Published : 13 Jun 2025, 09:09 AM
প্রতিদিন নানান রকম অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া কারণে পারকিনসন’স রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে দ্বিগুন।
সাম্প্রতিক গবেষণায় এমনটাই দাবি করছেন গবেষকরা।
“আমাদের গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, অতিরিক্ত পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত খাবার, যেমন- চিনিযুক্ত সোডা পানীয় ও মোড়কজাত নানান ধরনের নাস্তা খাওয়ার ফলে পারকিনসন’স রোগের লক্ষণ আগেভাগেই দেখা দিতে পারে”- সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এভাবেই মতামত দেন গবেষক ডা. ক্সিয়ান জাও।
চীনের শাংহাই’তে অবস্থিত ‘ফুডান ইউনিভার্সিটি’র এই বিশিষ্ট অধ্যাপক এবং পুষ্টি বিভাগের ডিন আরও বলেন, “আমাদের তথ্য প্রমাণ থেকে বলতে পারি খাদ্যাভ্যাস হয়ত পারকিনসন’স রোগ হওয়াতে ভূমিকা রাখে।”
যদিও লন্ডনের ‘কিং’স কলেজ’য়ের স্নায়ুবিজ্ঞানের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ডা. ড্যানিয়েল ভ্যান ওয়ামেলেন মন্তব্য করেন, “যদিও দেখা গেছে যারা বেশি প্রক্রিয়াজাত খাবার খায় তাদের পারকিনসন’স রোগের লক্ষণ আগেভাগেই দেখা দিয়েছে। তবে এই রোগের ঝুঁকি তৈরি হওয়ার বিষয়ে সরাসরি কোনো যোগাযোগ পাওয়া যায়নি।”
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা হোক খাবার টেবিল থেকেই
যুক্তরাষ্ট্রের ‘নার্সেস’ হেল্থ স্টাডি’ এবং ‘হেল্থ প্রফেশনালস ফলোআপ স্টাডি’র প্রায় এক যুগ ধরে সংগ্রহ করা ৪৩ হাজার অংশগ্রহণকারীর তথ্য নিয়ে এই পর্যবেক্ষণ চালানো হয়।
যাদের গড় বয়স ছিল ৪৮ বছর। আর গবেষণার শুরুতে তাদের পারকিনসন’স রোগ ছিল না।
প্রতি বছর কী খাওয়া হয়েছে সেসব তথ্য অংশগ্রহণকারীরাই প্রদান করতো। এক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা হল, অংশগ্রহণকারীরা হয়ত সব খাবারের নাম ঠিক মতো মনে করে দিতে পারেনি।
গবেষণায় অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার বলতে বোঝানো হয়েছে- কৃত্রিম মিষ্টি বা চিনিযুক্ত মিষ্টি পানীয়, সস, চাটনি, আচার, মোড়কজাত মিষ্টি খাবার, মিষ্টি দই বা দুগ্ধজাত মিষ্টি, রুটি, সিরিয়াল এবং প্যাকেটজাত মসলাদার মজার খাবার।
গবেষণায় দেখা গেছে- রুটি ও সিরিয়াল বাদে বাকি সব অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে পারকিনসন’স রোগ হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিযেছে।
এটা হওয়া অন্যতম কারণ হতে পারে, প্রক্রিয়াজাত খাবারে আঁশ, প্রোটিন ও খাদ্যগুণ থাকে না বললেই চলে। বরং থাকে আলাদা যুক্ত করা চিনি, লবণ, স্যাচুরেইটেড বা ট্রান্স ফ্যাটস।
আর অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবার হজমতন্ত্রে থাকা ‘ফ্লোরা’ বা অনুজীবের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে। ফলে বাড়ে প্রদাহ, ‘ফ্রি র্যাডিকেলস’ এবং স্নায়ুর মৃত্যু- বলা হয়ে গবেষণায়।
প্রাথমিক লক্ষণ নড়াচড়ার বন্ধ হওয়ার আগেই দেখা দিতে পারে
‘নিউরোলজি’ সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণায় রোগের প্রাথমিক সময় পর্যবেক্ষণ করে গবেষকরা দেখতে পান, পারকিনসন’স রোগের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ- হাত-পা কাঁপা, পেশির অসাড়তা, হাঁটা-চলায় ধীর গতি এবং ভঙ্গী পরিবর্তন হওয়ার বছর খানেক বা এক যুগ আগ থেকেই প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘পারকিনসন’স ফাউন্ডেশন’য়ের তথ্যানুসারে এসব প্রাথমিক লক্ষণের মধ্যে রয়েছে- শরীরে ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বিষণ্নতা, গন্ধ নেওয়া বা রং দেখাতে পরিবর্তন।
এছাড়া গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, অতি মাত্রায় ঘুমের সমস্যাও হতে পারে এই রোগ হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ।
তিন বেলা খাওয়ার তুলনায় যারা দিনে এগারো বার অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ করেন তাদের পারকিনসন’স রোগ হওয়ার সম্ভাবনা তিন থেকে আড়াই গুন বেশি।
এই একবার বা এক সার্ভিং খাবারের মধ্যে আছে আট আউন্স পরিমাণ ডায়েট বা মিষ্টি সোডা পানীয়, একটি হট ডগ, একটি কেকের টুকরা, এক টেবিল-চামচ সস বা কেচাপ, এক আউন্স আলুর চিপস (সাধারণ মাপের প্যাকেটে মোটামুটি দেড় আউন্স পরিমাণ আলু চিপস থাকে)।
ডা. জাও বলেন, “পারকিনসন’স অনিরাময় যোগ্য রোগ। আগের ও বর্তমানের গবেষণায় আমরা দেখেছি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক কর্মকাণ্ড এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি ধীর করতে পারে।”
তাই প্রক্রিয়াজাত খাবার কমিয়ে বেছে নিতে হবে পূর্ণ শষ্য ও পুষ্টিকর খাবার। আর এতেই ভালো থাকবে মস্তিষ্ক।
আরও পড়ুন