Published : 05 Jun 2025, 04:13 PM
কোরবানির ঈদকে ঘিরে ফেনীতে শেষ মুহূর্তে পশুর হাটগুলো জমে উঠেছে। জেলার ছয়টি উপজেলার ১১৩টি স্থানে হাট বসেছে। তবে পছন্দের পশু কিনতে গ্রামের হাটগুলোতে ছুটছেন ক্রেতারা।
ফেনী জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় জানিয়েছে, এবার জেলায় কোরবানিতে পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৮২ হাজার। সেই অনুযায়ী এবার ৭০০ কোটি টাকার বেশি কোরবানির পশু বেচাকেনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রতিবছরের মত এবারও সীমান্তে অবৈধপথে ভারতীয় গরু আসা ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবি।
খামারি ও হাট ইজারাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২৪ সালের অগাস্ট ফেনীতে ভয়াবহ বন্যায় পশুর খামারিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অনেকে সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না পারলেও এবার কোরবানির ঈদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন প্রান্তিক খামারিরা।
তবে দামের পার্থক্য থাকায় শহরের আশপাশের হাটগুলোর তুলনায় গ্রামের বাজারগুলোতে গত কয়েকদিন ধরে ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম বেড়েছে বলে জানান ইজারাদাররা।
ফেনী পৌরসভা ও সদর উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নে এবার পশুর হাট বসেছে ২৮টি। প্রতিটি হাটে গড়ে দুই থেকে তিন হাজার গরু উঠছে। এর মধ্যে শংকর জাতের দেশি-ফ্রিজিয়ান, দেশি-সাহিওয়াল ও সংমিশ্রণ জাতের বাহারি গরু রয়েছে। পাশাপাশি মহিষ, ছাগল, ভেড়ার দেখা মিলছে।
জেলা সদরের পাশাপাশি সোনাগাজী উপজেলায় ২৫টি, দাগনভূঞা উপজেলায় ১৯টি, ছাগলনাইয়া উপজেলার ১৭টি, পরশুরাম উপজেলার আটটি ও ফুলগাজীর সাতটি স্থানে স্থায়ী ছাড়াও আরও ১৫টি অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে। প্রতিটি হাটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম দায়িত্ব পালন করছে।
ফেনী সদর উপজেলা লস্করহাট বাজারে গরু কিনতে এসে বাজেটের মধ্যে গরু পেয়ে খুশি জুলহাস তালুকদার। তিনি ৬২ হাজার টাকায় মাঝারি একটি গরু কিনেছেন। বিক্রেতা ৮০ হাজার টাকা দাম চাইলেও দর কষাকষির মাধ্যমে ৬২ হাজার টাকায় গরু কিনেছেন তিনি।
ফেনীর রানিরহাট বাজারে পশুর হাটে গরু কিনতে এসেছেন মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, বিক্রেতারা প্রতিটি গরুতে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা অধিক মূল্য চাচ্ছে। অনেক বিক্রেতার শেষ দিন পর্যন্ত গরু ধরে রাখতে চাচ্ছে দেখে দাম কমাচ্ছেন না।
হাট ঘুরে ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি দেশি গরু কিনেছেন তিনি; যা দেখে তার সন্তান বেশ খুশি।
পরশুরামের খামারি আবদুল মতিন বলেন, “গত বছর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বড় ধরনের লোকসান হয়েছে। এবার কোরবানির বাজারের জন্য ১৫টি গরু ও সাতটি ছাগল প্রস্তুত করেছি। ভাগ্য অনুকূলে থাকলে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারব।”
এর মধ্যে সাতটি গরু ও চারটি ছাগল বিক্রয় হয়েছে বলে জানান এই খামারি।
ফাজিলপুর হাটের ইজারাদার শাহ আলম বলেন, কয়েক দিনের বৃষ্টিতে হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা কম থাকলেও বুধবার থেকে জমে উঠতে শুরু করেছে। এ হাটে সরকারি দর থেকেও কমে হাসিল নেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া হাটে নিরাপত্তা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রাণিসম্পদ কার্যালয় জানিয়েছে, চলতি বছর কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৮২ হাজার ৩৩৬টি। এর বিপরীতে প্রস্তুত রয়েছে ৮৭ হাজার ২২৭টি পশু। যার মধ্যে ৬৯ হাজার ৩৬০টি গরু, এক হাজার ৬৬৭টি মহিষ, ১৩ হাজার ২৪৩টি ছাগল এবং তিন হাজার ১৪৭টি ভেড়া।
ফেনী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, গড় হিসেবে একটি মাঝারি গরুর দাম এক লাখ টাকা হলে সে অনুযায়ী, জেলার ৬৯ হাজার ৩৬০টি গরুর সম্ভাব্য বাজার মূল্য দাঁড়ায় ৬৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
এর সঙ্গে মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার মূল্য ধরলে পুরো কোরবানির পশু বাণিজ্য ৭০০ থেকে ৭৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানান তিনি।
ফেনীর পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, হাটগুলোতে নির্বিঘ্নে কেনাবেচা করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাকধারী সদস্যদের পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে।
এ ছাড়া হাটে জাল টাকা লেনদেন রোধে বিক্রেতাদের সজাগ থাকার অনুরোধ করেছেন পুলিশ সুপার।
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলার প্রতিটি হাটে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ নির্বাহী হাকিমরা নিয়মিত তদারকি করছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ কোনও সড়কে যেন হাট বসতে না পারে সেটি জোরালোভাবে তদারকি করা হচ্ছে।
এর মধ্যে ফেনী-ছাগলনাইয়া সড়কের পাঠাননগর এলাকায় সড়ক দখল করে হাট বসায় ইজারাদারকে জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ ছাড়া সরকার নির্ধারিত হাসিলের বাইরে হাটগুলোতে অতিরিক্ত হাসিল নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
বিজিবি-৪ ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, ছয়টি উপজেলার মধ্যে চারটি উপজেলায় ভারতীয় সীমান্ত রয়েছে। সীমান্তের ১২৮ কিলোমিটার অংশে বিজিবি কঠোর দায়িত্ব পালন করছে।
গত দুই মাসে ফেনী সীমান্তে ভারত থেকে অবৈধপথে দেশে আসা ১৭৩টি গরু জব্দ করা হয়েছে; যার আনুমানিক বাজার মূল্য কোটি টাকার ওপরে বলে জানান তিনি।
এ ছাড়া অবৈধপথে গরু প্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি সর্বদা তৎপর রয়েছে বলে জানান মোশারফ হোসেন।