Published : 23 Jan 2024, 12:22 PM
মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে চুয়াডাঙ্গা ও সিরাজগঞ্জে তাপমাত্রা নেমেছে ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। কনকনে ঠান্ডায় স্থবির হয়ে পড়েছে দুই জেলার জনজীবন।
চুয়াডাঙ্গার আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক জাহিদুল হক জানান, এ মৌসুমে সোমবার পর্যন্ত জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি। মঙ্গলবার তা লাফিয়ে ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রিতে নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ছিল। মঙ্গলবার তা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিয়েছে। দিন রাতের তাপমাত্রার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য থাকছে না। এ কারণে সবসময়ই তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।
সোমবার রাত থেকেই শীতের তীব্রতা অনেক বেড়ে গেছে। রাতেই ধারণা করা হচ্ছিল তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি নিচে নামতে পারে। কিন্তু তাপমাত্রা নেমেছে আরও বেশি নিচে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের জ্যৈষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান, তাপমাত্রা কম হওয়ার পাশাপাশি সকালের দিকে ছিল ঘন কুয়াশা। বর্তমান পরিস্থিতি চলতে পারে আরো দু’একদিন। এর মধ্যেই বৃষ্টির পুর্বাভাসও আছে।
এদিকে তীব্র শীতে জেলায় মানুষ ঘরের বাইরে আসছেন কম। সকালের দিকে বের হচ্ছেন দেরি করে আর সন্ধ্যার পর থেকে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে নিম্ন আয়ের মানুষদের, তারা কাজ পাচ্ছেন না। অনেকে শহরে কাজের আশায় এসে অপেক্ষায় থাকছেন। রিকশা-ভ্যান চালকরাও যাত্রী পাচ্ছেন না। তবে চুয়াডাঙ্গায় সাপ্তাহিক হাটের দিন হওয়ায় পান বিক্রেতাদের শহরে আসতে দেখা গেছে।
কনকনে ঠান্ডার প্রভাব পড়েছে কৃষি ক্ষেত্রেও। সদর উপজেলার হাজরাহাটি গ্রামের পানচাষী রকিব হোসেন বলেন, মাঠে কাজ করা যাচ্ছে না। মাঠের শ্রমিকরা দেরি করে মাঠে আসছেন। তীব্র শীতের কারণে তাদের উপর জোর করাও যাচ্ছে না। কাজে বিঘ্ন ঘটছে।
তিনি বলেন, এ ছাড়া শীতে পান পাতা ঝরে যাচ্ছে। এ অবস্থা আরও কিছুদিন থাকলে পানচাষিদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।
এই কৃষক বলেন, পান ছাড়াও এখন বোরো মৌসুম। কৃষকরা বোরো ধান রোপণ করা নিয়ে ব্যস্ত। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশা থাকছে। এতে বীজতলার ক্ষতি হতে পারে।
এছাড়া তীব্র শীতের কারণে বেশ কিছুদিন ধরে জেলার হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ রেহেনা পারভীন বলেন, প্রতিদিন শিশু ওয়ার্ডে নতুন নতুন রোগী আসছে। শুধু সদর হাসপাতালেই গড়ে প্রতিদিন ৩০-৩৫ জন নতুন রোগী আসছে। বেশিরভাগই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ আসাদুর রহমান মালিক বলেন, এই সময়ে শিশুদের প্রতি আলাদা যত্ন রাখতে হবে। কোনোক্রমেই শিশু যাতে ঠান্ডা-কাশিতে আক্রান্ত না হয়। তাদের খাবার হতে হবে গরম। আগে রান্না করা ঠান্ডা খাবার শিশুদের খাওয়ানো যাবে না।
তারপরও কোনো কারণে শিশু অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় চুয়াডাঙ্গার মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের সকল বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তাপমাত্রা নামল ৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে
এদিকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে সিরাজগঞ্জ জেলায়ও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। প্রচণ্ড শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে জনজীবন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি মৌসুমে এখানে এটি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ অঞ্চলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলছে।
অপরদিকে, তাড়াশ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে এটি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
আবহাওয়ায় উচ্চ চাপ বলয়ের কারণে কুয়াশার তীব্রতাও বেড়েছে। জানুয়ারি মাস জুড়েই শীত অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।
এদিকে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামায় সোমবার দুপুর থেকে জেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আফসার আলী বলেন, ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা নেমে আসায় সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী জেলার ৩৮৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক স্তরের ১৯২টি মাদ্রাসায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। বুধবারও এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
অপরদিকে একই কারণে জেলার ১ হাজার ৬৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার তথ্য জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস. এম আব্দুর রহমান।
এদিকে, তীব্র শীত থেকে বীজতলা রক্ষায় ক্ষেতে পলিথিন মুড়িয়ে রাখছেন কৃষকরা ।গবাদিপশুকে কম্বল জড়িয়ে রাখতে হচ্ছে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, টানা শীত আর ঘন কুয়াশায় বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় ঠান্ডা থেকে বীজতলা রক্ষায় কৃষকদের বীজতলায় পলিথিন ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এতে ক্ষতির সম্ভাবনা খুব কম।