Published : 06 Apr 2023, 09:04 PM
দিনের শুরু ইনিংস পরাজয়ের চোখরাঙানিতে। দিনের শেষে হাতছানি অসাধারণ এক জয়ের! পরাজয়ের দুয়ারে থাকা আইরিশরা এখন চতুর্থ দিনে তাকিয়ে চোখে স্বপ্নের আবির মেখে। আয়ারল্যান্ডের অবিশ্বাস্য এই দিনের নায়ক লর্কান টাকার বলছেন, অভিষেকেই এই সেঞ্চুরি আর ম্যাচের এমন পালাবদল ছাড়িয়ে গেছে তার ভাবনার সীমানা।
দ্বিতীয় দিন শেষ বিকেলে বাংলাদেশের স্পিন ছোবলে স্রেফ ৭ ওভারের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। সেই দলটিই তৃতীয় দিনে পুরো ৯০ ওভার খেলে হারিয়েছে মোটে ৪ উইকেট।
প্রথম ইনিংসে ১৫৫ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়া দল শেষ পর্যন্ত ইনিংস পরাজয় এড়িয়েছে তো বটেই, এমন জায়গায় পৌঁছে গেছে, যেখান থেকে জয়ের ছবিও আঁকা যায়। তৃতীয় দিন শেষে ১৩১ রানে এগিয়ে তারা, উইকেট আছে ২টি।
আইরিশদের অভাবনীয় এই প্রতিরোধের মূল নায়ক লর্কান টাকার। অভিষেকে অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দলকে এনে দিয়েছেন এই গর্বের উপলক্ষ। আইরিশদের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান তিনি। তবে দেশের বাইরে প্রথম সেঞ্চুরি তারই। অভিষেকে বিদেশের মাঠে প্রথম সেঞ্চুরিয়ানও তিনিই।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে স্রেফ ১৪ ম্যাচ খেলে আগে তার ফিফটি ছিল মোটে ২টি। সর্বোচ্চ ইনিংসটি ছিল ৮০ রানের। সেই টাকার অভিষেকেই উপহার দিলেন ১৬২ বলে ১০৮ রানের ইনিংস। অভিষেকে সাতে নেমে সেঞ্চুরি টেস্ট ইতিহাসে ছিল আগে স্রেফ ৮ জনের।
দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বললেন, এই অর্জন ছাড়িয়ে গেছে তার কল্পনাকেও। টেস্ট ক্রিকেটের মজাটাও তারা এখন উপভাগ করছেন দারুণভাবে।
“এটা অবশ্যই বেশ স্পেশাল। এমন কিছু আজকে হতে পারে, ভাবতেও পারিনি। প্রচণ্ড চাপে ছিলাম আমরা। আমাদের ইচ্ছে ছিল কেবল প্রতিটি বল খেলা এবং যতটা লম্বা সময় সম্ভব ব্যাটিং করা। ব্যক্তিগত একটি প্রাপ্তি তো অবশ্যই স্পেশাল, দলও ভালো অবস্থায় এখন।”
“গতকাল থেকে আজকে বিরাট পালাবদল, বলতেই হবে! আমরা ভীষণ চাপের মধ্যে ছিলাম, স্রেফ টিকে থাকার চেষ্টা করছিলাম। তবে এটাই টেস্ট ক্রিকেটে সৌন্দর্য। চলার পথেই আমরা শিখতে থাকি। আমরা উপলব্ধি করেছিলাম যে, উইকেট আঁকড়ে পড়ে থাকতে হবে কিছু সময় এবং এভাবেই সাফল্য পেয়েছি।”
এই ম্যাচের আগে ২ বছর লাল বলের ক্রিকেটে স্বীকৃত কোনো ম্যাচ টাকার খেলেননি। তার সবশেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ ছিল ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের হয়ে এই বাংলাদেশেই। সেই টাকার ব্যাট করেছেন ২২৬ মিনিট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এতটা লম্বা সময় তিনি ক্রিজে কাটাননি আগে কখনোই।
শুধু তিনি নন, এই বাস্তবতা তার দলের প্রায় সবারই। এই ম্যাচে অভিষেকে জোড়া ফিফটি করা হ্যারি টেক্টরের সবশেষ ম্যাচও বাংলাদেশে সেই ম্যাচটি। এই দলের ৬ জনের সবশেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ সেটি।
আটে নেমে ৭১ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকা অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন সবশেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ২০১৯ সালের অগাস্টে। প্রায় চার বছর পর টেস্ট খেলতে নামা দলের সবার জন্য তাই চ্যালেঞ্জ ছিল এই ঘরানার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া।
টাকার বললেন, তারা স্রেফ চেষ্টা করেছেন টেস্ট মানসিকতায় ডুব দিতে। এই ইনিংসের সাফল্য তাদেরকে আশা জোগাচ্ছে ভবিষ্যতের জন্যও।
“এমন একটি আবহে ঢোকার চেষ্টা করতে হয়েছে যেন লম্বা সময় ব্যাটিং করতে পারি। এই গতির ব্যাটিংয়ে আমরা ঠিক অভ্যন্ত নই, বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচ আমরা খুব বেশি খেলিনি। ধীরগতির ব্যাটিং, ডট বল ও মেইডেন ওভারে কিংবা একের পর এক মেইডেনে ভড়কে না যাওয়া, এসবে মানিয়ে নিতে হয়েছে। মন্থর আবহের মানসিকতায় খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছে। প্রচণ্ড গরম ছিল বটে। তবে ওই মানসিকতায় ঢুকে গেলে আবহাওয়ার চ্যালেঞ্জও এড়ানো যায়।”
“আজকে সকালে আমাদের চেষ্টা ছিল একটু সময় নেওয়া এবং সময়ের সঙ্গে বাংলাদেশের বোলাররা ক্লান্ত হয়ে পড়লে রানের গতি একটু একটু করে বাড়ানো। এই পরিকল্পনা আজকে দারুণ কাজে দিয়েছে। সামনে চলার পথেও এই পদ্ধতি আমাদের জন্য পাথেয় হতে পারে।”
সব মিলিয়ে অসাধারণ একটি দিন কাটানোর রোমাঞ্চ তাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে প্রবলভাবে। ২৬ বছর বয়সী ক্রিকেটার সেই ভালোলাগার কথা আলাদা করে বললেন আবারও।
“অসাধারণ একটি দিন ছিল। বাংলাদেশে এটিই আমাদের প্রথম টেস্ট ম্যাচ। আমি ভাবতেও পারিনি এরকম কিছু হতে পারে। কিন্তু যা হয়েছে, আমার জন্য তো বটেই, দলের জন্যও বিশেষ কিছু।”