Published : 31 Jul 2024, 10:41 PM
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশব্যাপী হত্যা, নির্যাতন, গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ‘গান-মিছিল’ কর্মসূচি পালন করেছেন সিলেটের নাট্য, সাংস্কৃতিক কর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
সিলেটের নাট্যসংগঠন নগরনাট, নাগরিক সংগঠন দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা ও সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের আয়োজনে বুধবার বিকাল ৪টায় সিলেট নগরীর চৌহাট্টাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে গান-মিছিল শুরু হয়।
নগরনাটের কার্যনিবাহী সদস্য অরূপ বাউলের কণ্ঠে ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা কারো দানে পাওয়া নয়’ গান দিয়ে শুরু হয় গান-মিছিল। পরে ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে নগরীর জিন্দাবাবাজার সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শেষ হয় গান-মিছিল।
গান-মিছিলে গান পরিবেশন করেন নগরনাটের কার্যনিবাহী সদস্য উজ্জ্বল চক্রবর্তী, সদস্য আঁখি, স্বর্ণা, তন্বী, শাওন, রাজন, দেবর্ষি, রাজ, রাজ্যেশ্বরী, তিন্নিসহ সিলেটের সাংস্কৃতিক কর্মীরা। এই কর্মসূচিতে গানের মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগানও দেন অংশগ্রহণকারীরা।
পরে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সমাবেশে কর্মসূচির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্য দেন সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম।
তিনি বলেন, “ছাত্র বিক্ষোভ দমনের নামে দেশে স্মরণকালের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ সংগঠিত হয়েছে। যা আমাদের মানবিক চেতনাকে ক্ষুব্ধ করেছে। সরকারের ব্যর্থতা, উষ্কানি ও নৃশংসতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র প্রত্যক্ষ করে সারাদেশের মানুষের মত আমরা স্তম্ভিত, ব্যথিত ও সংক্ষুব্ধ।
“মানুষ হিসেবে বিবেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সেই তাড়না থেকে এই হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে আমাদের স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করতে পথে নেমেছি।"
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদউল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন বলেন, " এই যে নিরীহ শিক্ষার্থীদের হত্যা করা হয়েছে আমরা মনে করি এটা রাষ্ট্রীয় গণহত্যা। এই গণহত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত আমরা চাই। এবং তদন্তের মাধ্যমে প্রতিটি হত্যার আলাদা আইন প্রক্রিয়া বিচার হবে এটা আমাদের মুখ্য দাবি।”
দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা- সমন্বয়ক দেবাশীষ দেবু বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানাচ্ছি। পাশাপাশি এই আন্দোলন থেকে যদি মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হয় আমরা এরও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু যেকোনো কারণে একটি স্বাধীন দেশে নির্বিচারে হত্যা করা চলতে পারে না। তাই এসব হত্যাকাণ্ডের আমরা বিচার দাবি করছি।"
নগরনাটের কার্যনিবাহী সদস্য অরূপ বাউল বলেন, “যেকোনো ইস্যুকে কেন্দ্র করে এই দেশে হত্যাকাণ্ড করা হয়। কারণ বিচার নেই এই দেশে। চলমান এই ছাত্রদের আন্দোলনে শিশু, যুবক, বৃদ্ধ, ছাত্র, ব্যবসায়ী, শ্রমজীবীসহ সব ধরনের মানুষকে হত্যা হয়েছে। আমরা মনে করি এই নির্বিচারে হত্যার দায় সরকারি বাহিনীর। আমরা যেহেতু সংস্কৃতি কর্মী তাই আমরা গানে গানে সরকারের এই হত্যাযজ্ঞের বিচার চেয়েছি রাজপথে।”
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের সভাপতি ডা. শাহজামান চৌধুরী বাহার, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সিলেট বিভাগীয় সভাপতি সৈয়দা শিরিন আক্তার, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক দিলারা রহমান, রাজনৈতিক সংগঠক অ্যাডভোকেট আনসার খান, উজ্জ্বল রায় ও রেজাউল কিবরিয়া, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাবেক সভাপতি মনির হেলাল, আইনজীবি অরূপ শ্যাম বাপ্পি ও জাকিয়া জালাল, নাট্যকর্মী নাহিদ পারভেজ ও বাপ্পী ত্রিবেদী, সংস্কৃতিকর্মী রাজীব রাসেল ও দেবজ্যোতি দেবু, স্থপতি প্রসেনজিৎ রুদ্র, আয়কর উপদেষ্টা মুখলেছুর রহমান, যুব ইউনিয়নের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিউর রাফু, সাবেক ছাত্রনেতা খালেদ মুরশিদ মুন্না, কিবরিয়া চৌধুরী সুমন ও শহীদুজ্জান পাপলু, প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার আবাসিক কর্মকর্তা রোমেনা বেগম রোজী, শিশু কিশোর সংগঠন উষা'র পরিচালক নিগাত সাদিয়া।
সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র-জনতা হত্যার বিচার ও সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে হত্যার দায় নিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চা ও বাংলাদেশ জাসদ।
বুধবার বিকাল ৪টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট জাকির আহমদের সভাপতিত্বে ও বাসদ জেলা সদস্য সচিব প্রণব জ্যোতি পালের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাম জোট সিলেট জেলার সমন্বয়ক বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদক সিরাজ আহমদ, সিপিবি জেলা সভাপতি সৈয়দ ফরহাদ হোসেন, বাসদ জেলা আহ্বায়ক আবু জাফর, সাম্যবাদী আন্দোলনের মহীতোষ দেব, বাসদ (মার্কসবাদী)র সঞ্জয় কান্ত দাশ।
বক্তারা অবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহার, সেনাবাহিনী-বিজিবিকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-আবাসিক হল খুলে দেয়া, নিহতদের ক্ষতিপূরণ, হত্যাযজ্ঞের দায় নিয়ে সরকারের পদত্যাগ ও হত্যায় জড়িতদের বিচার ও শাস্তি দাবি করেন।
এসময় জাসদ সিলেট মহানগর শাখার সহসভাপতি ফেরদৌস আরবি, সিপিবি জেলা সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাসান, বাসদ জেলা শাখার সদস্য জুবায়ের আহমদ চৌধুরী, উদীচী জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল মিন্টু, বাংলাদেশের শ্রমিক জোটের জেলা সাধারণ সম্পাদক প্রবীর দেব, চা শ্রমিক ফেডারেশনের অজিত রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে নিহতদের স্মরণে কালো পতাকা মিছিল বের হয়।