Published : 23 Jan 2024, 04:03 PM
এক ওভারেই তিন উইকেট- বিপিএলে আবির্ভাবেই বিস্ময়ে চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছিলেন দুশান হেমান্থা। ছোট পুঁজি নিয়েও জয়ের স্বপ্ন দেখছিল তার দল। কিন্তু আরেকজন যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন বিপিএলে নিজের ফেরা রাঙিয়ে তোলার!
আগের রাতে ঢাকায় পা রেখে পরদিনই দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিলেন বাবর আজম। বিপর্যয় থেকে উদ্ধারের সেই লড়াইয়ে দারুণভাবে হাত বাড়িয়ে দিলেন আজমাতউল্লাহ ওমারজাই। সাকিব আল হাসানকে ছাড়াই স্বস্তির জয়ের স্বাদ পেল রংপুর রাইডার্স।
বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৪ উইকেটে হারিয়ে দুই ম্যাচে প্রথম জয়ের দেখা পেল রংপুর রাইডার্স।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার দুই ইনিংসেই দুই দফায় দেখা যায় ব্যাটিং বিপর্যয়। ৩৯ রানে ৫ উইকেট হারানো সিলেট বেনি হাওয়েল ও বেন কাটিংয়ের লড়াইয়ে যেতে পারে ১২০ পর্যন্ত।
সেই রান নিয়েও জয়ের সম্ভাবনা জাগায় তারা। বিপিএলে অভিষেক ওভারেই তিন শিকার ধরেন লঙ্কান লেগ স্পিনার দুশান হেমান্থা। রংপুর ৬ উইকেটে হারায় ৩৯ রানে। কিন্তু বাবর ও ওমারজাইয়ের দারুণ জুটিতে সেখান থেকেই জিতে যায় তারা।
২০১৭ সালে বিপিএল খেলে যাওয়া বাবর এই টুর্নামেন্টে ফেরার ম্যাচে ৪৯ বলে ৫৬ রানে অপরাজিত থাকেন । ৩৫ বলে ৪৭ রান করে দলকে জিতিয়ে ফেরেন ওমারজাই।
দুজনের ম্যাচ জেতানো অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৮৬ রান আসে ৬৮ বলে।
প্রথম দুই ওভারে বাবর ও রনি তালুকদারের দুটি বাউন্ডারিতে শুরু হয় রংপুরের রান তাড়া। তবে রিচার্ড এনগারাভার শর্ট বলে তৃতীয় ওভারেই বাজে শটে ফেরেন রনি।
এরপর একপ্রান্তে রান করে যান বাবর। আরেকপ্রান্তে চলতে থাকে আসা-যাওয়া। নাজমুল ইসলাম অপুকে ক্রস ব্যাটে খেলার চেষ্টায় বোল্ড হয়ে যান ব্র্যান্ডন কিং। প্রথমবার বিপিএল অভিযানে দুই ম্যাচেই শূন্য রানে ফিরলেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান।
অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান চারে নেমে দারুণ এক ছক্কা মারেন তানজিম হাসান সাকিবকে ফ্লিক করে। কিন্তু এক বল পরই আউট হয়ে যান একই চেষ্টায়।
এরপর হেমান্থার সেই ওভার। একে একে তার শিকার শামীম হোসেন, মোহাম্মদ নাবি ও শেখ মেহেদি হাসান। তিনটিই এলবিডব্লিউ, প্রতিটি সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হয় রিভিউয়ে।
জয়ের আশায় তখন টগবগ করে ফুটছে সিলেট। কিন্তু এরপর যথেষ্ট আঁটসাঁট বোলিং তারা করতে পারেননি। এই সুযোগে জুটি গড়েন বাবর ও ওমারজাই।
বাবরের জন্য পরিস্থিতি ছিল আদর্শ। রান তাড়ার চাপ ছিল না। নিজের মতোই নিরাপদ ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নেন তিনি। আরেকপ্রান্তে ওমারজাই দ্রুত রান বাড়ান আলগা কিছু ডেলিভারি পেয়ে।
শেষ পর্যন্ত এই জুটিই দলকে নিয়ে যায় ঠিকানায়। ম্যাচ আর সেভাবে জমেই ওঠেনি। ৬ চারে ৪৯ বলে ৫৬ রান করেন বাবর। ওমারজাইয়ের ৩৫ বলে ৪৭ রানের ইনিংসে চার দুটি, ছক্কা তিনটি।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা সিলেট শুরু থেকেই এগোতে থাকে বারবার হোঁচট খেয়ে। শেখ মেহেদি হাসানকে সুইপ করে বাউন্ডারির পরের বলেই টার্ন না করা ডেলিভারিতে স্টাম্পড হয়ে যান মোহাম্মদ মিঠুন। স্টাম্পের পেছনে অসাধারণ ক্ষীপ্রতায় বেলস তুলে ফেলেন কিপার নুরুল হাসান সোহান।
অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার তিনে উঠে আসা কাজে লাগেনি দলের। ৬ রান করে রান আউট হয়ে যান তিনি দৃষ্টিকটূ খামখেয়ালিপনায়। হাসান মাহমুদকে টানা দুটি বাউন্ডারিতে শুরুর পর শেখ মেহেদিকে উইকেট উপহার দিয়ে ফেরেন ইয়াসির আলি চৌধুরি। আগের ম্যাচে ফিফটি করা জাকির হাসান এবার বিদায় নেন ১ রানেই। মোহাম্মাদ নাবির বলে এবারও চোখের পলকে স্টাম্পিং করেন সোহান।
প্রথম ওভারে বাউন্ডারির পর নাজমুল হোসেন শান্ত থমকে যান অনেকটাই। শেষ পর্যন্ত তিনিও পারেননি পুষিয়ে দিতে। ২৪ বল খেলে তিনি করতে পারেন স্রেফ ১৪ রান।
নবম ওভারে সিলেট তখন ধুঁকছে ৫ উইকেটে ৩৯ রান নিয়ে।
দুই অলরাউন্ডার বেনি হাওয়েল ও বেন কাটিংয়ের লড়াই সেখান থেকে। শুরুতে একটু সময় নেওয়ার পর কার্যকর কিছু শট খেলে রান বাড়ান দুজন। ৫৬ বলে ৬৮ রানের জুটি গড়েন দুজন ষষ্ঠ উইকেটে।
তবে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারেননি কেউই। ৩২ বলে ৩৭ করে ফেরেন হাওয়েল, ৩৫ বলে ৩৭ কাটিং। শেষ তিন ওভারে প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেনি সিলেট। শেষ চার ওভারে বাউন্ডারি আসে কেবল দুটি।
তাতে রান থমকে যায় ১২০ রানে। সেই পুঁজিতে লড়াই হলেও ধরা দেয়নি জয়। গতবারের চমক দেখানো সিলেট এবার শুরু করল টানা দুই পরাজয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিলেট স্ট্রাইকার্স: ২০ ওভারে ১৩৬/৮ (শান্ত ১৪, মিঠুন ৫, মাশরাফি ৬, ইয়াসির ৯, জাকির ১, হাওয়েল ৩৭, কাটিং ৩৭, তানজিম ২*, হেমান্থা ১, এনগারাভা ১; ওমারজাই ২-০-১০-০, শেখ মেহেদি ৪-০-১৮-২, হাসান ৩-০-২৬-০, নাবি ৪-০-১৭-১, মুরাদ ৪-১-২৯-১, রিপন ৩-০-১৯-২)
রংপুর রাইডার্স: ১৮.২ ওভারে ১২৫/৬ (রনি ৬, বাবর ৫৬*, কিং ০, সোহান ৮, শামীম ২, নাবি ০, শেখ মেহেদি ০, ওমারজাই ৪৭*; এনগারাভা ৩.২-০-২৮-১, তানজিম ৪-০-৩৬-১, নাজমুল অপু ৪-০-১৮-১, হেমান্থা ৪-০-২০-৩, হাওয়েল ৩-০-২২-০)
ফল: রংপুর রাইডার্স ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আজমাতউল্লাহ ওমারজাই