Published : 28 Jan 2024, 11:14 AM
ভারতীয় নির্মাতা মৃণাল সেনের ‘পালান’ সিনেমার অভিনেত্রী শ্রীলা মজুমদার মারা গেছেন।
ক্যান্সারের সঙ্গে টানা তিন বছর লড়াই করে শনিবার মারা যান এই অভিনেত্রী। তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
আনন্দবাজার লিখেছে, এই অভিনেত্রীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন কলকাতার অভিনেতা, সংগীত শিল্পী অঞ্জন দত্ত, নির্মাতা কৌশিক গাঙ্গুলি, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তসহ তার আরও অনেক সহকর্মী।
কয়েক বছর ধরে ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারে ভুগছিলের শ্রীলা। চলতি মাসে শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হলে এই অভিনেত্রীকে কিছুদিন কলকাতার টাটা ক্যানসার সেন্টারে ভর্তি করা হয়। তারপর শ্রীলাকে বাড়িতেও নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানেই তিনি মারা যান।
১৯৮০ সালে মৃণাল সেনের ‘পরশুরাম’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে হাতেখড়ি হয় শ্রীলার। তারপর ‘এক দিন প্রতি দিন’, ‘আকালের সন্ধানে’, ‘খারিজ’ এর মত সিনেমায় তিনি অভিনয় করেন।
কলকাতার বাইরে বলিউডি নির্মাতা শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় কাজ করেছেন ‘আরহণ’, ‘মান্ডির’ মতো সিনেমায়। ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘চোখের বালি’ সিনেমায় ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের কণ্ঠ দিয়েছিলেন তিনি। বড় পর্দার পাশাপাশি মঞ্চেরও একজন নামি শিল্পী ছিলেন শ্রীলা। কাজ করেছেন বাণিজ্যিক ধারার সিনেমা এবং টেলিভিশন সিরিয়ালেও।
তবে কয়েক বছর ধরে অসুস্থতার কারণে কাজ কমিয়ে দিয়েছিলেন। এই অভিনেত্রীর শেষ কাজ ‘পালান’।
আশির দশকের শুরুতে ‘খারিজ’ সিনেমা দিয়ে নির্মাতা মৃণাল সেন ছুঁয়েছিলেন দর্শক মন, জিতেছিলেন আন্তর্জাতিক পুরস্কার। সেই সিনেমার নতুন রূপায়ন হল ‘পালান’।
পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলি গেল বছরে মৃণাল সেনের জন্মশতবর্ষে তাকে উৎসর্গ করে নির্মাণ করেন ‘পালান’। তাতে শ্রীলাসহ ‘খারিজ’ এর অঞ্জন দত্ত এবং মমতা শঙ্করকে নিয়ে আসেন কৌশিক।
শ্রীলাকে স্মরণ করে কৌশিক বলেন, “পালানে শ্রীলাদিকে পাওয়া, সেটা আমার সৌভাগ্য বলা যায়। ক্যামেরার পিছনে বসে শ্রীলাদির অভিনয় দেখতাম। আর বিভোর হয়ে থাকতাম। এখন একদম ভালো লাগছে না।“
কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল, সেই প্রশ্নে কৌশিক বলেন, “শ্রীলাদি যে অসুস্থ সেটা আমরা জানতামই না। তিনি নিজেও কখনও জানতে দেননি। শরীরে একটা সমস্যা ছিল। সেটা বুঝতে পারতাম। মনে হত, তিনি আর আগের মত সচল নেই। কোথাও একটা কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সৌজন্য দেখিয়ে কখনো জিজ্ঞেস করিনি। আর উনিও নিজে থেকে কিছু বলেননি। তবু মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করেছেন। কখনও বিশ্রাম চাননি। বাকি সবার সঙ্গে একটানা কাজ করে গেছেন।“
শ্রীলার মৃত্যুর খবরে ‘ভেঙে পড়েছেন’ জানিয়ে অভিনেতা অঞ্জন বলেন, “‘ভালো অভিনেতা খুঁজে আনার ব্যাপারে খ্যাপামির পর্যায়ে আগ্রহ ছিল মৃণাল সেনের। তিনি শ্রীলাকে পরিচয় করিয়ে দেন দর্শকদের সঙ্গে। ভারতীয় পর্দায় ঝড় তুলেছিল শ্রীলা।
“মারণরোগের সঙ্গে লড়াই নিয়ে শ্রীলা কখনও আমাকে বলেনি। এই লড়াই করার জন্য আমি ওর সাহসের প্রশংসা করি। আমি শ্রীলাকে স্যালুট করি, ওর বিরল সাহসিকতার জন্য। “
স্মৃতি হাতড়ে ঋতুপর্ণা বলেন, “সঙ্কটে দিদি (শ্রীলা) সব সময় বলতেন, তুই এগিয়ে যা। থামবি না। এই কথাগুলো আমায় ভীষণ শক্তি জোগাত। আমি ভাবতে পারছি না যে, দিদি এই কথাগুলো আর আমায় বলবেন না।“