জাতীয় ক্রিকেট লিগ
Published : 10 Nov 2024, 06:59 PM
শেখ মেহেদি হাসানের হাত ফসকে বলে উঠে গেল আকাশে। আম্পায়ারের সঙ্গে বলের খোঁজে ওপরে তাকালেন নন স্ট্রাইকে থাকা অমিত হাসান। কয়েক মুহূর্ত পর ওপর থেকে নেমে আসা বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ফুল টস বানিয়ে মারলেন আসাদুল্লা আল গালিব। কিন্তু শট খেলার সময় ভারসাম্য হারিয়ে দূরত্ব পার করতে পারলেন না। ধরা পড়ে গেলেন লং অন সীমানায়। বোলার মেহেদিসহ খুলনার ফিল্ডাররা এই দৃশ্যে হেসেই খুন!
ওই নির্দিষ্ট মুহূর্তে আনন্দের সুযোগ পেলেও এর আগপর্যন্ত খুলনার বোলারদের কঠিন সময়ই উপহার দেন অমিত ও গালিব। ম্যারাথন জুটি গড়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেন সিলেট অধিনায়ক অমিত। আর গালিব স্বীকৃত ক্রিকেটে প্রথমবার পান তিন অঙ্কের জাদুকরী ছোঁয়া।
জাতীয় ক্রিকেট লিগের চতুর্থ রাউন্ডে অমিত, গালিবের দারুণ অর্জনের দিনে রানের দেখা পেয়েছেন শাহাদাত হোসেন, ইয়াসির আলিরা। বল হাতে উজ্জ্বল প্রদর্শনী করেছেন মেহেদি, শুভাগত হোমরা।
অমিত-গালিবের জুটিতে সিলেটের বড় পুঁজি
কক্সবাজার একাডেমি মাঠে আগের দিনের ধারা অব্যাহত রাখেন অমিত। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন গালিব। দুজনের ২৫১ রানের জুটিতে ৭ উইকেট হারিয়ে ৪৯৬ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে সিলেট।
দিনের শেষ দিকে ২ ওভার ব্যাটিং করে উইকেট না হারিয়ে ৩ রান করে খুলনা। ৪৯৩ রানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করবে তারা।
প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে আগের সাত সেঞ্চুরিতে অমিতের সর্বোচ্চ ছিল ১৮৬ রান। সেটি টপকে তিনি পেলেন দ্বিশতকের স্বাদ। আব্দুল হালিমের বাউন্সারে পুল করে ফাইন লেগ দিয়ে মারা বাউন্ডারিতে কাঙ্ক্ষিত মাইলফলকে পৌঁছান ২৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
চলতি লিগে এটিই প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। অমিতের দুইশ হওয়ার আগে টিপু সুলতানের বলে বাউন্ডারি মেরে স্বীকৃত ক্রিকেটে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি করেন গালিব।
দিনের প্রথম দুই সেশন কাটিয়ে দেন অমিত, গালিব। পরে গালিব অদ্ভুতভাবে আউট হলে সমাপ্তি ঘটে তাদের ৫০৭ বলের জুটির। এরপর অমিতও টিকতে পারেননি। জিয়াউর রহমানের বলে ক্রিজ ছেড়ে মারতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দেন তিনি।
৭ চার ও ৩ ছক্কায় ২৪২ বলে ১১৫ রান করেন গালিব। সাড়ে ১০ ঘণ্টার বেশি ব্যাটিং করে ১৮ চার ও ১ ছক্কায় অমিতের ব্যাট থেকে আসে ৪৫৫ বলে ২১৩ রান। দুজনের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ ব্যাটিং করেনি সিলেট।
খুলনার পক্ষে মেহেদি ৪ ও জিয়াউর নেন ৩ উইকেট।
দিনের শেষ দিকে ফিল্ডিংয়ে নেমে প্রায় ১৬ মাস পর স্বীকৃত ক্রিকেটে বোলিং করেন ইবাদত হোসেন। তবে আলোকস্বল্পতায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খেলা বন্ধ হওয়ায় এদিন এক ওভারের বেশি করা হয়নি দীর্ঘ দিন হাঁটুর চোটে থাকা পেসারের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে)
সিলেট ১ম ইনিংস: ১৬৩.৪ ওভারে ৪৯৬/৭ (ডি.) (আগের দিন ২৪৪/৩) (অমিত হাসান ২১৩, গালিব ১১৫, তোফায়েল ৭, রাহাতুল ১৫, খালেদ ৭*; জিয়াউর ৩.৪-০-১৫-৩, সালমান ১১-০-৬৮-০, মেহেদি ৬১-১৫-১৫২-৪, হালিম ২১.৫-১-৭৪-০, টিপু ৪৬-৬-১০১-০, আফিফ ১০-০-৪৪-০, ইমরুল ১-০-৫-০, মিথুন ৭-০-২৪-০, এনামুল ২.১-০-৫-০)
খুলনা ১ম ইনিংস: ২ ওভারে ৩/০ (এনামুল ১*, অমিত মজুমদার ০*; এবাদত ১-০-২-০, খালেদ ১-১-০-০)
শাহাদাতের ব্যাটে রান
চট্টগ্রামের অধিনায়কত্ব পেয়ে প্রথম তিন রাউন্ডে পুরোপুরি ব্যর্থ হন শাহাদাত হোসেন। তবে চতুর্থ ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিলেন তরুণ ব্যাটসম্যান। তার সঙ্গে জুটি গড়ে পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস খেললেন ইয়াসির আলি চৌধুরি।
শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় দিন শেষে চট্টগ্রামের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ২০২ রান। এর আগে ৩১৮ রানে গুটিয়ে যায় বরিশাল। চট্টগ্রাম এখনও ১১৬ রানে পিছিয়ে।
বাকি থাকা ৩ উইকেট নিয়ে রোববার আরও ৮২ রান করে বরিশাল। এর বড় কারিগর মইন খান ও তানভির ইসলাম। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ১৫৪ বলে ৭৭ রানের ইনিংস খেলেন মইন। দশ নম্বরে নেমে ৩৭ বলে ৪০ রান করেন অধিনায়ক তানভির।
চট্টগ্রামের হয়ে ৪ উইকেট নেন আশরাফুল হাসান।
পরে ব্যাটিংয়ে নেমে চট্টগ্রামের শুরুটা তেমন ভালো হয়নি। ৬১ রানের মধ্যে প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা।
চতুর্থ উইকেটে হাল ধরেন শাহাদাত ও ইয়াসির। অবিচ্ছিন্ন জুটিতে এখন পর্যন্ত ১৪১ রান যোগ করেছেন তারা দুজন।
আগের পাঁচ ম্যাচের তিন ইনিংসে শূন্য রানে আউট হওয়া শাহাদাত ১৩৯ বলে ৬৪ রানে অপরাজিত। ৫ চারের সঙ্গে ৪ ছক্কায় ১০৬ বলে ইয়াসির খেলছেন ৮১ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে)
বরিশাল ১ম ইনিংস: ১১৯.৪ ওভারে ৩১৮ (আগের দিন ২৩৬/৭) (মইন ৭৭, কামরুল ৭, তানভির ৪০, রুয়েল ১*; এনামুল ১২-৫-৩১-৩, ইফতেখার ২১-২-৭২-০, নাঈম ৪৯-১৫-১০৭-২, আশরাফুল ৩০.৪-১১-৬৮-৪, সাজ্জাদুল ৫-২-৯-০, শামীম ২-১-৩-১)
চট্টগ্রাম ১ম ইনিংস:৫১ ওভারে ২০২/৩ (পারভেজ ১৫, সাদ্দাম ৮, সাজ্জাদুল ২৩, শাহাদাত ৬৪*, ইয়াসির ৮১*; কামরুল ১২-২-৩৪-১, রুয়েল ৯-১-৪২-২, তানভির ১৭-০-৭৬-০, সোহাগ ৭-০-২৪-০, মইন ৪-০-১২-০, সালমান ২-০-৫-০)
রাজশাহীতে রোমাঞ্চের আভাস
রাজশাহীর শহীদ কামারুজ্জামান স্টেডিয়ামে প্রথম ইনিংসে রংপুরের ১৮৯ রানের জবাবে রাজশাহীও থেমেছে ঠিক ১৮৯ রানে। পরে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ৮৩ রান করে দিনের খেলা শেষ করেছে রংপুর।
বল হাতে দলের সর্বোচ্চ ৬ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়েও দলের সেরা পারফর্ম্যান্স করেন সাব্বির হোসেন। ৬ চারে ৬৯ বলে ৪৭ রান করেন অভিজ্ঞ ওপেনার। এছাড়া স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের কেউই তেমন কিছু করতে পারেননি।
৯ নম্বরে নেমে ওয়াসি সিদ্দিকি খেলেন ৬৪ বলে ৩৯ রানের ইনিংস। যার সৌজন্যে রংপুরকে ছুঁতে পারে রাজশাহী।
শেষ সেশনে ব্যাটিংয়ে নেমে ইতিবাচক শুরু করেন রংপুরের দুই ওপেনার মিম মোসাদ্দেক ও চৌধুরি মোহাম্মদ রিজওয়ান। উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৪৮ রান। এরপর দ্রুতই উইকেট হারাতে থাকে তারা।
মিম ৩৩ ও রিজওয়ান ৩২ রান করে ফেরেন। দিনের শেষ ওভারে ২ উইকেট নিয়ে রাজশাহীর আশা বাড়ান মোহর শেখ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে)
রংপুর ১ম ইনিংস: ১৮৯
রাজশাহী ১ম ইনিংস: ৬৪.৪ ওভারে ১৮৯ (আগের দিন ৩৯/১) (হাবিবুর ২৭, সাব্বির ৪৭, ফরহাদ ২৬, মেহেরব ২৪, প্রিতম ০, সানজামুল ২, কিবরিয়া ১০, ওয়াসি ৩৯*, আলি ০, মোহর ০; গাফফার ১৭-৩-৫৮-১, রবিউল ১৮-৬-৩৭-২, মামুন ১২-২-৩১-০, হাশিম ৪-০-১১-১, রিজওয়ান ৯-১-৩০-৩, নবিন ৪-২-১৩-১, তানবীর ০.৪-০-১-২)
রংপুর ২য় ইনিংস: ২৭ ওভারে ৮৩/৪ (মিম ৩৩, রিজওয়ান ৩২, মামুন ১৪, নবিন ০, গাফফার ১*; আলি ৮-২-৩০-০, মোহর ৬-১-১৮-২, কিবরিয়া ৩-০-১৩-০, সাব্বির ৭-১-১৭-১, সানজামুল ৩-২-২-১)
সিলেটে শুভাগতর অলরাউন্ড নৈপুণ্য
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ঢাকা মেট্রোর ৩০৪ রানের জবাবে দিন শেষে ঢাকার সংগ্রহ ৬ উইকেটে ২৫৪ রান। ৫০ রানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করবে ঢাকা।
৬ উইকেটে ২৩৩ রান নিয়ে রোববার আরও ৭৩ রান করে মেট্রো। গাজী তাহজিবুল হাসান খেলেন ৬৩ রানের ইনিংস।
ঢাকার হয়ে ৪ উইকেট নেন শুভাগত।
পরে ব্যাটিংয়ে নেমে অল্পেই ফেরেন আশিকুর রহমান ও জয়রাজ শেখ। তাইবুর রহমানকে নিয়ে ৫৫ রানের জুটি গড়েন রনি তালুকদার। তাইবুর ফেরেন ৩৯ রান করে। এরপর মোসাদ্দেক হোসেনও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি।
দলকে দেড়শ পার করিয়ে ফেরেন ৫৪ রান করা রনি। এরপর ছন্দে থাকা মাহিদুল ইসলাম রান আউট হলে ধাক্কা খায় ঢাকা।
তবে নাজমুল ইসলামকে নিয়ে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দলকে আড়াইশ পার করান শুভাগত। মাত্র ৫০ বলে ৬১ রানে অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন তারা। শুভাগত ৬০ ও নাজমুল ২১ রানে নতুন দিনের খেলা শুরু করবেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে)
ঢাকা মেট্রো ১ম ইনিংস: ১০৮.৫ ওভারে ৩০৪ (আগের দিন ২৩৩/৬) (তাহজিবুল ৬৩, আবু হায়দার ১৬, রকিবুল ৮, আরিফ ৬, মারুফ ০*; সালাউদ্দিন ১৯-৪-৫১-১, রিপন ১৯-৪-৫৪-১, এনামুল ১৮-৩-৬৭-৪, শুভাগত ২৩.৫-৭-৬২-৪, নাজমুল ২৪-৬-৪৪-০, তাইবুর ৪-৩-১-০, মোসাদ্দেক ১-০-৪-০)
ঢাকা ১ম ইনিংস: ৬৫ ওভারে ২৫৪/৬ (আশিকুর ১১, রনি ৫৪, জয়রাজ ১৮, তাইবুর ৩৯, মোসাদ্দেক ২০, মাহিদুল ১৬, শুভাগত ৬০*, নাজমুল ২১*; আবু হায়দার ১২-৩-৪৬-১, আরিফ ১৮-৪-৪৮-১, মারুফ ১০-৩-৪৬-০, রকিবুল ২০-৩-৬৬-২, আইচ ৪-০-২৯-১, আমিনুল ১-০-৫-০)