Published : 22 Oct 2023, 08:38 PM
তাপমাত্রা ৩৪-৩৫ ডিগ্রি, তবে ইন্টারনেটে দেখা গেল, অনুভূত হচ্ছে ৪১-৪২ ডিগ্রির মতো। চিটচিটে গরম, রোদের তাপ প্রচণ্ড। ঘাম ছুটে যায় মুহূর্তেই। স্থানীয় এক সংবাদকর্মী জানালেন, এই সময়ে মুম্বাইয়ের আবহাওয়া এরকমই থাকে। একে বলা হয় ‘অক্টোবর হিট।’
ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে অনুশীলনে এসে সেই ‘অক্টোবর হিট;-এর আঁচ লাগল বাংলাদেশ দলে। সহকারী কোচ ফয়সাল হোসেন মাঠেই অসুস্থ হয় পড়লেন গরমে। তার শুশ্রূষা করা হলো মাঠেই। অসুস্থতার কারণে প্রধান কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে তো মাঠেই আসেননি। ক্রিকেটাররাও অনুশীলনে নেমে ঘেমে-নেয়ে একাকার।
বাংলাদেশ থেকে এসে অবশ্য গরম নিয়ে অভিযোগ-আপত্তি খুব একটা খাটে না। ক্রিকেটাররাও তা করেননি। প্রচণ্ড গরমেই রোববার লম্বা সময় ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং ঝালিয়ে নেন তারা। সেখানে যথারীতি সাকিব আল হাসানের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল সংবাদকর্মীদের সবার। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে তো শেষ মুহূর্তে খেলতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে পারবেন তো?
নেট সেশন শুরুর আগে গা গরমের ফুটভলি খেলা বা স্ট্রেচিং, সবই করেন সাকিব। পরে অনুশীলনের মাঝামাঝি সময়টায় নেটে নামেন তিনি ব্যাট হাতে। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের সেন্টার উইকেটে তিনটি নেট মিলিয়ে প্রায় ৩৫ মিনিটের মতো ব্যাট করেন। ঘামে ভিজে জবজবে হয়ে ডাগআউটে ফিরে বিশ্রাম নেন বেশ কিছুটা সময়। এরপর আবার নেটে যান ব্যাট হাতে। এবার থ্রো ডাউন খেলেন ১০-১২ মিনিটের মতো।
তার ব্যাটিং দেখে চোটের অস্তিত্ব বোঝাই কঠিন। তবে ঠিক এরকমই ৪৫ মিনিটের মতো ব্যাটিং সেশন করেছিলেন তিনি পুনেতে ম্যাচের দুই দিন আগে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খেলেননি ম্যাচে। এবারও তাই ব্যাটিং দেখে পরিষ্কার ধারণা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দেখার ছিল, তিনি বোলিং করেন কি না বা রানিং বিটুইন দা উইকেট অনুশীলন করেন কি না।
দুটির কোনোটিই করেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। সেটি চোটের কারণে নাকি এমনিতেই, তা বোঝার উপায় নেই। তাকে নিয়ে অনিশ্চয়তা তাই রয়েই গেল।
শঙ্কা অবশ্য তাসকিন আহমেদকে নিয়েই মনে হলো আরও বেশি। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে তাকে খেলানো হয়নি। সেটি বাদ নাকি বিশ্রাম না চোটের কারণে, সেটিও জানানো হয়নি দল থেকে। মুম্বাই আসার পর শনিবার গুঞ্জন শোনা যায়, তার কাঁধের পুরনো চোট আবার মাথাচাড়া দিয়েছে। বাংলাদেশ দলের অপারেশন্স ম্যানেজার রাবিদ ইমাম অবশ্য সেটি উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, কোনো চোট-টোট নেই এই ফাস্ট বোলারের।
কিন্তু রোববারের অনুশীলনে তাসকিনের চোটের ব্যাপারটি ফুটে উঠল স্পষ্ট করেই। দলের সঙ্গে গা গরম করলেও নেটে বা নেটের বাইরে বোলিং করেননি তিনি। বরং পুরো সময়টা ফিজিও বায়োজিদুল ইসলামের সঙ্গেই কাটাতে দেখা গেল তাকে। হালকা রানিং করেন তিনি, বল হাতে নিয়ে বোলিংয়ের মতো কিছু করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার মুখভঙ্গিতে ব্যথার ছাপ পড়ছিল পরিস্কারভাবেই। স্ট্রেচিং করার সময়ও তাকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেন ফিজিও।
দুজনের কারও চোট নিয়েই দল থেকে কিছু খোলাসা করা হয়নি। অপারেশন্স ম্যানেজার শুধু অপেক্ষা করতে বললেন, “সাকিব-তাসকিন দুজনের ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা একই। যতটা সময় গড়াবে, ততই খেলার মতো ফিট হয়ে উঠবে। সাকিবের তো কোনো ব্যথাই নেই। স্রেফ ঝুঁকি এড়ানোর একটু সময় দিতেই গত ম্যাচে শেষ পর্যন্ত খেলেনি সে। আগামীকাল প্র্যাকটিস দেখে হয়তো দুজনের অবস্থাই আরও ভালোভাবে বোঝা যাবে।”
অনুশীলন দেখে বাংলাদেশ দলের লক্ষ্যটা অবশ্য বোঝা গেছে। লিটন কুমার দাস, তানজিদ হাসান তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, সবাই নেটে ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ের ঝড় তুলেছেন। কত বল যে আছড়ে পড়ল গ্যালারিতে!
বোলারদের প্রস্তুতিও তাতে খারাপ হলো না। তারাও বুঝতে পারলেন, ম্যাচে কী অপেক্ষায়! নেটে বোলিংয়ের জন্য দেশ থেকে উড়িয়ে আনা লেগ স্পিনার ওয়াসি সিদ্দিকও ছিলেন নেটে। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এই লেগ স্পিনার খুব একটা খারাপ করেননি। তবে মূল বোলারদের বেশ মার হজম করতে হলো।
ওয়াংখেড়ের উইকেট কেমন, সেটির নমুনা তো শনিবার দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ড ম্যাচেই পাওয়া গেছে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বোলিং গুঁড়িয়ে ৩৯৯ রান তুলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই মাঠে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ওয়ানডে স্কোর। সর্বোচ্চ স্কোরটি ৪৩৮ রানের। দলের নাম? দক্ষিণ আফ্রিকা!
তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের বোলারদের কঠিন পরীক্ষা তো হবেই। তবে মূল দুর্ভাবনা তো ব্যাটিং নিয়ে। উইকেট ব্যাটিং স্বর্গ হলেও তা কাজে লাগানোর স্কিল ও সামর্থ্য তো থাকতে হবে। নেটে ব্যাটসম্যানদের প্রস্তুতিতে সেটিরই প্রভাব দেখা গেল।
অবশ্য ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগেও পুনের নেটে এভাবে ঝড় উঠেছে। কিন্তু ম্যাচে উদ্বোধনী জুটির পর বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল মোটামুটি নিস্তরঙ্গ। এবার আরব সাগরের পাড়ে ওয়াংখেড়েতে রানের ঢেউ তোলার চ্যালেঞ্জ ব্যাটসম্যানদের।