Published : 28 Jan 2025, 09:53 PM
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজাকে সামনে রেখে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে ফরিদপুর পৌরসভার ভাজনডাঙ্গা গ্রামের পাল পাড়ার কারিগররা।
পূজার আর মাত্র পাঁচদিন বাকি। মাটির কাজ শেষে এখন রং আর তুলির আঁচড়ে দেবীর প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলছেন তারা।
মঙ্গলবার দুপুরে পাল পাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, কেউ প্রতিমার গায়ে মাটির লাগানোর কাজ সদ্য শেষ করেছেন। কেউ বিভিন্ন রঙে দেবীকে সাজিয়ে তুলছেন। পুরুষদের পাশাপাশি নারী ও শিশুরাও এ কাজে হাত লাগিয়েছেন। দম ফেলার সুযোগ নেই কারও।
সেখানে কথা হয় প্রতিমা কারিগর শম্ভুনাথ পালের সঙ্গে। তিনি বলেন, “এ বছর আগের থেকে প্রতিমার চাহিদা একটু কম। তারপরেও ব্যস্ততা আছে। কয়েকদিন পরেই তো সরস্বতী পূজা; এখন আমরা পরিবারের সবাই দিলে দিন-রাত শেষ মুহুর্তের কাজ করছি।
“আসলে এটা করেই আমাদের সংসার চলে। সারা বছর টুকটাক কাজ করলেও এই সময়ে ব্যস্ততাটা বেড়ে যায়।”
ভাজনডাঙ্গা গ্রামের পাল পাড়ার কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানকার তৈরি প্রতিমা ফরিদপুরসহ আশেপাশের জেলাগুলোতেও বিক্রি হচ্ছে। ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে সেগুলো।
তারা বলছেন, প্রতিমা তৈরির উপকরণ বাঁশ, সুতা, রং ও মাটির দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের খরচ বেড়েছে। কিন্তু প্রতিমার দাম বাড়েনি। বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতেই তারা এখনও এ পেশায় রয়েছেন।
আরেক কারিগর পাঁচু গোপাল পাল বলেন, “প্রতিমা তৈরি করে যা রোজগার হয় তা দিয়ে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তারপরও বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছি।”
এ বছর ছোট প্রতিমা ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিভিন্ন স্কুল কলেজ থেকে যে অর্ডার পেয়েছি, সেসব বড় প্রতিমার দাম নেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। তবে ছোট প্রতিমার চাহিদা বেশি।”
নারী কারিগর ভারতী রানী পাল বলছিলেন, “যেহেতু প্রতিমা তৈরিই আমাদের আয়ের একমাত্র পথ, তাই এই সময় পরিবারের সব সদস্যদের নিয়ে কাজ করে থাকি। গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। তবে আগের মতো তেমন লাভ হয় না।”
কারিগর তাপস পাল বলেন, “দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এবছর প্রতিমার চাহিদা একটু কম, তারপরেও অর্ডার যা পেয়েছি ভালোই। আমরা যেহেতু এই কাজ শিখেছি, অন্য কিছু করতে পারবো না, তাই একটু কষ্ট হলেও পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এই পেশা থেকে গেছি।”
তিনি বলেন, “রংয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দুই একদিনের মধ্যেই প্রতিমা বিক্রির জন্য বাজারে নেওয়া হবে। এছাড়া যেগুলো অর্ডার পেয়েছি সেগুলো ওই সকল স্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
“আমাদের এখানকার প্রতিমার সুনাম রয়েছে। জেলার বাইরে থেকেও অর্ডার পেয়েছি। দুই এক দিনের মধ্যে তারা এসে প্রতিমা নিয়ে যাবে।”
মাদারীপুরের টেকেরহাট থেকে প্রতিমা কিনতে আসা প্রল্লাদ বিশ্বাস বলছিলেন,
“এখানকার তৈরি প্রতিমার সুনাম রয়েছে। এ কারণে বেশ কিছুদিন আগে একটি সরস্বতী প্রতিমার অর্ডার দিয়ে গেছিলাম। এখন দেখতে এসেছি কেমন হয়েছে।
“পূজার আগের দিন প্রতিমা নিয়ে যাবো। আমার মতো অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে এখানে প্রতিমা নিতে আসে।”
এ বছর বসন্ত পঞ্চমীর তিথি ২রা ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টা ২৯ মিনিটে শুরু হয়ে পরদিন সকাল ৯টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত থাকবে।