Published : 15 Oct 2023, 11:52 PM
কুমিল্লা নগরীতে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বিক্ষোভ মিছিলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা।
রোববার পরিষদের আট সদস্যদের একটি প্রতিনিধিদল কুমিল্লায় এসে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে বৈঠক করে এই বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
এ ছাড়া নেতারা হামলায় আহতদের সঙ্গে দেখা করে তাদের প্রতি সহানুভূতি ও পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
পরে নগরীর ঠাকুরপাড়া এলাকার শ্মশান কালী মন্দিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা।
এ সময় পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, হামলার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদেরকে অনুরোধ জানিয়েছি দ্রুত এই ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
“সেদিনের হামলার ঘটনায় পরিষদের কুমিল্লা জেলার সাধারণ সম্পাদক বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ করেছেন। পুলিশ প্রশাসন আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, দোষীদের দ্রুতই বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
তিনি আরও বলেন, “কুমিল্লায় দুই বছর আগেও পূজার সময় সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করা হয়েছে। এখন আবার সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দিয়ে কুমিল্লায় পূজার আগে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। এসব ঘটনা থামাতে হলে দ্রুতই দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।”
এ সময় উপস্থিত ছিলেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক নিম চন্দ্র ভৌমিক, প্রেসিডিয়াম সদস্য মিলন কান্তি দত্ত, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ সাহা মনি, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কুমিল্লা জেলার সভাপতি চন্দন রায়, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ তাপস কুমার বকশী, পূজা উদযাপন পরিষদের জেলার সাধারণ সম্পাদক বিষ্ণু কুমার ভট্টাচার্য, সাংগঠনিক সম্পাদক উত্তম সরকার, ছাত্র ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুদীপ্ত সরকার সূর্য, সাধারণ সম্পাদক শিপন বারৈ।
এদিকে এ ঘটনায় কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় ৫০০ জনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দিয়েছেন ঐক্য পরিষদের জেলা সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার বকশী।
কুমিল্লায় হামলা ‘পূর্বপরিকল্পিত’, ‘চোরাগোপ্তা হামলার’ আশঙ্কা
কুমিল্লায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মিছিলে যুবলীগ-ছাত্রলীগের হামলা
তিনি বলেন, “আমরা অভিযোগটি থানায় পাঠিয়েছি। ওসি সাহেবকে আমি ফোন করেও বিষয়টি জানিয়েছি। তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।”
তবে রাত সাড়ে ৯টার দিকে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আহমেদ সঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, “এখনও কোনো অভিযোগ আমার হাতে আসেনি। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ঐক্য পরিষদের নেতাকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার গত ৪ অক্টোবর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতি উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় বক্তব্য দেন।
এ সময় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা চলাকালে মদ খেয়ে মণ্ডপে নাচানাচি না করে ‘মাদকমুক্ত পূজা আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহার বলেন, “পূজা চলাকালে মদ খেয়ে নাচানাচি বন্ধ করতে হবে। আসুন, কুমিল্লা থেকেই শুরু হোক মাদকমুক্ত পূজা আয়োজন। মণ্ডপে লিখে দেবেন ‘মাদকমুক্ত পূজা’।”
তার এই বক্তব্য নিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। ওই বক্তব্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ শুক্রবার সকালে কর্মসূচি ঘোষণা করে। বাহারের বক্তব্যের প্রতিবাদ ছাড়াও এর সঙ্গে চারণ কবি রাধাপদ রায়ের ওপর হামলাকারীদের শাস্তির দাবিটি যুক্ত করা হয়।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা টাউন হল অডিটোরিয়ামে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের ব্যানারে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য বাহার। ‘শান্তিপূর্ণ কুমিল্লাকে অশান্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত কিছু স্বার্থন্বেষী মহল শারদীর দুর্গাপূজা নিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিভ্রান্তি ছড়ানোর’ প্রতিবাদে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
ওই সভায় বাহার দাবি করেন, তার বক্তব্যকে ‘বিকৃতভাবে’ উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে আবারও তিনি ‘মদমুক্ত পূজা’ করার আহ্বান জানান এবং ঘোষণা দেন, “কুমিল্লায় মদ ও মাদকমুক্ত পূজা হবেই।”
এ সময় তিনি শুক্রবারের জন্য দুটি কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে বলেন, কান্দিরপাড়ে সকালে মহানগর ছাত্রলীগ ও যুবলীগ এবং বিকালে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিকলীগ ও কৃষকলীগ শান্তি সমাবেশ করবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চাপা ক্ষোভ, অস্থিরতা ও উত্তেজনার মধ্যেই সকালে নগরীর নজরুল এভিনিউ এলাকার রাজস্থলী মন্দিরের সামনে জড়ো হতে থাকেন ঐক্য পরিষদের নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে কান্দিরপাড়ে জড়ো হন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা।
সমাবেশ শেষে ঐক্য পরিষদের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। সে সময় পুলিশ নজরুল এভিনিউ সড়কের কর ভবনের সামনে মিছিলকারীদের বাধা দেয়। প্রায় কাছাকাছি সময়ে কান্দিরপাড় পূবালী চত্বর থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী মিছিলকারীদের ওপর হামলা করে বলে অভিযোগ করেন ঐক্য পরিষদের নেতারা।
“হামলায় চারজন আহত হয়েছে। তারা হলেন- পরিষদের কর্মী সুশীল দাস, আদিত্য দাস, তন্ময় দাস ও কালিপদ শীল। এর মধ্যে আদিত্য দাসের মাথা ফেটে গেছে।