Published : 04 Feb 2025, 05:31 PM
সবসময়ই নিজেকে এক ধাপ এগিয়ে রাখতে ভালোবাসেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। এজন্য অনেক সমালোচনাও শুনতে হয় তাকে। কিন্তু নিজের অভিমত বদলাননি কখনও। ক্যারিয়ারের শেষ ধাপে এসেও বললেন তাই। পর্তুগিজ তারকা বললেন, লিওনেল মেসি, পেলে কিংবা মারাদোনা-মানুষ যাকে ইচ্ছা পছন্দ করতে পারে; কিন্তু পরিসংখ্যানের আলোয় তিনিই সেরা।
সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারে অসংখ্য রেকর্ড ভেঙেছেন পাঁচবারের ব্যালন দ’র জয়ী। ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে অনেক দিন আগে থেকেই সর্বোচ্চ গোলের মালিক তিনি। ৪০তম জন্মদিনের দুই দিন আগে সোমবার রাতে ছুঁয়েছেন তিনি নতুন এক অনন্য মাইলফলক; এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্লাব আল ওয়াসলকে ৪-০ গোলে হারায় তার দল আল নাস্র। ক্লাব ক্যারিয়ারের যা তার ৭০০তম জয়।
এই ম্যাচে জোড়া গোল করেন রোনালদো। তার ক্যারিয়ারে মোট গোল এখন ৯২৩টি।
এই দিনেই এল চিরিনগিতো টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকার অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন রোনালদো। এরই এক পর্যায়ে ওঠে, সমসাময়িক ফুটবলারদের মধ্যে ‘কে সেরা’ প্রসঙ্গ। উত্তরে পরিসংখ্যানে চোখ রাখতে বলেন রেয়াল মাদ্রিদের হয়ে চারটিসহ মোট পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী তারকা।
“ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলস্কোরার কে? বিষয়টা সংখ্যার। কথা শেষ।”
“ইতিহাসের কোন ফুটবলার হেড করে, বাঁ পা দিয়ে, পেনাল্টি থেকে, ফ্রি কিকে সবচেয়ে বেশি গোল করেছে? আরেক দিন এটা দেখছিলাম এবং বাঁ পায়ের খেলোয়াড় না হয়েও, আমি ইতিহাসে বাঁ পায়ে বেশি গোল করাদের তালিকায় সেরা দশে আছি। একই সঙ্গে হেড করে, আমার ডান পায়ে এবং পেনাল্টি থেকেও, সবক্ষেত্রে।”
গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে ফুটবল বিশ্বকে শাসন করেছে দুটি নাম, রোনালদো ও মেসি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই একজনের নাম উঠলে তুলনায় চলে আসেন অন্যজন। বিশ্বের সেরা ফুটবলারের প্রশ্নেও তাই।
এখানেও রোনালদো বিবেচনায় নিতে বললেন পরিসংখ্যানে দৃষ্টি দিতে।
“আমি সংখ্যার বিষয়ে কথা বলছি। আমার মনে হয়, বর্তমানে আমিই সবচেয়ে পরিপূর্ণ খেলোয়াড়। আমার মতে, এটা আমিই। ফুটবলে আমি সবকিছুই ভালোভাবে করি, আমার মাথা দিয়ে, ফ্রি কিকে, বাঁ পায়ে। আমি ক্ষীপ্র, আমি শক্তিশালী।”
“একটা বিষয় হলো পছন্দের-আপনি মেসি, পেলে, মারাদোনাকে পছন্দ করতে পারেন এবং এই ব্যাপারটাকে আমি সম্মান করি, কিন্তু… আমি সবচেয়ে পরিপূর্ণ খেলোয়াড়। আমার চেয়ে ভালো কাউকে দেখি নাই আমি এবং এটা আমি মন থেকেই বলছি।”
এই বয়সের অনেক আগেই অধিকাংশ ফুটবলার বুটজোড়া তুলে রাখেন। কিন্তু রোনালদো ছুটছেন এখনও চেনা ছন্দে-ক্লাব ও জাতীয় দল, সবখানেই। হাজার গোলের স্বপ্ন পূরণের পথে দারুণভাবেই এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নতুন বছরে তার গোল হয়ে গেল সাতটি। সবশেষ ১১ ম্যাচে গোল করেছেন ১৫টি।
চটজলদি তার অবসরের ভাবনাও নেই। এই বয়সেও এভাবে ছুটে চলার প্রেরণা কী তার, বললেন সেই কথাও।
“আমি খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মানসিকতার। এতটাই যে, মাঝেমধ্যে নিজের অর্জন সম্পর্কেই ভুলে যাই। কারণ, এতে আমি আরও বেশি কিছু করার এবং প্রতি বছর আরও ভালো করার অনুপ্রেরণা পাই… আমার মনে হয়, অন্যদের থেকে এখানেই আমার পার্থক্য। আমার অবস্থানে অন্যরা হয়তো ১০ বছর আগেই ফুটবলকে বিদায় বলে দিত। আমি আলাদা, কথা শেষ।”
পর্তুগিজ ক্লাব স্পোর্তিংয়ে ক্যারিয়ার শুরুর পর, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে দুই মেয়াদে খেলার মাঝে রেয়াল মাদ্রিদ ও ইউভেন্তুসে আলো ছড়ান রোনালদো। এরপর ২০২৩ সালে নাম লেখান সৌদি আরবের ক্লাব আল নাস্রে।
সৌদি ফুটবলের মান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে। এখানে ঘোর আপত্তি রোনালদোর।
“মানুষ না জেনেই তাদের মতামত দেয়। তারা অনেক বেশি কথা বলে।”
ক্লাব ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গৌরবময় সময় রেয়াল মাদ্রিদে কাটিয়েছেন রোনালদো। স্প্যানিশ ক্লাবটির হয়ে মোট ১৫টি শিরোপা জয়ের পথে রোনালদো ম্যাচ জয়ের স্বাদ পান মোট ৩১৫টি। গোল করেন রেকর্ড ৪৫০টি।
সান্তিয়াগো বের্নাবেউ থেকে তার বিদায়টা যদিও সেই অর্থে সুখকর হয়নি। ২০১৮ সালে সেখান থেকে চলে যাওয়ার সময়ের স্মৃতিচারণও করেন রোনালদো। বলেন, ওই সময় চুক্তি নিয়ে আলোচনায় ‘তার সঙ্গে ভালো আচরণ করা হয়নি।’
তবে, ভবিষ্যতে কোনো একটা সময় রেয়ালের ফেরার আশাও প্রকাশ করেন রোনালদো। অবশ্য সেটা খেলোয়াড়ি জীবন শেষে।