Published : 30 Dec 2024, 04:06 PM
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদসহ বিভিন্ন দাবিতে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত নগরের তালাইমারী মোড় অবরোধ করে রাখেন তারা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়ক দিয়ে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে দিচ্ছিলেন না। এতে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।
দুপুরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তারা পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন।
চন্দ্রিমা থানার ওসি মতিয়ার রহমান বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে আসামিদের বিচারের মুখোমুখি করাসহ দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন। এরপর সড়কটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এর আগে গত ১৬ ডিসেম্বর রুয়েটের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ভদ্রা হজর মোড় এলাকায় মারধরের ঘটনা ঘটে। এর জেরে নগরীর চন্দ্রিমা থানায় সাতজনকে আসামি মামলা দায়ের করা হলে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের একদিন পরে তারা আদালত থেকে জামিন পান।
এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা খবর পান মামলার অন্য চার আসামিও আদালতে হাজির হয়ে জামিন পেয়েছেন। এতেই শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
এ বিষয়ে ওসি মতিয়ার বলেন, “আসামিরা জামিনে আছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করে আমরা অভিযোগপত্র জমা দেব।”
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হল- হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং হারানো মালামাল জব্দের ব্যবস্থা করা, রাজশাহীর আবাসিক এলাকাগুলো অস্ত্র, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত করা, রুয়েটের আশপাশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, রুয়েটের আশেপাশের এলাকাগুলো চুরি ও ছিনতাই মুক্ত করা এবং তালাইমারী মোড়ে পুলিশ বক্স চালু করা।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী শাহিবা জুননুরাইন সেবা বলেন, “গত ১৬ ডিসেম্বর ঘটে যাওয়া গর্হিত ঘটনার প্রেক্ষিতে দোষীদের বিচারের দাবিতে এবং রুয়েট ক্যাম্পাস ও এর আশেপাশে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য বন্ধসহ পাঁচদফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। আমাদের দাবি মানা না হলে আন্দোলন চলবে।”
একই বিভাগের শিক্ষার্থী সোনালি বলেন, “গ্রেপ্তারের একদিন পর আসামি দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ যতদিন দৃশ্যমান কার্যক্রম না দেখাতে পারবে, ততদিন এই আন্দোলন চলবে। বাকি আসামিদের আজই গ্রেপ্তার করতে হবে।”
ছাত্রদের ওপর হামলার ওই ঘটনায় রুয়েটের ১৫ শিক্ষার্থী আহত হন। এছাড়া রুয়েটের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের উপ-পরিচালক সহযোগী অধ্যাপত মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনও আহত হন। এ নিয়ে পরদিন বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক এস এম আব্দুর রাজ্জাক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আসামিদের শাস্তির আওতায় না এনে জামিন দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। এই হামালার ঘটনায় আসামিদের শাস্তির আওতায় না আনা হলে পরবর্তীতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায় পুলিশ-প্রশাসনের।”
রুয়েটের ছাত্র-কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক রবিউল ইসলাম সরকার বলেন, “আসামিরা সবাই জামিন পেয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়েছিল। তারা সড়ক অবরোধ করে।
“পুলিশ আশ্বাস দিয়েছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার অভিযোগপত্র দিয়ে আসামিদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এ আশ্বাস পেয়ে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিয়েছেন। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক।”