Published : 12 Feb 2025, 05:02 PM
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা থেকে একটি বন্য হাতির মরদেহ উদ্ধার করেছে বনবিভাগ।
বুধবার সকালে উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ঘুনিয়া এলাকার একটি তামাক ক্ষেত থেকে মরদেহটি উদ্ধারের পর বনবিভাগ বলছে, মঙ্গলবার রাতে হাতিটির মৃত্যু হতে পারে।
এ নিয়ে এক বছরে সাতটি হাতি মারা গেছে জানিয়ে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মারুফ হোসেন বলেন, সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কক্সবাজার উত্তরের বনে প্রায় ৭০- ৮০টির মতো হাতি থাকতে পারে।
বনবিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এক বছরে মারা যাওয়া সাত হাতির মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছে দুটি। আর এই সময়ে হাতির আক্রমণে মানুষ মারা গেছে তিনজন ও গুরুতর আহত হয়েছেন আরও দুজন। সরকারি হিসাবে, তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে নয় লাখ ৭০ হাজার টাকা।
এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কক্সবাজারের উত্তরের বন হাতিশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘নেকম’ এর জ্যেষ্ঠ প্রকল্প কর্মকর্তা শফিক রহমান হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে জানান, বনভূমি কমে যাওয়ায় কমেছে হাতির বিচরণক্ষেত্র, এতে করে কমে গেছে তাদের খাদ্যের যোগান। যার কারণে লোকালয়ে চলে আসছে হাতি।
তিনি বলেন, বনবিভাগের জায়গায় অনেকে চাষাবাদ করেন। সুতরাং অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ক্ষতিপূরণ পায় না। যার কারণে হাতির আক্রমণ ঠেকাতে ইলেকট্রিক ফাঁদ পাতে, গুলি করে। এতে মারা পড়ছে হাতি।
এদিকে বুধবার মারা যাওয়া হাতির বিষয়ে বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেহরাজ জানান, খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জমির উদ্দিন জানান, রাতে হাতিটি লোকালয়ে এসেছিল। তার বয়স আনুমানিক ৪০ বছর হবে বলে ধারণা করছে বনবিভাগ।
এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম বলেন, বন্যহাতি প্রায়ই লোকালয়ে চলে আসে। তখন ক্ষেতের ফসল নষ্ট করে। এ কারণে খেতের ফসল বাঁচাতে বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতে রাখে অনেকে।
“বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়েও হাতিটির মৃত্যু হতে পারে। কারণ মরদেহ পড়েছিল তামাক ক্ষেতে।”
তবে বৈদ্যুতিক ফাঁদে হাতিরটির মৃত্যু হয়েছে কিনা তা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে বলে জানান রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেহরাজ।
একের পর এক বন্যহাতির মৃত্যু নিয়ে জানতে চাইলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মারুফ হোসেন বলেন, “আমরা মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। হাতি লোকালয়ে এসে ক্ষতি করলে তার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে যেন মানুষের মাধ্যমে হাতির মৃত্যু না হয়।”
বন্যপ্রাণি নিয়ে কাজ করা শফিক রহমান পরামর্শ দিয়ে বলেন, হাতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। হাতির জন্য একটা অ্যাকশন প্ল্যান আছে সেটাকে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। আর মানুষের ক্ষতিপূরণ পাওয়াটাকে আরো সহজ করতে হবে।
অল্প কিছু হাতি বেঁচে আছে, তাদের রক্ষায় সরকারি-বেসরকারি তড়িৎ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন শফিক।