Published : 29 May 2024, 09:19 PM
কোনো ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ না থাকায় গাছে পাকা আম দেখার পরেই আম পাড়া শুরু হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে। গুটি ও গোপালভোগ জাতের আম পাকা শুরু হলেও জেলার চাষিরা তাকিয়ে আছেন জিআই স্বীকৃতিপ্রাপ্ত খিরসাপাত আমের গাছের দিকে।
কানসাটের ধোবড়া এলাকার আম চাষি মো. আবুল কালাম যেমন বলছিলেন, “এবার চ্যার-দোহাতে (চতুর্দিকে) আম কম। সেই হিসেবে হামার (আমার) বাগানে মইল (মুকুল) ছিল ভালো, আমও ধরেছে। দেখতে দেখতে আম ডাক্কর (পরিপক্ব) হয়ে উঠছে। এখন গাছে আম পাকা দ্যাখা দিলেই ভাঙতে (আম পাড়তে) লাগবো।“
কালামের মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জে অধিকাংশ আম চাষি ও ব্যবসায়ী আমের পরিপক্বতা নিশ্চিত হওয়ার জন্য গাছে পাকা আম দেখার অপেক্ষায়। পাকা আম দেখা গেলেই নামাবেন আম। জমজমাট বেচা-কেনার আশায় প্রস্তুত হচ্ছেন আড়তদাররাও।
খিরসাপাতের পাশাপাশি ল্যাংড়া ও ফজলিসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুমিষ্ট জাতের এসব আম যখন বাজারে আসে তখন জমজমাট হয়ে ওঠে মধু মাস ও দেশের আমের বাজার।
সাধারণত মে মাসের শেষের দিকে গুটি ও গোপালভোগ জাতের আম বাজারে আসার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় পাকা আমের মৌসুম। আর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে বাজারে আসতে শুরু করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জিআই প্রাপ্ত খিরসাপাত আম। এরও দিন দশেক পরে জুনের মাঝামাঝিতে বাজারে উঠবে জিআই স্বীকৃতিপ্রাপ্ত আরও দুইটি জাত- ল্যাংড়া ও ফজলি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে এ জেলায় প্রায় ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে আমচাষ হয়েছে। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৫০ হাজার টন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে গোপালভোগ ও গুটি জাতের আম পাকা শুরু হয়েছে। একই জাতের আম ভিন্ন তাপমাত্রা, ভৌগোলিক অবস্থানে কয়েকদিন আগে-পরেও পাকতে পারে। তবে আম পরিপক্ব হলে কিছু লক্ষণ দেখে যায়। আম পাকার আগে ভেতরের অংশ আঁটির দুই পাশ কিছুটা হলদে বর্ণ ধারণ করে। এছাড়াও গাছে দু’একটি পাকা আম দেখা গেলে ওই আম পরিপক্ব হয়েছে বলে ধরা হয়।
সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের মুর্শিদা এলাকার আম চাষি মুনজের আলম মানিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আম মৌসুমে একেক জাতের আম একেক সময়ে পাকবে। ফল পরিপক্ব হলে, আমরা আঞ্চলিক ভাষায় বলি ‘ডাক্কর’ হয়েছে।
বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ততার ফাঁকে এই কৃষি উদ্যোক্তা আরও বলেন, জাত আম গুলো এখন ডাক্কর হয়ে উঠছে। বাগানে গুটি ও গোপালভোগ গাছ পাকা আম পেয়েছি।এই জাতের আম দু-চার দিনের মধ্যে বাজারজাত শুরু করব। অনলাইনেও এবার বেশ কিছু অর্ডার হাতে পেয়েছি।
তবে আম পাকা শুরু হলেও চাষিরা চিন্তায় আছেন দাম পাওয়া নিয়ে। ভোলাহাট উপজেলার পোলাডাঙ্গা এলাকার আম চাষি আমিরুল ইসলাম বলেন, গাছ থেকে গুটি আম পাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। গত বছরের তুলনায় এবার আমের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সেই হিসাবে আমের বাজার দর কেমন হবে বুঝতে পারছি না।
তবে আম হারভেস্ট (গাছ থেকে আম সংগ্রহ) বিষয়ে চাষিদের বেশ কিছু পরামর্শও দিয়েছেন আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান।
তিনি বলেন, “চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম চাষিরা সাধারণত ‘ঠুসি’ দিয়ে গাছ থেকে আম পাড়েন। তবে কোনো অবস্থাতেই গাছ ঝাঁকিয়ে আম মেঝেতে ফেলা ঠিক নয়।
“সকালবেলা অথবা বিকেল বেলা আম পাড়ার উপযুক্ত সময়, দুপুরবেলা বেশি তাপমাত্রায় আম পাড়া উচিত নয়।
এছাড়া পাড়ার সময় ১-২ ইঞ্চি বোঁটা সংযুক্ত রেখে গাছ থেকে আম নামাতে হবে। যাতে আমের রস বোঁটা দিয়ে বেরিয়ে আমের গায়ে না লাগে। রস গায়ে লেগে আম পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এদিকে আম বাজারজাত ও ভোক্তাদের নিরাপদ আমের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসনও।
এ সম্পর্কে জেলা প্রশাসক একে এম গালিভ খাঁন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন থেকে সততার সঙ্গে ভোক্তাদের কাছে নিরাপদ আম পৌঁছে দেন। আম পরিপক্ব হলে গাছ থেকে পেড়ে বাজারজাত করেন।
“তাই আম চাষি ও ব্যবসায়ী, কৃষি বিভাগ এবং ফল গবেষকদের মতামতের ভিত্তিতে ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার’ না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরপরও পরিপক্ব ও নিরাপদ আম বাজারজাত নিশ্চিত করতে আমরা বাজার তদারকি করব। ”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সহজে আম পরিবহনের জন্য আগামী ১০ জুন থেকে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’ চালু হবে বলেও জানান তিনি।