Published : 02 May 2022, 04:43 AM
মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য ছন্দ রাজনীতি, যাতে স্পন্দিত হয় জীবন-ব্যবস্থা। সভ্যতার ইতিহাসের শুরু থেকেই স্বাধীন জাতিসত্তা বা রাষ্ট্রের জন্মের সাথে যুক্ত রয়েছে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা। যেমনভাবে মানবজীবনের চলনবিধিও রাজনীতি দ্বারা বিভাজ্য। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মও এই ধারাবাহিকতার ব্যতিক্রম নয়। স্বাধীনতা প্রাপ্তির অকৃত্রিম ও অদম্য বাসনা বাঙালিদেরকে দিয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, করেছে বাংলাদেশি। এই স্বাধীনতা প্রাপ্তিতে যুক্ত অসংখ্য বিষয়াদির মতই বৃহদার্থে যুক্ত রাজনীতি। সেটা স্বাভাবিকভাবেই আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক।
আর এই স্বাধীন বাংলার রাজনীতিতে একটি আদর্শিক গোষ্ঠীর নাম অবিচ্ছেদ্য, যার নাম 'বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ'। শত মতবিরোধের পরেও এটি একটি বটবৃক্ষ। এই বটবৃক্ষকে ঘিরেই এগিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। শত প্রতিকূলতার পরেও বাংলাদেশ প্রাপ্ত বয়সে অগ্রসরমান হয়ে চলেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরেই। আর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চলেছে বক্র পথে চলমানতার সংগ্রামের মাঝ দিয়েই। শত প্রতিকূলতার মাঝেও দূর্গম পথ চলার এই প্রলয়ের মাঝেও চলমানতাই ছিল ছন্দ, ছিল তারুণ্য। তারুণ্য সে এক ভিন্ন ছন্দ, বিস্ময়কর স্বাদ এর বিস্ময়কর শক্তি। যেই তারুণ্যের শক্তি তার আলোর স্ফূলিঙ্গ দেখিয়ে চলেছে সভ্যতার আদি থেকেই। বাংলাদেশেও বৃহৎ স্বার্থে তারুণ্যের স্ফূলিঙ্গ তার ঝলকানি দেখিয়েছে অজস্রবার। শুরু সেই স্বপ্নের শুরু থেকেই, আর বৃহৎ প্রাপ্তি আজকের স্বাধীনতা।
ফিরে যাই পিছুপথে, রাজনীতি, স্বাধীনতা, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, তারুণ্য আর তারুণ্যের ছাত্রলীগ। এই সেই ছাত্রলীগ যার জন্ম হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ জন্মের ব্রত নিয়ে। বহুপথ হেঁটে চলছে এই এক তারুণ্যের সংগঠন। বাংলাদেশ জন্মের পরিক্রমার অংশ এক সংগঠন। সৃষ্টিশীলতার এক সংগঠন। এর প্রবাহ ধারার শেকড় প্রোথিত সময়ের গভীরে। শৃঙ্খলাবদ্ধতা আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার এক বৃহৎ সংগঠন। তবে সময়ের পালাবদলে একান্ত ব্যাক্তিগত ও সামাজিক অসংলগ্নতার দায়ও বোঝা হিসেবে চেপেছে তারুণ্যের এই সংগঠনের উপর, অনেক ক্ষেত্রেই হয়েছে চাপানো।
তারুণ্যের ধরনও আজ বহু বিবর্তনের মাঝ দিয়ে ভিন্ন রুপে আবির্ভূত হয়েছে। তারুণ্যের গভীরে বিদ্যমান চিন্তাশীলতাও পেয়েছে পরিবর্তিত রুপ। এই চিন্তাশীলতার পরিবর্তনের পরিক্রমায় বদলেছে প্রজন্ম। আজ এক নবপ্রজন্ম। যার চিন্তাশীলতার গহীন অনেক পরিবর্তিত। যাদের জীবন, জীবনের মৌলিক চর্চা থেকে বিচ্যুত। জ্ঞানের প্রকৃত চর্চায় তারা বিমুখ। মুখস্ত নির্ভর শিক্ষার সাথে প্রকৃত শিক্ষার অর্থের পার্থক্যকরণে তারা পথভ্রষ্ঠ হয়েছে। তাই নৈতিকতার পথ থেকেও তারা দিকভ্রান্ত।
আগেই বলেছিলাম তারুণ্যের চিন্তাশীলতার পরিবর্তিত প্রভাবও দানা বেঁধেছে তারুণ্যে। কারণ তারা প্রকৃত জ্ঞান বিমুখ। তারা বিস্তৃত জ্ঞানের পথ থেকে দূরে কারণ পুস্তকের সাথে দূরত্ব, পঠন অভ্যাসের ঘাটতি। তাই তাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা ছাত্রত্ব নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ফলে তাদের জীবনমুখিতার, মানবনতাবোধের ঘাটতি ও ঘটছে। কারণ তারা প্রকৃত জ্ঞানার্জনের থেকে দূরে অবস্থান করছে। ফলে সাধারণ ছাত্রদের মাঝে তথা তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশই তৈরি হচ্ছে জ্ঞানবিমুখতার মাঝ দিয়ে এবং স্বাভাবিকভাবেই এটি ছাত্র রাজনীতিকেও প্রভাবিত করছে। কারণ তরুণ প্রজন্মের পথচলাতেই যেখানে ব্যাপক অর্থে জ্ঞান বিমুখতা ও প্রকৃত জীবনবোধের অভাব সেখানে ছাত্র সংগঠনের অকৃত্রিম চেষ্টার পরও অনেক ক্ষেত্রেই মানসম্মত, জীবনমুখী কর্মীদের অভাব দেখা হচ্ছে।
আবার সার্বজনীনভাবেই এখনও এর বিপরীতে প্রকৃত জ্ঞানের অনুসারীরা তাদের জীবনাভ্যাসের ফলে জীবনমুখোমুখিতার, মানবনতাবোধের নিদর্শন তৈরি করে চলেছে। একইভাবে এর অস্তিত্বও ছাত্র রাজনীতিতে বিদ্যমান। কিন্তু ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের বা ভুলের মাসুলও দিতে হয় ছাত্র সংগঠনকে। বর্তমানের ছাত্র রাজনীতিতেও দেখা যাচ্ছে সাধারণ ছাত্রদের মাঝে কতিপয়ের একান্ত নিজস্ব বিবেচনাবোধের অভাবে সৃষ্ট অপকর্মের দ্বায়ভার গোষ্ঠীগত কৌশলে ছাত্র সংগঠনের নামে অপপ্রচার করা হচ্ছে। ফলে এর দ্বারা রাজনীতির চিরাচরিতরূপই তারুণ্যের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে।
তবে বিপরীতে দাঁড়িয়ে চিরাচরিত জ্ঞানানুসন্ধানী ছাত্র রাজনীতিকরা করে চলেছে অসংখ্য মানবতাবাদী ও সামাজিক উন্নয়নমুখী কাজ। যা সামষ্টিক দিকভ্রান্ত তারুণ্যের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আশাজাগানিয়া স্বপ্নিল বাংলাদেশের পথ দেখায়। আর তাই প্রতিনিয়ত তরুণ প্রজন্মকে বইপ্রেমী তথা জ্ঞানপিপাসু মানুষে পরিণত করার বিকল্প নেই; যা তারুণ্যের তথাকথিত জীবন ধারা বদলে প্রজন্মকে করবে জীবনমুখী এবং জীবনের প্রকৃত গতিপথে ধাবিত করে মানবের মৌলিক জীবনাভ্যাসে প্রকৃত জ্ঞানার্জনের চেতনাকে লালন করে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে জ্ঞানার্জনের অকৃত্রিম অভ্যাসে। সর্বোপরি, তরুণ প্রজন্মের বিবেচনাবোধের গভীরতা ও বোধগম্যতাকেই শাণিত করবে।