Published : 23 Oct 2024, 08:41 PM
সরকার পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট জটিলতায় ছয় সপ্তাহ ধরে মজুরি পাচ্ছেন না রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানি শ্রমিকরা। প্রতিদিন তারা কাজ বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করায় বাগানের উৎপাদিত পাতাও নিলামে পাঠানো যাচ্ছে না।
ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) অধীন ১৬টি বাগানের মধ্যে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় রয়েছে চারটি। এসব বাগানের শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন।
ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার বিকালে উপজেলার চণ্ডীতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল করেন।
সেখানে চণ্ডিছড়া চা বাগানের শ্রমিক দিপালী মুণ্ডা বলেন, “৬ সপ্তাহ ধরে আমাদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে না। এতে শ্রমিকরা অনেকে না খেয়ে দিনযাপন করছে। দোকান বাকি বা ধারকর্জ করে খেয়েছে, এখন তাও পাচ্ছে না।
“মজুরি না পেলে তো আমরা না খেয়ে মারা যাব। সব মজুরি না পেলে বাগান খুলতে দেওয়া হবে না।”
এনটিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সরকার পরিবর্তনের পর এনটিসি চেয়ারম্যানসহ আটজন পরিচালক পদত্যাগ করায় অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে চা শ্রমিক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে।
এনটিসির মালিকানাধীন ১৬টি চা বাগানের মধ্যে লস্করপুর ভ্যালির চণ্ডিছড়া, সাতছড়ি, তেলিয়াপাড়া ও জগদীশপুর চা বাগানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেন।
তারা দৈনিক ১৭০ টাকা মজুরি হিসাবে প্রতি সপ্তাহে হাজিরা পান। কিন্তু এনটিসির ১৬টি বাগানেই ২২ অগাস্ট থেকে অর্থ সংকটে মজুরি দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামে এবং বাগানের চা নিলামে পাঠানো বন্ধ করে দেয়।
আন্দোলনের মধ্যে গত দুর্গা পূজায় শ্রমিকদের বোনাস এবং তিন সপ্তাহের মজুরি দেয় বাগান কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে তাদের ছয় সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। চুনারুঘাটের চারটি বাগানের কয়েক লাখ কেজি তৈরি চা আটকা পড়েছে। বাগানে নষ্ট হচ্ছে লাখ লাখ কেজি কাচা পাতা।
চণ্ডিছড়া বাগান পঞ্চায়েতের সভপতি রনজিত কর্মকার বলেন, “মজুরি না পেয়ে শ্রমিকরা খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছে। বকেয়া মজুরি প্রদান করা না হলে আমরা বাগান চালু করবোই না। নিলামের কোনো চালানও দেব না। পাতা বিক্রি করে আমাদের মজুরি দিতে হবে।”
চণ্ডিছড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক সেলিমুর রহমান বলেন, “বোর্ডের সমস্যার কারণে আমরা আর্থিক সংকটে ভুগছি। তারপরও আমরা তাদের পূজার বোনাস ও তিন সপ্তাহের মজুরি দিয়েছি।
“আমরা চেষ্টা করছি যাতে মজুরি নিয়মিত করা যায়। কিন্তু নিলামে চা না পাঠাতে পারার কারণে বাগানে দেড় লাখ কেজি চা আটকা পড়েছে।”
যোগাযোগ করা হলে এনটিসির মহাব্যবস্থাপক কাজী এমদাদুল হক বলেন, “শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের পরিচালনা পর্ষদ পূর্ণাঙ্গ পুনর্গঠন না হওয়ার কারণে ঋণ পেতে সমস্যা হচ্ছে।
“আশা করছি, শিগগিরই পরিচালনা পরিষদের পূর্ণাঙ্গ গঠন হবে এবং শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করতে পারব।”
তিনি বলেন, “এখন চা বাগানগুলোতে উৎপাদনের সময়। এখন যদি শ্রমিকরা কর্মবিরতিতে যান, তাহলে চা বাগানের অনেক ক্ষতি হবে।”