Published : 27 Dec 2023, 11:06 PM
প্রার্থী নিজের হাতে লিফলেট দিলেন। ব্যস্ত সড়কে রিকশাচালক মো. জাহাঙ্গীরের কাছে দোয়াও চাইলেন ঢাকা-৮ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
জাহাঙ্গীর যদিও এ নির্বাচনি আসনের ভোটার নন, তবু আনন্দে আপ্লুত হয়ে বললেন, “এত বড় নেতা, এহন মাঝেমধ্যে টিভিতে দেহি। আমি রিকশা চালাইয়া খাই, আমার মতো লোকেরেও দোয়া করতে কইল। আমি এইহানের ভোটার অইলে ইনারেই ভোট মারতাম।”
তখন পড়ন্ত দুপুর। শাহবাগ এলাকায় প্রচারে ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছিম। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে রিকশাচালক জাহাঙ্গীর জানালেন, তার বাড়ি কেরানীগঞ্জে। তিনি মূলত কেরানীগঞ্জ, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্বাবদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় রিকশা চালান।
রিকশা চালান অনেক বছর ধরে। আগেও অনেক প্রার্থীকে ভোট চাইতে দেখেছেন। বললেন, “এমপিদের খুব একটা ভোট চাইতে দেহি না। অনেক প্রার্থী আইলেও তাড়াতাড়ি কইরা কাগজ (লিফলেট) দিয়া ছবি তুইলা চইলা যায়।”
তবে মূলত মতিঝিল, রমনা ও পল্টন এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৮ আসনে এবারের নৌকার প্রার্থী নাছিমকে পুরো এলাকা ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে কয়েক দিন ধরে।
বুধবারও তিনি প্রচারে নেমেছিলেন; যদিও বিএনপির বর্জনের ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তালিকার দিকে নজর রেখে এ আসনের ভোটার ও রাজনীতির খোঁজখবর রাখা স্থানীয়রা বলছেন, নাসিমের সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে শক্তিশালী প্রার্থী নেই।
এরইমধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র নৌকার পোস্টারে ছেয়ে গেছে ঢাকা-৮ আসনের পুরো এলাকা। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৮-১৩ নম্বর ওয়ার্ড এবং ১৯-২১ নম্বর ওয়ার্ড নিয়েই ঢাকা-৮ আসন। এবার এ নির্বাচনি এলাকায় ভোটার রয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৫০ জন।
সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন জোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা নিয়ে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫৩৮ ভোট পেয়েছিলেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ ধানের শীষ প্রতীকে ৩৮ হাজার ৭১৭ ভোট পান।
এবার এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া বাহাউদ্দিন নাছিম ২০১৮ সালে দলের মনোনয়ন পাননি। অবশ্য এর আগে তিনি মাদারীপুর ৩ থেকে ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
নাছিমের সঙ্গে এ আসনে আরও প্রার্থী হচ্ছেন ইসলামী ঐক্যজোটের আবু নোমান মো. জিয়াউল হক মজুমদার, তৃণমুল বিএনপির এম এ ইউসুফ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এস এম সরওয়ার, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির খন্দকার এনামুল নাছির, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. আবুল কালাম জুয়েল, জাতীয় পার্টির মো. জুবের আলম খান, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. রাসেল কবির, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের মো. সাইফুল ইসলাম।
শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও ভোটের লড়াইকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন নাছিম। ঢাকার অন্য আসনগুলোতে পোস্টার তুলনামূলক কম দেখা গেলেও এ আসনে রাস্তায় রাস্তায় ঝুলছে নৌকার পোস্টার।
শুধু পোস্টারই নয়, আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা এই প্রার্থী দলীয় ব্যস্ততার মাঝেও ভোট চাইতে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন বলে জানালেন তার কর্মীদের একজন। তিনি নিজে সব জায়গায় যেতে না পারলেও প্রতিদিনই তার পক্ষে বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চলছে।
বুধবার দুপুর ১টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যলয় মিলনায়তনে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিশ্ববিদ্যিালয়ের অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন নাছিম।
এ সময় তিনি বলেন, “ঢাকা-৮ আসনে দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমায় মনোনয়ন দিয়েছেন। এই আসনের উন্নয়ন, শিক্ষার পরিবেশ ঠিক রাখা, নারীর ক্ষমতায়ন, নারীরা যেন তথ্য প্রযুক্তিতে এগোতে পারে, সর্বোপরি মানুষের জীবনমান পরিবর্তনের জন্য আমি কাজ করবো। আমি মানুষকে ভালোবাসি ও শ্রদ্ধা করি। কারও মধ্যে কোনো ভেদাভেদ করি না।”
চিকিৎসকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “মানুষদের চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাদের যে অবদান তার জন্য আমি আপনাদের প্রতি সন্মান জানাই। আমি আজ আপনাদের কাছে ভোট চাইতে এসেছি।
ভোটারদের কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়ে নাছিম বলেন, বিএনপির ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করে সবাই ভোটের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। কোনো কর্মসূচি দিয়ে তাদের আটকে রাখা যাবে না।
এ মতবিনিময় সভার মাধ্যমে এদিন নৌকার প্রার্থী তার প্রচারণা শুরু করেন। প্রথমে শাহবাগ এলাকার দোকানদার, পথিক, রিকশাচালকদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করে ভোট ও দোয়া চান।
পরে তিনি বিকালে নয়া পল্টনের পিডব্লিউডি স্টাফ কোয়ার্টার, পূর্ব মানিক নগর, অমরচান গলি হয়ে ফকিরাপুল পানির পাম্পের সামনে দিয়ে কালভার্ট রোড এলাকা, পুরানা পল্টন সংবাদ পত্রিকা বিল্ডিং এলাকা, রবিন টাওয়ার, সুলতানাবাদ কলোনি এলাকা, নোয়াখালী টাওয়ার এলাকায় ব্যারিস্টার রফিকুল হকের বাড়ি হয়ে সুরমা টাওয়ার এলাকায় গণসংযোগ করেন।
সবশেষে নাছিম সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের উদ্যোগে মতিঝিল টিএন্ডটি কলোনি মাঠে নির্বাচনি সভা করেন।
কী বলছেন ভোটাররা
এ আসনের স্থানীয় বাসিন্দা রমিজ উদ্দিন বলেন, “এ এলাকায় নাছিমের শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নাই। আর অন্য কাউকে মানুষ তেমন চিনেও না। নাছিমকেই বেশি চিনে।”
স্থানীয় আরেকজন বাসিন্দা নাজমুল আলম বলেন, তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশের প্রার্থী একটু পরিচিত মুখ এ এলাকায়। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থীরেও কেউ কেউ চিনে। তারা ভালোভাবেই লড়বার চেষ্টা করবে। কিন্তু নাছিম ভাইয়ের সাথে পাইরা উঠব না।”
ফুটপাতে ভ্যানে করে ফল বিক্রি করছেন মো. আব্দুর রশিদ। থাকেন তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ি। তিনি নাছিমের কাছ থেকে পোস্টার পাওয়ার পর বলেন, যেখানেই যাই অনেকেই আইসা ভোট চায়। কিন্তু আমি তো ঢাকার ভোটারই না। তখন তিনি মুচকি হাইসা কই দেই ভোট দিমু। আসলে আমার ভোট বগুড়া জেলায়। ভোটের আগে দ্যাশে যামু।”
মতিঝিল, রমনা ও পল্টনের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঢাকা-৮ আসনের অধীনে। এ আসনে আছে সচিবালয়, হাইকোর্ট, বায়তুল মোকাররম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় জাদুঘরের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনা। এ জন্য সংসদীয় আসনগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এটি।
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র এই এলাকার নাগরিকেরা জানিয়েছেন, গ্যাস, পানিসহ নানা বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তিতে তারা। এখানকার বাসিন্দারা যেমন বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করছেন, তেমনি রয়েছে গ্যাস-পানির দীর্ঘদিনের সমস্যা। সড়কেও আছে দুর্ভোগ।
নাছিমের গণসংযোগে যোগ দিতে এসেছিলেন পল্টন থানার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা পারুল আক্তার।
তিনি বলেন, “দুইদিন ধরে পানি নাই, তাই গোসল করতে পারি নাই। গ্যাসের অপ্রতুলতা অনেক। আর বৃষ্টি হইলে গলির রাস্তায় হাঁটু পরিমাণ পানি উঠে যায়। আমরা আশা রাখি নাছিম ভাই নির্বাচিত হলে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করবেন। নাছিম ভাই ছাড়া আর কোনো প্রার্থী নাই এসবের সমাধান দিতে পারবে।”