Published : 24 Sep 2024, 02:51 AM
বেসরকারি অন্তত ৯টি ব্যাংক তীব্র তারল্য সংকটে ভুগছে; যেগুলোর চলতি হিসাবের ঘাটতি ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
এসব ব্যাংকের মধ্যে আলোচিত ব্যবসায়িক গ্রুপ এস আলমের পর্ষদমুক্ত হওয়ার পর সাতটি ঘুরে দাঁড়াতে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা চেয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত পাঁচটি ব্যাংককে নগদ অর্থায়নের জন্য জিম্মাদার (গ্যারান্টার) হতে চুক্তি সই করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আরও দুটি ব্যাংক চুক্তি সইয়ের অপক্ষোয় রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হলে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো অন্যান্য সবল ব্যাংক থেকে ধার নিতে পারবে, যেখানে গ্যারান্টার থাকবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোমবার চলতি হিসাবে তারল্য ঘাটতি থাকার তথ্য প্রকাশ করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, হিসাবটি প্রতিদিনই পরিবর্তন হচ্ছে। তাই ব্যাংকভিত্তিক তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এসব ব্যাংকের সমন্বিত ঘাটতি প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার মত।
কোনো ব্যাংকের চলতি হিসাব ঋণাত্মক থাকলে আরটিজিএস বা বিএসিএইচের (ব্যাচ) মাধ্যমে চেক নিষ্পত্তি করা যায় না। যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘বিশেষ আনুকূল্যে’ এতদিন এস আলমের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকগুলো যে কোনো অঙ্কের চেক অন্য ব্যাংকে জমা দিয়ে নিষ্পত্তি করা হচ্ছিল। তবে গত ১৪ আগস্ট থেকে সেই সুযোগ সীমিত করা হয়।
ওইদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এক নির্দেশনায় ১ কোটি টাকার বেশি চেক নগদায়ন না করতে সব ব্যাংকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে এসব ব্যাংক বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণ করতে পারছে না। ব্যাংকটির হাতে থাকা সব উপকরণ বন্ধক রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে ফেলেছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা অন্য ব্যাংক থেকে ধারদেনা করার কোনো উপকরণ এসব ব্যাংকের হাতে নেই।
তারা বলছেন, আবার সিআরআর ও এসএলআর ঘাটতি হলে যে জরিমানা দিতে হয়, তাও পরিশোধের সুযোগ নেই। অথচ ঋণ বিতরণ বন্ধের নির্দেশ না দিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে আগের সরকারের সময়ে চলতি হিসাবে ঋণাত্মক থাকার পরও ব্যাংকগুলোকে লেনদেনের সুযোগ দিয়ে আসছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এস আলমের নিয়ন্ত্রণাধীন সাতটিসহ মোট ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নামে-বেনামে এসব ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ বের করে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে সংকটে পড়া এসব ব্যাংকের মধ্যে ইতোমধ্যে পাঁচটি ব্যাংককে গ্যারান্টি দিতে চুক্তি সই করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রোববার সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের এ সংক্রান্ত চুক্তি হয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার। আর গত বৃহস্পতিবার চুক্তি হয় ন্যাশনাল ব্যাংকের সঙ্গে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, যেসব ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, তারা এখন আন্তঃব্যাংক বাজার থেকে তহবিল সংগ্রহ করে বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে গ্যারান্টির জন্য পাঠাবে। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্যারান্টির আওতায় কোন ব্যাংক কত টাকা নিতে পারবে তা বিবেচনা করে অনুমতি দেবে।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগের মতো টাকা ছাপিয়ে তারল্য সহায়তা দেবে না। তবে ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক মুদ্রা সরবরাহের মাধ্যমে এ সহায়তা নিতে পারে। এমন বক্তব্যের পর অন্তত ৭টি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির জন্য আবেদন করে।
আরও পড়ুন