Published : 07 Aug 2024, 12:19 AM
ফেনীর তিন থানায় আগুন দিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে একদল জনতা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের তিন নেতার লাশ উদ্ধার করেছে স্বজনরা।
এদিকে মঙ্গলবার ধ্বংসস্তূপের নগরী ফেনীতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভিযান চালিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই ফেনীতে ভাঙচুর, হামলা ও লুটপাট শুরু হয়।
সোমবার বিকাল থেকে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত ফেনীর বিভিন্ন জায়গা থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
তারা হলেন- ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ফেনী পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র মোসলেহ উদ্দিন হাজারী বাদল, সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী ও ইউনিয়ন যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মুশফিকুর রহমান, বালিগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আবুল বসার বাদশা ওরফে কানা বাদশা।
স্বজনরা তাদের নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সোমবার রাতে প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো ফেনী মডেল থানায় আগুন দেওয়া হয়। এ সময় থানা চত্বরে থাকা ১০-১৫টি গাড়ি পুড়ে যায়। থানার আসবাবপত্র ভাঙচুর করে নথিপত্র আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
একইভাবে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয় দাগনভূঞা ও ছাগলনাইয়া থানায়। এ সময় পুলিশ সদস্যরা নিরাপদ স্থানে সরে জীবন রক্ষা করেন।
হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের বিষয়ে জানতে ফেনী মডেল থানার ওসি রুহুল আমিনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভি করেননি।
এদিকে ৭০ বছরের পুরনো ফেনী পৌরসভায় অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পৌরসভার সামনে পার্কিং করা লাশবাহী গাড়ি, দুটি অ্যাম্বুলেন্স, ময়লা পরিষ্কারের গাড়িসহ অন্তত আটটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে ফেনী পৌরসভার প্রধান হিসাবরক্ষক আমিনুল ইসলাম হাজারী রূপককে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
এদিকে, ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের ফেনীর বাসা এবং পরশুরাম উপজেলার গ্রামের বাড়িতে।
ছাগলনাইয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেসবাউল হায়দার সোহেল চৌধুরীর ফেনীর বাসায় ভাঙচুর চালিয়ে লুট করা হয়েছে।
অপরদিকে সোনাগাজী উপজেলায় আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের বেশ কয়েকটি কক্ষ, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন, পৌর মেয়রের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।
হামলা চালানো হয়েছে ফেনীর ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম স্টেডিয়ামে।
জেলা ক্রিকেট কোচ রিয়াজ উদ্দিন রবিন বলেন, “সোমবার রাতে স্টেডিয়ামের নামফলক, সাধারণ সম্পাদকের কক্ষ, চেয়ার-টেবিল, আসবাবপত্র ভাঙচুর করে কম্পিউটারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে একদল লোক। এ সময় অন্যান্য জিনিসপত্রও ভাঙচুর করা হয়।”
মঙ্গলবার সকাল থেকে স্কুল-কলেজ খোলা থাকলেও উপস্থিতি খুব বেশি ছিল না। খোলা হয়নি বিপণী বিতান, শপিংমল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
এদিকে নিহতদের স্মরণে বাদ জোহর ফেনী প্রেসক্লাবের সামনে গায়েবানা জানাজা পড়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। ফেনী কলেজ মাঠেও গায়েবানা জানাজা হয়েছে।
দুপুর থেকে ফেনীতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছে শিক্ষার্থীরা। তারা শহরের মাস্টারপাড়ার মোড় থেকে সদর হাসপাতাল পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক পরিষ্কার করেছে।
শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দিন বলেন, “সহস্রাধিক শিক্ষার্থী উদ্যোগ নিয়ে মাথায় লাল ক্যাপ পরে শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছে। স্থানীয় লোকজন তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।”