্পতে গুটিয়ে যায় চট্টগ্রাম। সিলেটের নাবিলের পাঁচটি ছাড়া নাঈম আহমেদের প্রাপ্তি ৩টি, ২০ ওভারে স্রেফ ২৮ রান দিয়ে। আবু জায়েদ উইকেট না পেলেও ৮ ওভারে ৩ মেডেনে রান দেন কেবল ১২।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চট্টগ্রাম বিভাগ ১ম ইনিংস: ৮০.১ ওভারে ১৪১ (সাব্বির ১৬, তামিম ৩১, পিনাক ১১, সৈকত ১০, পারভেজ ১৫, ইরফান ৯, ইফতেখার ৪, মেহেদি রানা ২, মুরাদ ১৪, ইয়াসিন ১১, শরিফ ৫*; আবু জায়েদ ৮-৩-১২-০, তানজিম ১১-৫-২৩-১, নাঈম ২০-৮-২৮-৩, নাবিল ২৭.১-৪৭-৫, শাহানুর ১৪-৪-১৯-১)
সিলেট বিভাগ ১ম ইনিংস: ৪ ওভারে ১৫/০ (ইমতিয়াজ ৪*, তৌফিক ১১*; মেহেদি রানা ২-০-৫-৮, মুরাদ ১-০-১০-০, ইয়াসিন ১-১-০-০)
সুমনের আগুনে পুড়ল রংপুর
মিরপুর শের-ই-বাংলায় ঘাসের ছোঁয়া থাকা উইকেটে ঢাকা বিভাগের পেসারদের তোপে চূর্ণ হয়েছে রংপুর বিভাগের ব্যাটিং। গুটিয়ে গেছে তারা একশর আগেই।
রংপুরকে স্রেফ ৯২ রানে অল আউট করে ঢাকা প্রথম দিন শেষ করেছে ৫ উইকেটে ১২২ রান নিয়ে। এগিয়ে আছে তারা ৩০ রানে।
ঢাকা বোলিং নেয় টস জিতে। পঞ্চম ওভারে দারুণ এক ডেলিভারিতে মাইশুকুর রহমানকে এলবিডব্লিউ করে সুর বেঁধে দেন তরুণ পেসার সুমন।
একটা পর্যায়ে ২১ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে রংপুর। সেখান থেকে আরিফুল হকের ৮৩ বলে অপরাজিত ৩৪ রানের সুবাদে একশর কাছাকাছি যেতে পারে তারা।
ব্যাটিংয়ের সময় পায়ে টান লাগায় ইনিংসের শুরুর দিকে মাঠ ছাড়েন নাঈম ইসলাম। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান পরে আর ফেরেননি।
সুমন ২৫ রানে নেন ৫ উইকেট। মাইশুকুরের পর তার শিকার নাসির হোসেন, আকবর আলি, আবু হাসিম ও মুশফিক হাসান।
২২ বছর বয়সী ডানহাতি পেসার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দ্বিতীয়বার পেলেন পাঁচ উইকেটের স্বাদ।
অন্য দুই পেসার সালাউদ্দিন শাকিল ও রিপন মণ্ডল নেন দুটি করে উইকেট।
জবাবে ঢাকার শুরুটাও ভালো ছিল না। ৬১ রানে হারায় ৫ উইকেট। সেখান থেকে তারা ঘুরে দাঁড়ায় তাইবুর রহমান ও নাদিফ চৌধুরির ব্যাটে। দিন শেষে দুজনই অপরাজিত আছেন ৩০ রানে। তাদের অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ৬১।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর বিভাগ ১ম ইনিংস: ৩৬.২ ওভারে ৯২ (মাইশুকুর ৩, জাহিদ ১২, তানবীর ০, নাঈম ০ আহত অবসর, নাসির ১, আকবর ০, আরিফুল ৩৪*, রবিউল ১০, রিশাদ ২৪, হাসিম ০, মুশফিক ০; সুমন ১১.২-৫-২৫-৫, সালাউদ্দিন ৮-২-১৪-২, রিপন ৯-১-৩১-২, নাজমুল অপু ৭-১-১৪-০, তাইবুর ১-০-১-০)
ঢাকা বিভাগ ১ম ইনিংস: ৪৫ ওভারে ১২২/৫ (মজিদ ৭, রনি ০, মাহিদুল ২৬, রকিবুল ১৬, তাইবুর ৩০*, শুভাগত ৪, নাদিফ ৩০*; রবিউল ১০-৩-৩১-১, মুশফিক ১২-৪-২৮-৩, আরিফুল ৮-১-২২-০, হাসিম ১১-৩-১৯-১, নাসির ৪-০-১৫-০)
মানিকের ৪ উইকেট, নাঈম ‘ডাক’
মানিক খানের দারুণ বোলিংয়ে খুলনা বিভাগকে ১৩১ রানে গুটিয়ে দিয়েছে ঢাকা মেট্রো। প্রথম দিন শেষে মেট্রোর সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৩৭ রান।
খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে উইকেটে ঘাস ছিল কিছুটা। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৭ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারায় খুলনা। ষষ্ঠ উইকেটে ৫৬ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন অমিত মজুমদার ও নাহিদুল ইসলাম। তবে এ জুটি ভাঙার পর আর বেশিক্ষণ টেকেনি তাদের ইনিংস।
৬৫ বলে ৬ চারে সর্বোচ্চ ৪২ রান করেন নাহিদুল। অমিতের ব্যাট থেকে আসে ৩৫ রান। ইমরুল কায়েস আউট হন ৪ রান করে।
২৫ বছর বয়সী ডানহাতি পেসার মানিক ৪ উইকেট নেন ২৮ রান দিয়ে।
জবাবে মেট্রোর অধিনায়ক মোহাম্মদ নাঈম শেখ শূন্য রানে আউট হন ২ বল খেলে। আরেক ওপেনার মাহফিজুল ইসলাম ও মার্শাল আইয়ুবও বেশিক্ষণ টেকেননি। দিন শেষে শামসুর রহমান ৭৫ বলে ২০ ও আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ৭ রানে অপরাজিত আছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
খুলনা বিভাগ ১ম ইনিংস: ৬০.১ ওভারে ১৩১ (নাবিল ৫, অমিত ৪৫, ইমরানুজ্জামান ০, ইমরুল ৪, শেখ মেহেদি ২০, জিয়াউর ২, নাহিদুল ৪২*, আব্দুল হালিম ৫, টিপু ১১, সালমান ১*; আবু হায়দার ১১-২-২৮-১, কাজি অনিক ১০-৪-২৮-২, রকিবুল ৯-২-২৬-১, শরিফউল্লাহ ১৫.১-৬-১৬-২, মানিক ১৫-৫-২৮-৪)
ঢাকা মেট্রো ১ম ইনিংস: ২৪ ওভারে ৩৭/৩ (মাহফিজুল ৪, নাঈম শেখ ০, শামসুর ২০*, মার্শাল ৪, আমিনুল ৭*; আল আমিন ৫-২-৫-০, জিয়াউর ৭-৪-৬-২, সালমান ৩-০-৮-০, আব্দুল হালিম ৫-২-১২-১, টিপু ৩-২-৩-০, শেখ মেহেদি ১-০-১-০)
সোহাগ ও সায়েমের ফিফটি
রাজশাহী বিভাগের বিপক্ষে অল্পতে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়েছিল বরিশাল বিভাগ। সোহাগ গাজী ও আবু সায়েমের ফিফটিতে ঘুরে দাঁড়ায় তারা।
রাজশাহীর শহীদ কামরুজ্জামান স্টেডিয়ামে প্রথম দিন শেষে বরিশালের সংগ্রহ ৯ উইকেটে ২৬৯ রান।
ছয় নম্বরে নেমে ৫৬ বলে ৯ চার ও এক ছক্কায় ৫৬ রান করেন অলরাউন্ডার সোহাগ। অধিনায়ক সায়েম সাত নম্বরে নেমে ১১৩ বলে ১১ চারে করেন ৫৯ রান।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭২ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছিল বরিশাল। ওপেনিংয়ে নেমে মোহাম্মদ আশরাফুল ১৫ বলে করেন ১ রান।
এরপর লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় এগিয়ে যায় দলটি। ষষ্ঠ উইকেটে সোহাগের সঙ্গে ৪৫, এরপর কামরুল ইসলাম রাব্বির সঙ্গে ৪৭ রানের দুটি জুটি গড়েন সায়েম।
দিন শেষে ৫৪ বলে ৪৩ রানে খেলছেন তানভির ইসলাম।
রাজশাহীর নাহিদ রানা নিয়েছেন সর্বোচ্চ ৪ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বরিশাল বিভাগ ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ২৬৯ (রাফসান ৩৭, আশরাফুল ১, ফজলে মাহমুদ ২০, সালমান ৮, নুরুজ্জামান ১, সোহাগ ৫৬, সায়েম ৫৯, রাব্বি ২১, তানভির ৪৩*, রুয়েল ৬, শাহিন ৫*; শফিকুল ১৩-৫-৩৮-১, নাহিদ রানা ২০-১১-৪৬-৪, ফরহাদ রেজা ১৩-২-৬০-১, আসাদুজ্জামান ১০-৩-৩৪-০, সানজামুল ২৪-১০-৬৫-২, মেহেরব ১০-১-৩৩-১)