Published : 18 Jan 2024, 07:08 PM
বরিশাল নগরীতে তীব্র শীতের মধ্যে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় স্থবির জনজীবন। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছে শিশু শিক্ষার্থীরা। শীত ও বৃষ্টি উপেক্ষা করেও তাদের স্কুলে যেতে হচ্ছে।
বরিশাল আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক বশির আহমেদ জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত নগরীতে ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ বৃষ্টিপাত আরও দুই-একদিন অব্যাহত থাকবে।
সকালে জেলার তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে জানান তিনি।
জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক বশির বলেন, মেঘ ও বৃষ্টি কেটে গেলে জেলায় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া কুয়াশার সঙ্গে বৃষ্টিপাত শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এদিকে শীত ও বৃষ্টির মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকায় বিপাকে পড়েছেন শিশু শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগরীর একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা বলেন, “সিংহভাগ শিশু ঠান্ডায় আক্রান্ত। তাদের নাক দিয়ে সর্দি ঝড়ছে। সঙ্গে কাশিও রয়েছে। সরকারি কোনো নির্দেশনা নেই। আমাদের তো করার কিছুই নেই।”
নগরীর আমানতগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা সিমু বেগম বৃষ্টির মধ্যে তার শিশু কন্যাকে স্কুল থেকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুইদিন স্কুলে যাননি। স্কুলে না গেলে শিক্ষকরা মন্দ বলে। এ ছাড়া পড়াশুনায় পিছিয়ে পড়বে। তাই বাধ্য হয়ে মেয়ে সাহিদাকে নিয়ে স্কুলে গিয়েছিলাম।”
নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বীণা পানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুপুর আড়াইটায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে কোনো শিক্ষার্থী নেই। শিক্ষকরা সবাই বসে আছেন।
ওই স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা তানিয়া সুলতানা বলেন, “সকাল ১০টায় বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর অভিভাবকরা এসে তাদের সন্তানদের নিয়ে গেছেন। যে আবহাওয়া, সন্তানদের নিয়ে গেলে তো আমাদের করার কিছু নেই। সরকারি সিদ্ধান্ত না এলে আমাদের করার কিছু নেই।”
বরিশাল জিলা স্কুলের শিক্ষার্থী অনির্বান চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আবহাওয়া খারাপ। বৃষ্টির জন্য আরও শীত অনুভূত হচ্ছে। এর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা উচিত।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমাজের কার্যনিবাহী কমিটির সভাপতি জহিরুল ইসলাম জাফর বলেন, “মন্ত্রণালয় থেকে নোটিশ দিয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলে স্কুল বন্ধ রাখতে। বৃহস্পতিবার বরিশালে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকায় স্কুল বন্ধ করা হয়নি। কিন্তু বৃহস্পতিবার বৃষ্টিপাত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আসেনি। তাই ক্লাস হয়নি।”
তবে বৃহস্পতিবার নগরীর শহীদ আরজু মনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ছিল।
এ বিষয়ে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এ কে এম কামরুল আলম চৌধুরী বলেন, “শৈত্যপ্রবাহের কারণে বৃহস্পতিবার স্কুলে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার থেকে যথারীতি স্কুলের কার্যক্রম চলবে।”
এদিকে নগরীর প্রায় সব মাধ্যমিক স্কুলগুলো বন্ধ ছিল।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষার উপ-পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার থেকে ক্লাস হবে।”
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, “আমাদের যে নির্দেশনা রয়েছে এর বাইরে যাওয়ার তো কোনো ক্ষমতা নেই। কিন্তু অভিভাবকদের তো সচেতন হতে হবে।
“তাদের সন্তান যদি ঠান্ডায় অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে তারা আসবে না। আমাদের তরফ থেকে তো কোনো বাধা নেই। তারা যদি পড়াশুনায় পিছিয়ে পড়ে। তাহলে তাদের পুনরায় এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা শিক্ষকদের দেওয়া হয়েছে।”
এ বিষয়ে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিধান চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বর্তমানের আবহাওয়ায় শিশুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা উচিত। এ সময় শিশুদের উষ্ণ গরম জাতীয় খাবার ও পানি পান করাতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন- ‘সি’ ও ‘ডি’সহ জিংক খাওয়ানো দরকার।
বৃষ্টির মধ্যে বাইরে খেলতে গিয়ে কাপড় ভিজিয়ে ফেলে শিশুরা। সেগুলো পরিবর্তন করা উচিত। তা না হলে ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে জানান এই চিকিৎসক।