Published : 03 Mar 2025, 03:53 PM
ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা কাঠ দিয়ে ২২ জন মিস্ত্রির সাত বছরের চেষ্টায় গড়ে উঠেছিল পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ‘মমিন মসজিদ’। শত বছর পেরিয়েও মসজিদটি টিকে আছে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নিদর্শন হয়ে।
উপজেলার উদয়তারা বুড়িরচর গ্রামের এ মসজিদের কাঠামো তৈরিতে এমনকি লোহার পেরেকও ব্যবহার করা হয়নি, পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে কাঠের শলাকা। তাই স্থানীয়রা এটিকে ‘কাঠ মসজিদ’ও বলে থাকে।
২৪ ফুট দৈর্ঘ্য আর ১৮ ফুট প্রস্থের অপূর্ব সৌন্দর্যের এ মসজিদের পুরোটা জুড়ে আছে বাহারি নকশা ও কারুকাজ। কাঠের বেড়া, দোচালা পাটাতনের টিনের ছাউনি দেওয়া মসজিদে ভেতরে আলো-বাতাস ঢোকার জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা।
মূল মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণে দুটি করে এবং পূর্ব ও পশ্চিমে চারটি করে জানালা আছে। পূর্বদিকে একটিমাত্র দরজায় কারুকার্যখচিত দুটি থামযুক্ত দরজা রয়েছে। যার উপরিভাগে কাঠের ওপর আছে আরবি ক্যালিগ্রাফি। অলংকরণে বৈচিত্রময় ক্যালিগ্রাফির ব্যবহার মসজিদটিকে বিশিষ্টতা দান করেছে।
ব্রিটিশ ভারতে মুসলিম জাতির ইতিহাস সংরক্ষণ ও ধর্মীয় চেতনা থেকে ১৯১৩ সালে মসজিদটি নির্মাণ করেন মৌলভি মমিন উদ্দিন আকন।
কাশ্মীরে নির্মিত একটি কাঠের মসজিদের আদলে নিজের নকশায় মসজিদটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন তিনি। সেজন্য আসাম, ত্রিপুরা ও কাশ্মীর থেকে শাল, সেগুন আর লোহা কাঠ সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন তিনি।
মসজিদের প্রধান মিস্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী এলাকার দৈহারী ইউনিয়নের শ্রী হর কুমারকে। তার নেতৃত্বে ২২জন মিস্ত্রি ১৯১৩ সালে মসজিদ তৈরি করা শুরু করেন। যা শেষ হয় ১৯২০ সালে।
মৌলভি মমিন উদ্দিন আকনের নাতি মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, পুরো নির্মাণ প্রক্রিয়া নিজে উপস্থিত থেকে তত্ত্বাবধান করেছিলেন মমিন উদ্দিন। মসজিদটি নির্মাণে তৎকালীন সময়ের ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল বলে জানা গেছে।
বর্তমানে মসজিদটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আজাদ বলেন, “মুসলিম ঐতিহ্য ও ইতিহাসের সাক্ষী আমাদের এই মমিন মসজিদ। কাশ্মিরের মসজিদটি ভূমিকম্পে ভেঙে পড়ায় এটি এখন দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র কাঠের তৈরি মসজিদ।
“মসজিদটিকে ২০০৩ সালের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সংরক্ষিত প্রত্নসম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। “
২০০৮ ও ২০২১ সালে খুলনা জাদুঘরের আওতায় মসজিদটির কিছু সংস্কার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “মসজিদটিকে এর মধ্যে দুবার সংস্কার করা হয়েছে তবে তা যথেষ্ট নয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টিকিয়ে রাখতে গেলে মসজিদটির কাঠামো ঠিক রেখে এর উপর থেকে একটি ছাদ দেওয়া উচিত।
“এতে করে মসজিদটির কাঠগুলো সুন্দর থাকবে এবং ঝড় বৃষ্টিতেও নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে না। তাছাড়া বাইরে ছাদ থাকলে বৃষ্টিতে বা গরমে নামাজ পড়তে কোনো সমস্যা হবে না।”
মমিন মসজিদের মুয়াজ্জিন আব্দুল আলিম বলেন, “যেহেতু মসজিদটি আকারে ছোট তাই এখানে একসঙ্গে বেশি সংখ্যক মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন না। আর বাইরে যেহেতু কোনো ছাদ দেওয়া নেই বা ছাউনি নেই, তাই নামাজ পড়তে সমস্যা হয়।
“মসজিদটিকে যদি পাকা ছাদের নিচে আনা যায় তাহলে এখানে অনেক মানুষ নামাজ পড়তে পারবে।”
এ বিষয়ে মঠবাড়িয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল কাইয়ুম জানান, “মসজিদটির সার্বিক উন্নয়নে আমরা চেষ্টা করছি। মসজিদটির ইতিহাস ও ঐতিহ্য কীভাবে সংরক্ষণ করা যায় তার জন্য পরিকল্পনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”