Published : 12 Jun 2023, 03:14 PM
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার পৌরসভা নির্বাচনের একটি ওয়ার্ডে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আরেক কেন্দ্রে ভোটার ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে।
পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের স্বপ্নডানা একাডেমির মহিলা কেন্দ্রের সামনে মারামারিতে জড়িয়েছেন দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা।
'ডালিম' প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী শব্দর আলী ভূঁইয়া ও 'উটপাখি' প্রতীকের জাহাঙ্গীর হোসেনের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়৷ জাহাঙ্গীর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর।
খবর পেয়ে ব়্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উভয়পক্ষের লোকজনকে ধাওয়া দেয় এবং লাঠিচার্জ করে৷
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর তর্কের এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের লোকজন মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে৷ এ সময় হাতবোমা ছুড়ে মারতেও দেখা যায়৷ একটি হাতবোমা বিস্ফোরিত হয়৷
এ ছাড়া কেন্দ্রটি থেকে কয়েক মিটার দূরে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর বাড়ির সামনে লাল স্কচটেপ মোড়ানো হাতবোমা সদৃশ দু’টি বস্তু পড়ে থাকতে দেখা যায়৷
এদিকে দুপুর সোয়া ১টার দিকে মারামারির ঘটনায় আহত জাহাঙ্গীর হোসেনকে অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নিতে দেখা যায়৷
তার ভগ্নিপতি মনির হোসেন বলেন, “প্রথম দফায় কৃষ্ণপুরা এলাকায় মহিলা ভোটকেন্দ্রের সামনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শব্দর আলী ও তার লোকজন জাহাঙ্গীর হোসেনকে মারধর করে৷ দ্বিতীয় দফায় নিজ বাড়ির সামনে তাকে আবারও মারধর করে৷
“লোহার রড ও লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে তাকে রক্তাক্ত করেছে৷ গুরুতর আহত অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে রূপগঞ্জের ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়েছে৷”
“পুলিশ-প্রশাসনের লোকজনের সামনে বর্তমান কাউন্সিলরকে মারধর করলো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তার লোকজন কিন্তু তারা কিছুই করলো না”- অভিযোগ করেন মনির৷
জেলা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (‘গ’ সার্কেল) আবির হোসেন বলেন, “কেন্দ্রের সামনে বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটে৷ আমরা উপস্থিত হয়ে ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়৷ পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে৷”
মারধরের অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে
এদিকে পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নাগেরচর মাদরাসা ভোটকেন্দ্রে ভোটার ও স্বতন্ত্র এক মেয়র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে জানিয়ে মারধরের শিকার মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, “আমি ভোট দিয়া বের হবার পরেই উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম শরীফ ও তার লোকজন আমার শার্টের কলার ধরে চর-থাপ্পর দিতে থাকে৷
“আমি নাকি নৌকায় ভোট না দিয়া অন্য মার্কায় ভোট দিছি, এমনটা কেন করছি, এই বইলা মারতে থাকে৷ তারা মারতে মারতে বলে, নৌকায় কেন ভোট দেস নাই?"
“শুধু আমারে না, আরও কয়েকজনকে তারা মারছে৷ সবাইরে নৌকায় ভোট দিতে তারা বাধ্য করতেছে৷”
এই ৫ নম্বর ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমানের বাড়ি৷ তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি এবং সাবেক পৌর মেয়র৷
'জগ' প্রতীকের প্রার্থী হাবিবুর রহমান বলেন, “নৌকার প্রার্থী সুন্দর আলী ও তার লোকজন ৫ নম্বর ওয়ার্ড ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কেন্দ্র দু'টি দখলে রেখেছে৷ তারা বুথের ভেতর ঢুকে জোর করে নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করতেছে৷ বহিরাগতরা কেন্দ্রে ঢুকে ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছে, মারধর করতেছে৷”
হাবিবুর রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরীফ ও পৌর যুবলীগের শামীম মিয়া কেন্দ্রে সাধারণ ভোটার ও আমাদের কর্মী-সমর্থকদের মারধর করেছে৷ রয়েল ও কামালসহ চারজনরে তারা মারছে৷ রয়েলকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হইছে৷
“এ এলাকাটি আমাদের নিজের৷ এখানে আমাদের ৯৫ শতাংশ ভোট আছে৷ এই কারণে কেন্দ্রটিকে দখলে নিয়ে রেখেছে তারা৷”
অভিযোগ প্রসঙ্গে কয়েকবার মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ছাত্রলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম শরীফের মন্তব্য পাওয়া যায়নি৷
তবে নৌকার প্রার্থী সুন্দর আলী বলেন, “সব জায়গায় সুষ্ঠু ভোট হচ্ছে৷ আমার কোনো লোক বা সমর্থক কাউকে বাধা দিচ্ছে না৷ ৫ নম্বর ওয়ার্ডে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে মারামারি হইছে শুনছি৷ আমার পক্ষে কেউ বাধা বা মারধর করছে এমন খবর পাইনি৷ ”
এ কেন্দ্রে নারিকেল গাছ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী পোলিং এজেন্ট মোহাম্মদ খোকন বলেন, “বুথে ঢুকে নৌকার এজেন্ট ভোটারদের নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করছে৷ শুরু থেকেই এমন চলতেছে৷ সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে বললেও কিছু করছেন না৷ ভোটের কোনো পরিবেশই নাই৷ কিছু বলতেও পারতেছি না ভয়ে৷”
নাগেরচর মাদরাসার পুরুষ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. শাহজাহান বলেন, “কিছু নির্বোধ এসে ঝামেলা তৈরির চেষ্টা করেছে। আমি পুলিশের সহায়তায় তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেছি। দুইবার ধমক দিয়েছি। তারা কথা শোনেনি৷ আমি তখন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।”
তবে কেন্দ্রটিতে ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “একটানা ঝামেলা হচ্ছে না৷ ফাঁকে ফাঁকে হচ্ছে তাই ভোট বন্ধ করার প্রয়োজন হয়নি৷”
নাগেরচরের এ কেন্দ্রটিতে বিশৃঙ্খলার খবর পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ব়্যাব ও পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন৷ এ সময় জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেলের কাছে কেন্দ্র দখল ও ভোটারদের মারধরের অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমান৷
পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, “সবগুলো কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন আছে৷ কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি৷ উৎসবমুখর পরিবেশে মানুষ ভোট দিচ্ছে৷
“ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সাথে টুকটাক কথা-কাটাকাটি হয়৷ পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে৷”