Published : 06 Aug 2024, 01:20 AM
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন ঢাকার সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
এদিন তিন হাসপাতালেই অন্তত ১৭ জনের মরদেহ এসেছে।
হামলা হয়েছে সরকারি ভবন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাসা ও অফিসেও।
এর মধ্যে সাভারের জনস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬ জন, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮ জন এবং আশুলিয়ার নারী ও শিশু হাসপাতালে তিনজনের মরদেহ আনা হয়। তাদের সবাই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
জনস্বাস্থ্য সামাজিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাউকে মৃত আনা হয়েছে, কেউ হাসপাতালে এসে মারা গেছেন।
“যারা মারা গেছেন তাদের সবার বুলেট ইনজুরি। তাদের কারও মাথায়, কারও পেটে গুলি লেগেছে। আমাদের এখানে ৩০ জনের মত ভর্তি করেছি।”
আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালের জুনিয়র অফিসার মো. পারভেজ বলেন, “আমাদের হাসপাতালে তিন জনকেই মৃত অবস্থায় আনা হয়। তাদের সবারই মাথায় গুলি ছিল।”
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার সজীব রায় “৮ জনের সবার মৃত্যুর কারণ ফিজিক্যাল অ্যাসল্ট।”
গুলিবিদ্ধ হয়ে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে মাছ ব্যবসায়ী রমজান আলী ও সাভার পৌর এলাকার ভাগলপুর মহল্লার আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে রফিকুলের পরিচয় পাওয়া গেছে। বাকিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতাল থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিকিৎসক জানিয়েছেন।
থানায়, সরকারি অফিসে ক্রমাগত হামলা
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১১ টার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় কয়েক শতাধিক আন্দোলনকারী সড়ক অবরোধ করে। এ সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। পরে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলতে থাকে।
এর পর্যায়ে মাছ ব্যবসায়ী রমজান আলী গুলিবিদ্ধ হন। তাকে চিকিৎসার জন্য সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত্যু ঘোষণা করেন।
রমজান বাইপাইলে আড়তে মাছ বিক্রি করতেন।
দুপুরের পরে সাভার বাসস্ট্যান্ড, রেডিও কলোনি ও আশুলিয়ার বাইপাইলে দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেখানেও অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়।
বিকালে সাভার আশুলিয়া ও ধামরাই থানার সামনে জড়ো হয়ে আন্দোলনকারীরা পুলিশকে অবরুদ্ধ করে।
এক পর্যায়ে তারা ধামরাই উপজেলা, ধামরাই থানা, পৌরসভায় ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন ও গাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়।
ধামরাই থানায় আগুন ধরিয়ে দিলে ১০টির বেশি যানবাহন পুড়ে যায়। এ সময় থানা পুলিশের রেশন লুট করা হয়।
জীবন বাঁচাতে ধামরাই থানা পুলিশ সাদা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে প্রাণ রক্ষা করেন।
আন্দোলনকারীরা ধামরাইয়ের বিভিন্ন স্থানে ২০ থেকে ২৫টি মটরসাইকেলেও আগুন ধরিয়ে দেয়।
সন্ধ্যায় আশুলিয়া থানার রান্না ঘরে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। পুলিশ তখন গুলি ছুড়ে। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
বিকেল ৩ টার দিকে সাভার থানা রোড়ে স্লোগান দিতে দিতে কয়েকশ আন্দোলনকারী এগিয়ে যায়।
এ সময় সাভার প্রেস ক্লাবে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে লুটপাট করা হয়। পরে তারা সাভার মডেল থানার দিকে এগিয়ে আসে।
সাভার মডেল থানার একশ গজ সামনে আন্দোলনকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় আন্দোলকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশও গুলি ছোড়ে। এতে অন্তত ১০ গুলিবিদ্ধ হয় এবং রফিকুল নামে এক যুবক নিহত হয়।
সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনকারীরা থানা ও পোস্ট অফিসের ভেতরে ঢুকে আগুন দিয়ে লুটপাট ও ভাঙচুর চালায়।
তখন অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ সদস্যরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান। পরে আন্দোলনকারীরা থানার ভেতরে থাকা সব যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয়।
সাভার পৌর কমিউনিটি সেন্টারে থাকা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সদের মালামাল, রেশন লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা।