Published : 01 Jan 2024, 04:21 PM
বিধিনিষেধের কড়াকড়ির মধ্যেই আতশবাজির বর্ণিল আলো আর কানফাটানো আওয়াজে খ্রিষ্টীয় নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে ঢাকার মানুষ। এতে শব্দদূষণের কথা জানিয়ে বিরক্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। ক্ষোভ প্রকাশ করে সোশাল মিডিয়ায় দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
সোমবার ফেইসবুক পোস্টে নিজেকে আনন্দ উৎসব আয়োজনের ‘বিরোধী মানুষ নয়’ দাবি করে ফারুকী এ ধরনের উদযাপন নিয়ে কিছু পরামর্শ রেখেছেন। তুলে ধরেছেন উদযাপনের ধাক্কায় মধ্যরাতে নিজের শিশু কন্যার দুর্দশার কথাও।
‘ওকে, আই হ্যাভ অ্যা সাজেশন’ দিয়ে শুরু করা কথায় ফারুকী বলেন, “উৎসব যেহেতু থাকবে, আবার এই শহরে ছোট শিশু-বয়স্ক মানুষ-রোগী-পশু-পাখীদেরও থাকতে হবে, তাহলে একটা উপায় বের করা যায়?
“পুরা শহরটাকে যুদ্ধক্ষেত্র না বানায়ে শহরের তিনটা জায়গা নির্দিষ্ট করে দেয়া যায়? যেখানে উৎসব করার জন্য মানুষ জড়ো হবে। আমাদের এখানে তো আর সিডনি হারবার ব্রিজের মতো কোনো জায়গা নাই। আমাদের সব জায়গাইতো আবাসিক। সেই জন্য জায়গার পাশাপাশি সময়টাও বেঁধে দেয়া দরকার!”
খ্রিষ্টীয় বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে গত কয়েকবছর ধরেই বাজি-পটকা এবং ফানুসের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে ডিএমপি। তবে প্রতিবছরের মত এবারও নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে ঢাকাবাসী বাজি আর পটকার সঙ্গে ফানুস উড়িয়ে স্বাগত জানিয়েছেন নতুন বছরকে। ঘড়ির কাঁটা ১২টার ঘরে যাওয়ার ঠিক আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় আনন্দ আয়োজন; স্বল্প সময়ের জন্য রাতের নিরবতা ভেঙে চারিদিক হয়ে ওঠে বর্ণিল, শব্দে কেঁপে ওঠে শীতের রাতের ঢাকা। আকাশে ভাসে অসংখ্য ফানুসে। আতশবাজির আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছে ঢাকার শীতের আকাশ।
রাতের এই ধরনের পরিস্থিতিকে ‘বিভৎস তাণ্ডব’ বর্ণনা করে ফারুকী বলেন, “উচ্চশব্দ হয় এমন কোনো কিছু করলে এই বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে করতে হবে। তাতে করে নির্দিষ্ট করে দেয়া জায়গাগুলার আশেপাশের ভবনের মানুষেরা জানবে কোন সময়টাতে এরকম শব্দ হতে পারে এবং সেই অনুযায়ী একটা প্রস্তুতি রাখতে পারে। কালকে রাতে যেমন দুইটার পরেও চলছে এই বিভৎস তান্ডব!
আনন্দ-উৎসবের ‘বিরুদ্ধে তিনি নন’ জানিয়ে ফারুকী বলেন, “কিন্তু ভাইয়েরা একটা কথা বলি। আমরা যখন কোনো ছাদে দাঁড়াই, আমরা কিন্তু সেখান থেকে একটা আস্ত ইট নিয়ে বাইরের দিকে ছুঁড়ে মারি না! কারণ আমরা চিন্তা করি নীচে দিয়ে হেঁটে যাওয়া কারো না কারো মাথায় এটা পড়তে পারে, একটা অ্যাকসিডেন্ট হতে পারে। এই যে আমরা এটা ভাবি, এটাই সভ্য মানুষের বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত।
“আমার কোনো কাজে অন্যের ক্ষতি হতে পারে কিনা, এইটা ভাবা মানুষের বেসিক জিনিস হওয়া উচিত। সবার নতুন বছর আনন্দের হোক, এমনকি যারা কালকে আমার মেয়েকে আতংকের উপর রাখছিলেন, তাঁদেরও!”
এর আগে রাত দুটার সময় একটি পোস্টে ফারুকী বলেন, “ঘুমন্ত সন্তান যখন কেঁপে কেঁপে ওঠে, তখন পিতা কেবল অভিশাপই দিতে পারে।”
কিছুদিন আগে মুক্তি পাওয়া ফারুকীর ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ সিনেমার কাহিনী আবর্তিত হয়েছে, ‘থার্টি ফাস্ট নাইটে’ আতশবাজি ও পটকা ফাটানোর বিরুদ্ধে এক চলচ্চিত্রকারের প্রতিবাদের গল্প নিয়ে। ওই সিনেমায় পরিচালকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ফারুকী, যা তার ক্যারিয়ারের প্রথম অভিনয়। এই সিনেমায় ফারুকী তার নিজের জীবনের গল্প বলেছেন।
ঢাকায় ফানুস উড়ল, বাজিও পুড়ল, শুধু নীরব থাকল টিএসসি
মেট্রোরেলের তারে আটকে ছিল বর্ষবরণের ৩৮ ফানুস