Published : 30 Aug 2023, 10:54 PM
শুরুর ধাক্কা সামলে দারুণ সেঞ্চুরি করলেন বাবর আজম। অধিনায়কের সঙ্গে রেকর্ড গড়া জুটি উপহার দেওয়া ইফতিখার আহমেদও স্পর্শ করলেন তিন অঙ্ক। তাদের দুর্দান্ত দুটি ইনিংসে রান পাহাড় গড়ল পাকিস্তান। যা তাড়া করতে নেমে কোনো সম্ভাবনাই জাগাতে পারল না নেপাল। রেকর্ড গড়া জয়ে এশিয়া কাপ শুরু করল পাকিস্তান।
মুলতান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বুধবার এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিকদের জয় ২৩৮ রানে। ৩৪৩ রানের লক্ষ্যে ২৩.৪ ওভারে স্রেফ ১০৪ রানে গুটিয়ে গেছে নেপাল।
এশিয়া কাপে এবং দেশের মাটিতে পাকিস্তানের এটাই সবচেয়ে বড় জয়। এই টুর্নামেন্টের ইতিহাসে রানের হিসেবে এর চেয়ে বড় ব্যবধানে জয় আছে আর একটি। ২০০৮ সালের আসরে হংকংকে ২৫৬ রানে হারিয়েছিল ভারত।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো দেড়শ ছোঁয়া ইনিংসে দলের জয়ে বড় অবদান বাবরের। চাপের সময় ব্যাটিংয়ে নেমে ১৩১ বলে ১৫১ রানের ইনিংস খেলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক।
এশিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের এই টুর্নামেন্টে কোনো অধিনায়কের এটিই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে বিরাট কোহলির করা ১৩৬ রানকে টপকে গেলেন বাবর।
১৪ চার ও ৪ ছয়ে সাজানো ইনিংসের সৌজন্যে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জিতেছেন বাবর। তাকে দারুণ সঙ্গ দিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে স্রেফ ৭১ বলে ১০৯ রানের ইনিংস খেলেন ইফতিখার। ১১ চারের সঙ্গে ৪টি ছয়ে নিজের ইনিংস সাজান তিনি।
পঞ্চম উইকেট জুটিতে স্রেফ ১৩১ বলে ২১৪ রান যোগ করেন এই দুজন। এশিয়া কাপে এবং পাকিস্তানের মাটিতে পঞ্চম উইকেটে এটিই সর্বোচ্চ রানের জুটি। পাকিস্তানেরও পঞ্চম উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি এটি। এশিয়া কাপে সব মিলিয়ে যে কোনো উইকেটে এর চেয়ে বড় জুটি রয়েছে স্রেফ দুটি। দুটিই পাকিস্তানের।
বাবর-ইফতিখারের ব্যাটে বড় সংগ্রহের পর বল হাতে নেপালকে গুঁড়িয়ে দেন শাদাব খান, শাহিন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফরা। লেগ স্পিনে ৪ উইকেট নেন শাদাব। আফ্রিদি ও রউফ ধরেন ২টি করে শিকার। প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপে খেলতে আসা নেপাল কোনোমতে ছাড়াতে পারে একশ।
অথচ মুলতানের রৌদ্রজ্জ্বল দিনে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তানের শুরুটা তেমন সুবিধার ছিল না। সাত ওভারের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় স্বাগতিকরা।
কারান কেসির অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড ফাখার জামান। পরের ওভারে রোহিত পাউরেলের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট ইমাম উল হক।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে পরিস্থিতি সামাল দেন বাবর ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। তবে রানের পালে হাওয়া দিতে পারেননি তারা। ৮৬ রানের জুটি গড়তে তারা খেলেন ১০৬ বল।
এই জুটিও ভাঙে রান আউটে। দলকে একশ পার করিয়ে দিপেন্দ্র সিং আইরির সরাসরি থ্রোয়ে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন রিজওয়ান। ৬ চারে ৫০ বলে ৪৪ রান করেন কিপার-ব্যাটসম্যান।
পাঁচ নম্বরে নেমে হতাশ করেন আঘা সালমান। সন্দিপ লামিছানের বলে ক্যাচ আউট হন স্রেফ ৫ রান করে।
এরপর শুরু হয় বাবর-ইফতিখারের প্রতি আক্রমণ। পঞ্চাশ ছুঁতে ৭২ বল খেলা বাবর পরের ৫০ রান নেন স্রেফ ৩৭ বলে। ইফতিখার ফিফটিতে পা রাখেন ৪৩ বল খেলে। সেখান থেকে জাদুকরী তিন অঙ্ক ছুঁতে তার লাগে আর ২৪ বল।
সেঞ্চুরি ছুঁয়ে আরও উত্তাল রূপ নেয় পাকিস্তান অধিনায়কের ব্যাট। ৪টি করে চার-ছয়ে স্রেফ ২২ বলে নেন ৫১ রান। শেষ ওভারে ড্রেসিং রুমে ফেরার আগে তার সঙ্গী ঝকঝকে এক ইনিংস। অপরাজিত থাকেন ইফতিখার।
সোম্পাল কামি নেন ২ উইকেট। তবে ১০ ওভারে তার খরচ ৮৫ রান। ওয়ানডেতে এটিই নেপালের সবচেয়ে খরুচে বোলিং। লামিছানে ১০ ওভারে ১ উইকেটের জন্য দেন ৬৯ রান।
রান তাড়ায় আফ্রিদিকে প্রথম দুই বলে চার মারেন কুশাল ভুর্তেল। তবে প্রতিশোধ নিতে সময় নেননি আফ্রিদি। ওভারের শেষ দুই বলে ভুর্তেল ও রোহিতকে ড্রেসিং রুমে ফেরত পাঠান পাকিস্তানের তারকা পেসার।
পরের ওভারে আঘাত হানেন নাসিম শাহ। আসিফ শেইখের উইকেট হারিয়ে খাবি খেতে থাকে নেপাল।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন আরিফ শেইখ ও সোম্পাল কামি। দুজন মিলে যোগ করেন ৭৮ বলে ৫৯ রান। আরিফকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন রউফ। ৩৮ বলে আরিফ করেন ২৬ রান।
সোম্পাল খেলেন ৪৬ বলে ২৮ রানের ইনিংস। এরপর শুরু হয় আসা-যাওয়ার মিছিল। স্রেফ ২২ রানের মধ্যে শেষের ৬ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে যায় নেপাল। লেজ মুড়িয়ে দেওয়ার কাজটা দারুণভাবে করেন শাদাব।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ৩৪২/৬ (ফাখার ১৪, ইমাম ৫, বাবর ১৫১, রিজওয়ান ৪৪, সালমান ৫, ইফতিখার ১০৯*, শাদাব ৪; সোম্পাল ১০-১-৮৫-২, কারান ৯-০-৫৪-১, গুলশান ৪-০-৩৫-০, রাজবানশি ১০-০-৪৮-০, লামিছানে ১০-০-৬৯-১, দিপেন্দ্র ৬-০-৪০-০, ভুর্তেল ১-০-১০-০)
নেপাল: ২৩.৪ ওভারে ১০৪ (ভুর্তেল ৮, আসিফ ৫, রোহিত ০, আরিফ ২৬, সোম্পাল ২৮, গুলশান ১৩, দিপেন্দ্র ৩, কুশাল ৬, লামিছানে ০, কারান ৭*, রাজবানশি ০; আফ্রিদি ৫-০-২৭-২, নাসিম ৫-০-১৭-১, রউফ ৫-১-১৬-২, শাদাব ৬.৪-০-২৭-৪, নাওয়াজ ২-০-১৩-১)
ফল: পাকিস্তান ২৩৮ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: বাবর আজম