Published : 18 Dec 2023, 10:45 PM
রূপালি পর্দার নায়ককে দেখে ছুটে এল দুই কিশোর। চায়ের দোকানে কাজ করে দুজনই। এখনও ভোট দেওয়ার বয়স হয়নি। তবু ভোটের মাঠে নায়কের দেখা পেয়ে উচ্ছ্বসিত। সেলফি তুলল। ফেরদৌসও হাসিমুখে সাড়া দিলেন।
সোমবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচার শুরুর প্রথম দিন এ চিত্র দেখা গেল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের আইয়ুব আলী কলোনিতে। এ দিন বিকালে এ ওয়ার্ডের বিজিবি ৩ নম্বর গেইটের সামনে থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের নায়ক ফেরদৌস আহমেদ।
প্রচারের পুরোটা সময় আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে রূপালি পর্দার এই নায়ককে ঘিরে। ফেরদৌসও মিশেছেন সাধারণ মানুষের ভিড়ে।
এ চিত্রনায়ক আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ভোট করছেন ঢাকা-১০ আসনে। ধানমন্ডি, নিউ মার্কেট, কলাবাগান, হাজারীবাগ এলাকা নিয়ে গঠিত এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে প্রথমবার সংসদ নির্বাচনে নাম লিখিয়েছেন তিনি।
আসনটিতে জমা পড়া ১১টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে আটটিই বাতিল হয়েছে বাছাইপর্বে এবং শেষ পর্যন্ত ফেরদৌসের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে টিকে আছেন জাকের পার্টির হুমায়ুন কবীর ও জাতীয় পার্টির হাজী মো. শাহজাহান।
তবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের হালকাভাবে নিচ্ছেন না- এমনটা শুধু মুখেই বলেননি, প্রচারেও প্রমাণ করেছেন ফেরদৌস। রিকশা চালক থেকে শুরু করে পথচারীদের হাতে লিফলেট তুলে দেন এ সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী।
প্রচারণা শুরুর আগে ৩ নম্বর গেইটের সামনের ফুটপাতে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন ফেরদৌস।
“আজ আমার জীবনের বিশেষ একটি দিন। কারণ আজ সকালে আমি সেই কাঙ্ক্ষিত নৌকা প্রতীকটি পেয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই, তিনি আমাকে মনোনয়ন দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের শিল্পীদের সম্মান জানিয়েছেন। তার এই ভালোবাসার প্রতিদান, তার চেয়ে ডাবল-ট্রিপল করে ফিরিয়ে দিতে চাই। সেটা সম্ভব শুধুমাত্র নৌকার বিশাল বিজয়ের মাধ্যমে।"
গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতে এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ঢাকা ও কলকাতার ছবির এই অভিনেতা বলেন, “আমি চেষ্টা করব, সবাইকে নৌকার উন্নয়নের কথা শোনাতে; যাতে করে সবাই ৭ তারিখে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেয়। ভোট আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।
“দেশে গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখার জন্য ভোট যে কতটা ইম্পোর্টেন্ট, সেটাই বোঝাব। বিশেষ করে নবীন যারা, তাদের প্রথম ভোট যেন হয় মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির পক্ষে। আমরা এর মাধ্যমে যেন দেশে সত্য-ন্যায়-নিষ্ঠা স্থাপন করতে পারি।"
পরে ফেরদৌস স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে স্বর্ণপট্টি, আইয়ুব আলী কলোনি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল, শহীদ শাহনেওয়াজ ছাত্রাবাস এবং নিউ মার্কেট এলাকায় গণসংযোগ করেন।
স্বর্ণপট্টিতে প্রবেশ করে একটি বাসার ভেতরেও যান এ চিত্রনায়ক। সাধারণ মানুষও তাকে জড়িয়ে ধরেন মমতায়। এক বৃদ্ধাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে ফেরদৌস দোয়া চান। আশেপাশের দোকান থেকেও অনেকে বেরিয়ে এসে রূপালি পর্দার এ তারকাকে দেখতে ভিড় করে।
আর পুরো এলাকায় ‘নৌকা' স্লোগানে প্রকম্পিত করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা।
সকালে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর বিকাল থেকেই ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে ভোটের প্রচারণায় নামেন এই চিত্রনায়ক।
স্বর্ণপট্টি থেকে বেরিয়ে ফেরদৌস যান বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে, ফটকে তাকে স্বাগত জানান হলের ছাত্রলীগের কর্মীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ফেরদৌস বলেন, “এই এলাকা আমার অনেক চেনা জায়গা। ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা আমার ভীষণ আপন জায়গা।"
ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের পাশেই কুয়েত মৈত্রী হলের গেইটেও গণসংযোগ করেন তিনি। পরে আইয়ুব আলী কলোনিতে প্রবেশ করেন ফেরদৌস।
এ সময় কলোনির গলির একটি চায়ের দোকানে 'নৌকা মার্কায় ভোট দিন' শিরোনামের একটি গানও উচ্চস্বরে বাজতে শোনা যায়।
সামিন স্টল নামের দোকানটির মালিক মোহাম্মদ সেলিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দলীয় কোনো পদে নাই, তবে আওয়ামী লীগ করি। আমার বাড়ি ভোলা, সেখানেই ভোট দিমু। ভোটের এক সপ্তাহ আগেই যামুগা ভোট দিতে।
“যাওয়ার আগে সবাইরে কইয়া যামু ফেরদৌস ভাইরে ভোট দেওনের কথা।"
এ দোকানেই চা খাচ্ছিলেন শামীম, তার বাড়িও ভোলা বলে জানালেন। ফেরদৌসকে প্রার্থী হিসেবে কি যোগ্য মনে করেন? শামীমের উত্তর, “শিল্পী মানুষ। শিল্পীদের মন তো একটু নরম থাকে। ভালাই হইব মনে লয়।"
কলোনির সামনের ফুটপাতে পিঠা বিক্রি করছিলেন ৮০ বছর বয়সী হাশিম বেপারী। অনেক বছর ধরেই কলোনিতে থাকেন তিনি।
হাশিম বললেন, “আর কয়দিন বাঁচমু, জানি না। ভোট দিতে যামু। এটাই মনে হয় আমার শেষ ভোট।"
এরপর ফেরদৌস যান শহীদ শাহনেওয়াজ ছাত্রাবাসে। সেখানে অল্প সময় থেকেই নিউ মার্কেটে প্রবেশ করেন। সেখানে শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা তাকে নিয়ে মিছিলে প্রকম্পিত করে এলাকা। মার্কেটের বিভিন্ন দোকানের কর্মীরাও ভিড় করেন চিত্রনায়ক ফেরদৌসকে দেখতে। এতে মার্কেটে আসা অনেককে ভোগান্তিতেও পড়তে হয়।
ফেরদৌসের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, নিউ মার্কেট থেকে বেরিয়ে তিনি ধানমন্ডি এলাকায় প্রচারণা চালাবেন। মধ্যরাত পর্যন্ত প্রচারণায় ব্যস্ত থাকবেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আজ থেকে যে প্রচারণা শুরু করেছি তা নির্বাচনি নিয়ম মেনে টানা চলবে। চেষ্টা করব ভোটারদের যতটা কাছে যাওয়া যায়। আমার বিশ্বাস সবাই আমাকে ভালোবাসেন, তারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করবেন।"