Published : 23 Jun 2025, 11:21 AM
প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ার ও এর আশপাশের এলাকায় পর্যটকবাহী হাউসবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন।
রোববার রাতে সুনামগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকা প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতি রোধকল্পে হাওরের ওয়াচ টাওয়ার ও আশপাশের এলাকায় পর্যটকবাহী হাউসবোটের যাতায়াত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হলো। একই সাথে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর যাবতীয় কার্যকলাপ থেকে সকলকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলো।
“এছাড়া সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্পট ভ্রমণের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন, সুনামগঞ্জ থেকে বিভিন্ন সময়ে জারিকৃত নির্দেশনাসমূহ আবশ্যিক প্রতিপালনের জন্য অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
পর্যটকদের নিয়ে হাউসবোটগুলো প্রথমে হাওরের ওয়াচ টাওয়ার এলাকায় যায়। এরপর সেখান থেকে টেকেরঘাট এলাকায় গিয়ে বোটেই রাত যাপন করেন পর্যটকেরা।
দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটকদের চাপে হুমকির মুখে পড়েছে টাঙ্গুয়ার হাওর। এ কারণে পরিবেশবিদরা উদ্বেগ জানিয়ে আসছিলেন।
সংকটাপন্ন এই হাওরের জীববৈচিত্র্য, প্রকৃতি, পরিবেশ ও সৌন্দর্য রক্ষায় পর্যটকদের সচেতন করতে ২১ জুন শনিবার জেলা প্রশাসন থেকে ১৩টি নির্দেশনা জারি করা হয়।
এর একদিন পরই হাওরের ওয়াচ টাওয়ার এলাকায় হাউসবোট প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিল প্রশাসন।
জেলা প্রশাসনের নিদের্শনা
উচ্চশব্দে গান-বাজনা করা বা শোনা যাবে না। হাওরের পানিতে অজৈব বা প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য/বর্জ্য ফেলা যাবে না। মাছ ধরা, শিকার বা পাখির ডিম সংগ্রহ করা যাবে না। পাখিদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে কোনো ধরনের বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। ডিটারজেন্ট, শ্যাম্পু বা রাসায়নিক ব্যবহার করা যাবে না। গাছ কাটা, গাছের ডাল ভাঙা বা বনজ সম্পদ সংগ্রহ করা যাবে না। কোর জোন বা সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করা যাবে না ও মনুষ্যসৃষ্ট জৈব বর্জ্য হাওরে ফেলা যাবে না। জেলা প্রশাসন নির্ধারিত নৌপথ ব্যবহার করতে হবে। লাইফ জ্যাকেট পরিধান করতে হবে। প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার হতে বিরত করতে হবে। দূর থেকে পাখি ও প্রাণী পর্যেবক্ষণ করতে হবে। ফ্ল্যাশ ছাড়া ছবি তুলতে হবে। স্থানীয় গাইড ও পরিষেবা গ্রহণ করতে হবে। ক্যাম্পফায়ার বা আগুন জ্বালানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টাঙ্গুয়ার হাওর একটি পরিবেশগত সংকটাপন্ন অঞ্চল। এই এলাকায় পর্যটন অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত হওয়া দরকার। কিন্তু অসচেতন পর্যটকরা সেটা না মেনে হাওরের সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করে জীববৈচিত্রের ক্ষতি করছেন। দীর্ঘদিন ধরে এই উৎপাত চললেও পর্যটকদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। অবশেষে এই কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।
পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত হাওরের ওয়াচ-টাওয়ার ও আশপাশের এলাকায় পর্যটকবাহী হাউসবোট চলাচল সম্পূর্ণ স্থগিত থাকবে বলে জানান তারা।
সুনামগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম বলেন, “আমরা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরের সংরক্ষিত এলাকায় হাউসবোটসহ সবধরনের পর্যটন নিষিদ্ধ করেছি। কেউ এটা অমান্য করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”