Published : 09 Jul 2024, 12:01 AM
রপ্তানি ও তার বিপরীতে আসা অর্থের হিসাব পদ্ধতির গড়মিলের আলোচনার মধ্যে এক বৈঠকে একই রপ্তানি তথ্য ব্যবহার করতে একমত হয়েছে সরকারি ছয় সংস্থা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে এখন থেকে রপ্তানি তথ্য চূড়ান্ত করবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো- ইপিবি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস ও সরকারি অন্যান্য সংস্থা রপ্তানি তথ্য প্রকাশ করার আগে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নেবে।
এজন্য ইপিবির তথ্য সংগ্রহে আধুনিকায়ন, সবার জন্য একই ডেটা সেন্টার তৈরি ও একই বিনিময় হার ব্যবহার করতে চায় তারা।
বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত বৈঠকেও বিষয়টি তুলে ধরতে চায় সরকারি সংস্থাগুলো। সেখান থেকে অনুমতি পেলে নতুন হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী রপ্তানি তথ্য ঠিক করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠকে অংশ নেয়া এক সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত দুই অর্থবছরের তথ্য সংশোধন করার প্রস্তাবে একমত হয়েছে সবাই। এখন সরকার অনুমোদন দিলেই তা প্রকাশ করবে ইপিবি।”
সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ইপিবি কার্যালয়ে বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস, ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ও বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট-বিএফটিআই কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে ইপিবি ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘যা হয়েছে, হয়েছে। এখন সবাই ওনারশিপটা নেন, সবাইকে এখন একত্রে কাজ করতে হবে।’’
বর্তমানে এনবিআর থেকে রপ্তানি তথ্য সংগ্রহ করে ইপিবি ও বিবিএস প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পদ্ধতিগত ভিন্নতায় দুই সংস্থার রপ্তানি তথ্যেও তফাত থাকছে।
এখন থেকে এনবিআর রপ্তানি সংক্রান্ত সব তথ্য জানিয়ে দিলেও প্রকৃত রপ্তানি অর্থাৎ দেশের বাইরে কতটুকু গেল তা যাচাই-বাছাই করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঠিক করা তথ্য সবাই ব্যবহার করবে ইপিবি।
রপ্তানি পণ্যের মূল্য এবং তার বিপরীতে দেশে আসা রপ্তানি আয়ের ব্যবধান দীর্ঘদিন ধরে বাড়ছে। সবশেষ গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১০ মাসে ইপিবির তথ্য অনুযায়ী রপ্তানি হয় ৪৭ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা।
আর বাংলাদেশ ব্যাংকে এই সময়ে রপ্তানি আয় আসে ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারের। তাতে ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ১৪ বিলিয়ন ডলারের ব্যবধান থাকছে।
এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য সমন্বয়ের পর তা উসকে দিয়েছে নানা আলোচনা; বাংলাদেশের রপ্তানি আয় আসলে কত সেই প্রশ্নও সামনে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, রপ্তানি তথ্য রিকনসিলিয়েশন (সমন্বয়) ও সংশোধন করে দিয়েছে এনবিআর।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, রপ্তানির পরিমাণ বেশি দেখানো হয়েছে। তবে ইপিবি বলছে, এনবিআর যে তথ্য দেয়, সেটিই তারা সরবরাহ করে।
বাংলাদেশে ব্যাংকের সমন্বয়ের পর নতুন হিসাবে প্রকৃত রপ্তানি আয় কত দাঁড়াচ্ছে, তা এখনও প্রকাশ করেনি কোনো সংস্থা। এ নিয়ে নতুন কোনো তথ্যও দেওয়া হচ্ছে না। কবে তা জানা যাবে, সেটিও কেউ বলছেন না।
এমন প্রেক্ষাপটে সব সরকারি সংস্থা রপ্তানির একই তথ্য ব্যবহার করতে বৈঠকে বসে। দেশের রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ইপিবি। এ সংস্থার তথ্যকে উৎস হিসেবে দেখিয়ে রপ্তানি আয়ের তথ্য বিভিন্ন প্রতিবেদনে প্রকাশ করে আসছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল আলম টিটুও বলতে পারছেন না, প্রকৃত রপ্তানি আয় আসলে কত। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক সমন্বয় করেছে, তারাই বলবে।”
রপ্তানি অনুযায়ী দেশে অর্থ আসছে না– এমন বিতর্কের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিওপি প্রতিবেদনে বলা হয়, জাহাজীকরণ করা রপ্তানি পণ্যের তথ্য সংশোধনের পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) স্বীকৃত বিপিএম৬ পদ্ধতিতে স্থানীয় পর্যায়ে বিক্রি ও সিএমটি (কাটিং, মেকিং অ্যান্ড ট্রিমিং) হিসাব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতেই প্রকৃত রপ্তানি কমে যাওয়ায় চলতি হিসাব, সার্বিক ভারসাম্য ও আর্থিক হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে বড় পরিবর্তন আসে।
নতুন হিসাবের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক মানে হিসাব শুরু করায় রপ্তানি আয় কমে আসার যে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল তা অবসানের পাশাপাশি রপ্তানি ও রপ্তানি আয়ের মধ্যে থাকা ব্যবধান কমে আসবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক রপ্তানি আয়ের তথ্য সংরক্ষণ করে। এখন থেকে দেশের বাইরে প্রকৃত রপ্তানি কত হল শুধু তাই ধরবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বিপরীতে রপ্তানি আয় বিবেচনায় নেওয়া হবে।’’
‘‘নতুন পদ্ধতিতে রপ্তানি ও আয়ের মধ্যে থাকা ব্যবধান কমে আসবে।’’