Published : 13 Jun 2024, 05:55 PM
জয়পুরহাটে রাস্তা কেটে পুকুর খনন করার অভিযোগ উঠেছে। এতে অন্তত ৫০টি পরিবার চলাচলে ভোগান্তিতে পড়েছে।
সদর উপজেলার ভূটিয়াপাড়া এলাকার প্রত্যন্ত চক উজাল গ্রামের রাস্তার মাটি কেটে পুকুর খনন করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় খাযইরুজ্জামান ও আবু সুফিয়ান হেলালের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।রাস্তাটি পুনঃসংস্কার করে গ্রামবাসীদের যাতায়াত সমস্যার সমাধান করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
চক উজাল গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত মোজাম্মেল হক দেওয়ানের স্ত্রী রাবেয়া বেগম বলেন, “গ্রামের সাধারণ মানুষ ও রিকশা-ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচলের জন্য ৬-৭ ফুট চওড়া একটি মেঠোপথ ছিল।
“দীর্ঘ ৬০-৭০ বছরের আগে থেকে ওই পথ ধরে প্রত্যন্ত চক উজাল গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের অন্তত ৫০টি পরিবারের মানুষ চলাচল করতেন।”
তিনি বলেন, “চক উজাল গ্রামের রাস্তাটির দুপাশে স্থানীয় খায়ইরুজ্জামান ও আবু সুফিয়ান হেলালের জমি ছিল। তারা গত দুমাস আগে রাস্তাটির এক পাশে পুকুর খনন করেন। আর অন্য পাশে মাটি কেটে রাস্তটি দেড় থেকে দুই ফুট সরু করেন।”
এখন সরু ওই রাস্তা দিয়ে রিকশা-ভ্যান তো দূরের কথা, সাইকেলও চালানো যাচ্ছে না বলে জানান রাবেয়া বেগম।
তার অভিযোগ, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), পুলিশ, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে এর প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামটিতে রাবেয়াকে সরকারের দেওয়া একটি বীর নিবাসসহ মোট চারজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য বীর নিবাস রয়েছে।
এছাড়া সেখানে একটি ঈদগাহ মাঠ, কবরস্থান ও পীরের মাজার রয়েছে; যেখানে বছরের বিভিন্ন সময় ওরস, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব হয়।
এসব ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ভক্তরা অংশগ্রহণ করেন। রাস্তাটি সরু করে ফেলার কারণে যার পর নাই, অসুবিধায় পরছেন এলাকাবাসী।
একই গ্রামের আরেক মুক্তিযোদ্ধা মেখলেছার রহমান বলেন, “এই গ্রামে চার জন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের প্রায় ২০-৩০ জন সদস্য ছাড়াও আশপাশের সাধারণ মানুষ রয়েছে।
“জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। অথচ আজ স্বাধীন দেশেই তাদের সন্তানদেরই চলাচলের স্বাধীনতা নেই।”
ভূটিয়াপাড়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গণি ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলেন, এই গ্রাম দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করতে হয়। রাস্তাটি সরু হওয়ায় তারা এখন বর্ষা মৌসুমে বিপদে পড়বেন।
জয়পুরহাট সরকারি কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আমিনুল ইসলাম বলেন, “ওই পথ ধরে অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছে।
“রাস্তাটি কেটে-ছেঁটে সরু করায় শুষ্ক মৌসুমে কষ্ট করে যাতায়াত করা সম্ভব হলেও বর্ষা মৌসুমে তারা নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেতে পারছে না।”
চক উজাল গ্রামের মেহেদি হাসান পান্নার অভিযোগ, “এই এলাকার মানুষের জরুরি চিকিৎসা দিতে ওই সরু পথ দিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ফলে রোগীদের জন্য রাস্তাটি একটি মরণ ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।“
আবুজার রহমান বলেন, “গ্রামের রাস্তার অপর পাশে একটি পুকুর খনন করেছেন খায়ইরুজ্জামান ও আবু সুফিয়ান হেলাল। সেখানে বৈদ্যুতিক খুঁটি পুকুরটির পানির প্রায় কাছাকাছি রয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। “
চলাচলের রাস্তায় পুকুর খননন করার প্রসঙ্গে আবু সুফিয়ান বলেন, “নিজের জমির ওপর দিয়ে রাস্তা না দিলে, জোর করে কেউ নিতে পারবে না।”
জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, “এ ঘটনায় মে মাসের ৯ তারিখে জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া অভিযোগের অনুলিপি পেয়েছি। এ ছাড়া আমার কাছেও সরাসরি পাঠানো একটি আবেদন পেয়েছি।”
ভুক্তভোগীদের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।