Published : 28 May 2025, 09:25 AM
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কুমিল্লায় জমে উঠেছে পশুর হাট। এবার ‘যুবরাজ’, ‘বাহুবলী’, ‘বস’, ‘মেসি’, ‘নেইমার’, ‘নবাব’ ও ‘সুলতান’সহ বিভিন্ন নাম দিয়ে প্রিয় পশুটি হাটে তুলেছেন খামারিরা; যা ক্রেতার নজর কেড়েছে।
আদর-যত্নে বড় করা এসব গরু কোরবানির জন্য বিক্রির উদ্দেশে লালনপালন করা হলেও মালিকের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে পরিবারের সদস্যদের মতই; যা থেকে এমন নামকরণ করা হয়েছে বলে জানান খামারিরা।
খামারিরা বলছেন, এ বছর মাঝারি আকারের দেশি গরুর চাহিদা বেশি। তবে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অবৈধ পথে গরু না আসলে লাভবান হবেন তারা। সাধারণত কুমিল্লার খামারে বিদেশি প্রজাতির হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান, জার্সি, শাহীওয়াল এবং দেশি রেড চিটাগং জাতের গরু পালন করা হয়।
কুমিল্লা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, এ বছর কুমিল্লায় কোরবানির ঈদে পশুর চাহিদা রয়েছে দুই লাখ ৩৭ হাজার ৫৮৬টি। আর কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে দুই লাখ ৬০ হাজার ৭৫২টি।
বিভিন্ন খামার ঘুরে দেখা গেছে, বিশাল শরীরের চকচকে কালো রঙের একটি গরুটির স্বভাব ও চলাফেরার জন্য নাম রাখা হয়েছে ‘যুবরাজ’। এক হাজার কেজির বেশি ওজনের গরুটি দাম ১৫ লাখ টাকা চাচ্ছেন কুমিল্লা সদর উপজেলার দুর্গাপুর উত্তরের সানি এগ্রো ফার্মের মালিক সানি।
‘যুবরাজের’ প্রিয় খাবার ঘাস, তবে তার মাথা ঠান্ডা রাখতে দিনে তিন বার গোসল করাতে হয় বলে জানান সানি। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে খামারের প্রতিটি গরু বড় করছেন তিনি। প্রাকৃতিক খাবার খেলে গরু সুস্থ থাকে। শুধু কোরবানির জন্য নয় কেউ চাইলে বাড়িতে নিয়েও গরুটিকে পালতে পারেন।
বস, বাহুবলী, মেসি, নেইমার, পুতুলসহ নানা আকর্ষণীয় নামে গরু লালনপালন করা হচ্ছে কুমিল্লার ছোটরা এলাকার নূর জাহান ফার্মে। খামারটিতে ছোট আকারের লাখ টাকা থেকে শুরু হরে ১০ লাখ টাকার বেশি দামেরও গরুর লালনপালন করা হচ্ছে।
খামারের মালিক মো. রিপন বলেন, ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হলেও শখের বশেই প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে এসব গরু বড় করা হয়। কোরবানিকে সামনে রেখে এমন নাম রেখে ক্রেতাদের আকর্ষণ করা হয়।
খামার থেকে গরু কিনতে আসা নগরের ঝাউতলা এলাকার ফেরদৌসী জাহান বলেন, “ছেলেকে নিয়ে খামারে গরু দেখতে এসেছি। বাজারে যাওয়া অনেকটা ঝক্কি-ঝামেলা মনে হয়। এ ছাড়া শহরের বাড়িতে গরু রাখাও ঝামেলা। তাই খামার থেকে গরু কিনে কোরবানি পর্যন্ত এখানেই রাখলে আলাদা কোনো দায় থাকে না।”
নুরজাহান ফার্মে গরু কিনতে এসেছেন শহরের চানপুর এলাকার আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, “হাট থেকে গরু-ছাগল কেনার মজাই আলাদা। তারপরও বিভিন্ন খামারে গিয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে গরু পাওয়া যায় কি-না, তাই ঘুরে ঘুরে দেখছি। এবার খামারেও ভালো সাইজের গরু আছে। তবে দাম গতবারের তুলনায় একটু বেশি।”
তিনতলা ভবনে গরুর খামার করেছেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ এলাকার লক্ষ্মীনগরের রাফি এগ্রো ফার্মের মালিক জুয়েল আহমেদ। এক জায়গায় বেশি গরু লালন-পালনের জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। এ বছর তার খামার থেকে কোরবানির হাটে যাবে অন্তত ৮০টি গরু।
জুয়েল আহমেদ বলেন, খামারে সর্বোচ্চ এক হাজার ২০০ কেজি ওজনের গরু লালনপালন করা হয়েছে। ৬০ হাজার থেকে শুরু করে পাঁচ লক্ষাধিক টাকার গরু রয়েছে তার খামারে।
তিনি বলেন, ভারতীয় গরু না আসলে লাভবান হবে প্রান্তিক খামারিরা। সরকারকে সেদিকে নজর রাখতে হবে। কারণ বড় খামারিদের গরু বিক্রি না হলেও তারা পরের বছরের জন্য রাখতে পারেন, কিন্তু প্রান্তিক খামারিরা সময় মত বিক্রি করতে না পারলে লোকসানে পড়েন।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার বলেন, প্রাকৃতিক খাবারে গরু পালনে উৎসাহিত হচ্ছে খামারিদের। যে কারণে খামারের গরুর প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। এ ছাড়া খামারি ও কৃষক পর্যায়ে যারা গরু এবং ছাগল পালন করছেন, তারা সবাই প্রাকৃতিক খাবারের ওপর নির্ভরশীল।
এ বছর কোরবানির ঈদে কুমিল্লায় চাহিদার চেয়ে ২৩ হাজারের বেশি পশুর উদ্বৃত্ত রয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটি কোরবানির গরুর হাটে জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ভেটেরিনারি চিকিৎসক দল থাকবে। সেখানে যদি কোনো গরুকে কৃত্রিম খাবার দিয়ে মোটাতাজা করা হয়েছে এরকম মনে হয়, তাহলে সেই পশু বিক্রয় অনুপযোগী বলে ঘোষণা করা হবে।
এ ছাড়া জেলায় যে পরিমাণ গরু ও ছাগল কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, তাতে ভারত বা পার্শ্ববর্তী অন্য কোনো দেশ থেকে পশু না আসলে খামারিরা লাভবান হবেন বলে মনে করেন এই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
চোরাই পথে গরু আসা বন্ধের পদক্ষেপ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে বিজিবি কুমিল্লা সেক্টর কমান্ডার কর্নেল রেজাউল কবির বলেন, গরুসহ সীমান্তে যেকোনো চোরাচালানের বিষয়ে সব সময় সতর্ক রয়েছে বিজিবি।
কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে যাতে ভারত থেকে কোনো চোরাই গরু ঢুকতে না পারে সেজন্য বাড়তি নজরদারি রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।