Published : 03 Aug 2024, 12:00 AM
নিষিদ্ধ জামায়াত-শিবিরের প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হত্যা করছে বলে অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশবিরোধীদের তৎপরতা রুখতে সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন।
অরাজতা সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান রেখেছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচির সমর্থনে ঢাকা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শুক্রবার মিছিল হয়েছে, কয়েকটি স্থানে মিছিলে বাধা দেওয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। খবর এসেছে ভাঙচুর, আটক ও হত্যার।
এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বিবৃতিতে বলেন, “আজ (শুক্রবার) দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে যে সন্ত্রাস ও সহিংসতা করেছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই “
বিভিন্ন স্থানে হামলা-সংঘাত ও অগ্নিসংযোগের বর্ণনা দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা করেছে। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আবু জাহিরের বাসভবনে হামলা করেছে।
“এরা খুলনায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা করে পুলিশের একজন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।”
বিবৃতিতে কাদের বলেন, “দেশবিরোধী এই অপশক্তির তৎপরতা রোধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।"
জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন ১৫ জুলাই সহিংস হয়ে ওঠে। ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতায় অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমে আসছে দুই শতাধিক নিহতের খবর, তবে সরকার বলছে তাদের কাছে ১৪৭ জনের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে।
সহিংস এই আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, সংগঠন, জোট নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়ে এর নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে।
প্রধানমন্ত্রীও এসব ঘটনার তদন্তে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশনের আওতা বৃদ্ধির ঘোষণার পাশাপাশি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাকে তদন্তে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে স্বরাষ্ট্র সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে কমিশন পুনগর্ঠন করার ঘোষণা এসেছে বৃহস্পতিবার।
২১ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃত্যু, সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা তদন্ত করবে পুনর্গঠিত কমিশন।
সেই সঙ্গে বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত দপ্তর বা সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, সরকারি কোম্পানি, সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ, করপোরেশন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও নিরূপণ করবে তারা।
তিন সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন ‘কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট ১৯৫৬’ অনুযায়ী তদন্ত কাজ শেষ করে ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে বলে প্রজ্ঞাপনে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
সরকারের এসব পদক্ষেপের মধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন স্তরের সমন্বয়করা কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছেন।
শুক্রবারের পরিস্থিতি
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে হতাহত ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ঢাকায় শুক্রবার ‘ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
এদিন বৃষ্টির মধ্যেই ঢাকার আফতাবনগর, ধানমন্ডি, বাংলামোটর, উত্তরা ও শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বঘোষিত এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। উত্তরায় ১১ নম্বর সেক্টরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে।
শুক্রবার খুলনার নগরের গল্লামারী এলাকায় আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ থেকে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষে সুমন ঘরামি নামে পুলিশের এক কনস্টেবল নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন পুলিশের আরও প্রায় ৩০ সদস্য।
হবিগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থী, বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মোস্তাক আহমেদ নামে এক যুবক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া হবিগঞ্জ শহরের তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকায় বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু জাহিরের বাসার গেট ভাঙচুর ও ১০টি মোটরসাইকেল অগ্নিসংযোগ করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়েও দেওয়া হয় আগুন।
এর আগে শুক্রবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে ওবায়দুল কাদের বলেন, “শিক্ষার্থীদের মূল দাবি পূরণ হয়েছে, আদালতে রায়ের পর দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তারপরও একটি মহল সরকার বনাম শিক্ষার্থী গেম খেলে ফায়দা লোটার অপচেষ্টা করছে। শিক্ষার্থীদের পুঁজি করে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।"
শিক্ষার্থীরা কোনো অবস্থানেই সরকারের ‘প্রতিপক্ষ নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সহিংসতার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের অযথা হয়রানি এবং আটক না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।