Published : 16 May 2024, 10:56 AM
ফেনীর পরশুরামে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধন না করলে আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের ঘরের বরাদ্দ বাতিলের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে।
গত ১৩ মে উপজেলার রাজষপুর আশ্রয়ণসহ পরশুরাম পৌর এলাকার বাউরখুমা, মির্জানগর আশ্রয়ণ ও বক্সমাহমুদ ইউনিয়নের শান্তি কলোনি আশ্রয়ণে গিয়ে তিনি হুমকি দেন বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।
তারা বলছেন, সাহাব উদ্দিন সেদিন রাজষপুর আশ্রয়ণে গিয়ে বাসিন্দাদের সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিবন্ধন করতে বলেন। ওই আশ্রয়ণের সর্দার মো. শাহাদাতকে তিনি ১৪ মের মধ্যে বাসিন্দাদের নিয়ে সোনালী ব্যাংকে গিয়ে ছবি ও আইডি কার্ড দিয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করার নির্দেশনা দেন। চিথুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পেয়ার আহাম্মদও সে সময় ভূমি কর্মকর্তার সঙ্গে ছিলেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পেনশন স্কিম চালু না করলে ঘরের বরাদ্দ বাতিল করার হুমকি দেন ভূমি কর্মকর্তা। এ সময় তিনি পেনশন স্কিমের একটি লিফলেট আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের হাতে ধরিয়ে দেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য পেয়ার আহম্মদও আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের দ্রুত পেনশন স্কিম চালু করতে বলেন। তা না হলে আশ্রয়ণের ঘর ছেড়ে দিতে বলেন।
তবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম কী, সেটা আশ্রয়ণের বাসিন্দারা বোঝেন না। তারা সবাই হতদরিদ্র দিনমজুর; অন্যের বাসায় কাজ করে তাদের সংসার চলে।
বাউরখুমা আশ্রয়ণের বাসিন্দা মো. হাবিলদার বলেন, তাদের আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের দ্রুত পেনশন স্কিম চালুর নির্দেশ দিয়েছেন ভূমি কর্মকর্তা।
রাজষপুর আশ্রয়ণের নয়জন বাসিন্দা গত ১৪ মে সকালে ছবি ও আইডি কার্ড আর পেনশন স্কিমের একটি লিফলেট নিয়ে সোনালী ব্যাংকে যান। কিন্তু ৫০০ টাকা না নিয়ে যাওয়ায় সোনালী ব্যাংকে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা তাদের ফিরিয়ে দেন।
বিজলি আক্তার নামে আশ্রায়ণের এক বাসিন্দা বলেন, “আমি দৈনিক ৭০০ টাকা মজুরিতে অন্যের বাসায় কাজ করি। ভূমি অফিসের একজন কর্মকর্তা এসে বলেছেন, যদি পেনশন স্কিমে নিবন্ধন না করি তাহলে আমার ঘর বাতিল করে দেবেন।”
পেনশন স্কিম কী সেটা জানেন না জানিয়ে বিজলি বলছিলেন, “আশ্রয়ণের সর্দার শাহাদাত ও ইউপি সদস্য পেয়ার আহাম্মদ লিফলেট দিয়ে আমাদের ব্যাংকে পাঠিয়েছেন। পেনশন স্কিম চালু করতে যে টাকা লাগবে সেই টাকা আমার কাছে নেই।
“অন্যের বাড়িতে কাজ করে যে টাকা বেতন পাই, তা দিয়ে আমার সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে, আমি কীভাবে পেনশনের কিস্তির টাকা দেব?”
একই কথা বললেন আশ্রয়নের বাসিন্দা পারভিন আক্তার। তিনিসহ রাজষপুরের নয়জন বাসিন্দাদের কেউই পেনশন স্কিম বোঝেন না।
পারভিন বলেন, গত মঙ্গলবার সকালে পেনশন স্কিমের লিফলেট নিয়ে সোনালী ব্যাংকে গেলে ব্যাংকের কর্মকর্তারা পাঁচশ টাকা করে দিতে বলেন। তবে তিনিসহ অন্যদের কাছে সেই টাকা না থাকায় ব্যাংকের কর্মকর্তা তাদের নিবন্ধন করে দেননি।
পাখি আক্তার নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, “ঘরবাড়ি না থাকায় আমরা আশ্রয়ণে থাকি। এখানে আমাদের সবার আর্থিক অবস্থা খারাপ। তার মধ্যে যদি এমন কিছু করে, আমাদের আর যাওয়ার জায়গা থাকবে না। এমনিতেই খুব কষ্টে দিন পার করেছি। এখন পেনশনের কিস্তির টাকা কোথায় পাব?”
অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে চিথলিয়া ইউনিয়নের উপ সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সাহাব উদ্দিন বলেন, “সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধন করতে বলেছি। কাউকে জোর করা বা ঘর বাতিলের কথা বলিনি।”
ভূমি কর্মকর্তার সঙ্গে ছিলেন কী-না জানতে চাইলে চিথুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পেয়ার আহাম্মদ বলেন, “আমি ভূমি কর্মকর্তার সঙ্গে আশ্রয়ণ প্রকল্পে গেছি। সেখানে সকলকে পেনশন স্কিমে নিবন্ধন করতে বলা হয়েছে।”
পরশুরাম উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, পেনশন স্কিম নিবন্ধন করতে সবাইকে ‘অনুরোধ’ করা হচ্ছে। পেনশন স্কিম চালু করলে তাদের নিজেদের লাভ হবে।
“তবে আশ্রয়ণের বাসিন্দারা পেনশন স্কিমে নিবন্ধন না করলে ঘরের বরাদ্দ বাতিলের বিষয়টি সঠিক নয়,” বলেন তিনি।
একই কথা বলছেন পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপলা। তিনি বলেন, “আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের পেনশন স্কিম অ্যাকাউন্ট করতে বলা হয়েছে। এটি চালু করলে তাদের ভবিষ্যতের জন্য উপকার হবে। তবে পেনশন স্কিম না করলে তাদের ঘর বাতিল করে দেওয়া হবে, বিষয়টি সঠিক নয়।”