Published : 30 Jun 2025, 09:42 PM
ঢাকার বিজয় সরণিতে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ এর আশপাশের স্থাপনা ভেঙে ফেলাকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাবিরোধী বলছে সিপিবি ও বাম জোট।
এ নিয়ে ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করে আলাদা বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি-সিপিবি ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা।
সোমবার সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে ‘মৃত্যঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’-এ বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন হতে শুরু করে ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে তৈরি সাতটি স্মারক দেয়াল ভেঙে ফেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনে গত বছর ৫ অগাস্ট ঢাকায় বিজয় সরণিতে ভেঙে দেওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ‘মৃত্যুঞ্জয়’।
শুক্রবার ভাস্কর্যটি ঘিরে নির্মিত সাতটি দেয়ালও ভেঙে ফেলা হয়েছে।
এখন সেই জায়গায় হবে জুলাই ‘শহীদদের’ স্মরণে ‘গণমিনার’।
২০২১ ও ২০২২ সালে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে ‘মৃত্যুঞ্জয়’ নামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য প্রদর্শিত হয়। পরে ওই ভাস্কর্য স্থাপন করা হয় ঢাকার বিজয় সরণিতে, ভাস্কর্য ঘিরে গড়ে তোলা হয় ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নির্মিত ওই চত্বরের সাতটি দেয়ালে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে অন্যান্য আন্দোলন ও বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান চিত্রিত করা হয়।
সিপিবি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিবৃতিতে বলা হয়, “মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অন্যতম ভিত্তি ও অহংকার। এটা একদিনে সংগঠিত হয়নি। ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম থেকে শুরু করে ‘৫২-এর ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় অসংখ্য সংগ্রামের শেষ পর্বে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ।
“মুক্তিযুদ্ধের স্মারক মুছে ফেলে সেখানে জুলাই অভ্যুত্থানের স্মারক নির্মাণের যে কথা শোনা যাচ্ছে, তা অত্যন্ত বিব্রতকর ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাবিরোধী।”
২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানকে ১৯৭১ সালের চেতনারই ধারাবাহিকতা হিসেবে মন্তব্য করে সিপিবির শীর্ষ নেতাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা অত্যন্ত উদ্যোগের সাথে লক্ষ্য করছি, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে নানা কর্মসূচি এবং অনেকের অনেক বক্তব্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী হয়ে দাঁড়াচ্ছে, যা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “জুলাই-অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মৃতির স্মারক নির্মাণ করা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্মারক মুছে ফেলে ওই স্থানে স্মৃতির মিনার নির্মাণ করা অত্যন্ত ভুল সিদ্ধান্ত হবে।”
বিবৃতিতে নেতারা অন্য যথাযোগ্য জায়গা নির্ধারণ করে জুলাই-অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের স্মারক নির্মাণের আহ্বান জানান।
জুলাই অভ্যুত্থানের স্মারক নির্মাণের পাশাপাশি সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সম্বলিত সকল স্মারক যথাযথ যোগ্যতায় সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।
অপর এক বিবৃতিতে ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট বলেছে, ‘মৃত্যঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’ এ তৈরি সাতটি স্মারক দেয়াল ভেঙে ফেলে সেখানে জুলাই অভ্যুত্থানের স্মারক নির্মাণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
“জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থান ১৯৭১ সালের চেতনারই ধারাবাহিকতা। মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এই ধারাকে অগ্রসর করা যাবে না।”
বাম গণতান্ত্রিক জোটের বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, দলটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদ (মার্কসবাদী)-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী।
শুক্রবার রাতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন-ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলায় সেটি ‘অগোছালো’ অবস্থায় ছিল। এ কারণে ওই স্থানটি ‘পরিষ্কার’ করা হয়েছে।
“মূল ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেদিনের আক্রমণের কারণে বাকি যেগুলো ছিল সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এটা এভাবে ফেলে রেখে কোনো লাভ নাই। সেখানে নতুন কিছু যদি করা যায়। সেজন্য আমরা আগে সেখানে জায়গাটা পরিষ্কার করছি।”
তিনি বলেন, ভাস্কর্যের জায়গায় বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস, জুলাইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে নতুন আরেকটা ভাস্কর্য করার পরিকল্পনা আছে।
“জুলাই, বিজয়, বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস সবগুলোকে মিলিয়েই কিছু একটা হবে। এখানে যেমন স্কাল্পচার ছিল সেমনই আরেকটা স্কাল্পচার হবে। আমরা এই জুলাই মাসের মধ্যেই কাজটা করব। কারণ পরিষ্কার করে ফেলে রাখলে লোকজন আবার বলবে, ফেলে রেখে দিয়েছে। মানুষজন রাস্তা দিয়ে আসে যায়, তাদেরও প্রশ্ন এখানে কী হবে তাহলে।”
আরও পড়ুন:
বিজয় সরণির 'মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ' ভাঙা হল, জুলাই স্মরণে হবে 'গণমিনার'