Published : 18 May 2025, 12:27 PM
ঘটার সময়ই পেপ গুয়ার্দিওলা ছিলেন বিস্মিত। ম্যাচ শেষেও তার কাছে কোনো উত্তর নেই। ম্যানচেস্টার সিটি কোচ জানেন না, কেন আর্লিং হলান্ড পেনাল্টি নিলেন না, কেন শট নিলেন ওমার মার্মুশ। পেছনের কারণ বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছেন বিশেষজ্ঞরাও। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি ওয়েইন রুনির ধারণা, ব্যর্থতার ভয় থেকেই পেনাল্টি নেননি হলান্ড।
এবারের এফএ কাপের ফাইনালের ভাগ্য গড়ে দেওয়া মুহূর্তগুলোর একটি সেটি। ওয়েম্বলিতে শনিবার ম্যাচে ষষ্ঠতম মিনিটে এগিয়ে যায় ক্রিস্টাল প্যালেস। ৩৩তম মিনিটে পেনাল্টি পায় ম্যানচেস্টার সিটি।
শুরুতে বলের দিকে এগিয়ে যান হলান্ড। পেনাল্টি নেওয়ার মূল দায়িত্ব তারই। কিন্তু পরমুহূর্তেই দেখা যায়, বল তুলে দিলেন তিনি মার্মুশের কাছে।
গত জানুয়ারি সিটিতে যোগ দেওয়ার পর ক্লাবের হয়ে তার প্রথম পেনাল্টি এটি। বড় মঞ্চে প্রথমবার পেনাল্টি নিয়ে ব্যর্থ মিশরের ২৬ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড। তার শটে জোর থাকলেও কোনাকুনি মারতে পারেননি, গোলকিপারকে বিভ্রান্তও করতে পারেননি। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে বল থামিয়ে দেন গোলকিপার ডিন হেন্ডারসন। ফিরতি বলে হলান্ড আবার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার দুর্বল শট মুঠোয় জমান হেন্ডারসন।
সুবর্ণ সুযোগ হারিয়ে পরে আরও বেশ কিছু আক্রমণ চালায় সিটি। কিন্তু হেন্ডারসনের প্রাচীরে ফাটল ধরানো যায়নি। ক্লাবের ১২০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার বড় শিরোপার স্বাদ পায় ক্রিস্টাল প্যালেস। হতাশায় ভরা মৌসুমে একটি শিরোপার শেষ সম্ভাবনাও শেষ হয়ে যায় সিটির।
ম্যাচের পর আলোচনার কেন্দ্রে যথারীতি সেই পেনাল্টি। গুয়ার্দিওলা অকপটেই বললেন, তিনিও জানেন হলান্ডের এগিয়ে না আসার কারণ।
“এটা ওরাই মাঠে ঠিক করেছে। আমি জানি না… ওদের সঙ্গে কথা হয়নি আমার। আমি ভেবেছিলাম, আর্লিং হয়তো নিতে চাইবে… তবে এসব ওদের ভেতরের ব্যাপার।”
“ফ্রি কিক বা পেনাল্টি, এসব আসলে একটি মুহূর্তের ব্যাপার, ওই মুহূর্তের অনুভূতির ব্যাপার… ওরা কেমন বোধ করছে। ওরা ঠিক করেছে, ওমার শট নিতে প্রস্তুত। হেন্ডারসন ভালো সেভ করেছে।”
বিবিসিরি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করা ওয়েইন রুনি একটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন। সিটির নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক ফরোয়ার্ডের ধারণা, ওয়েম্বলিতে ৮৫ হাজার দর্শকের চাপে ভড়কে গিয়ে থাকতে পারেন হলান্ড।
“(হলান্ড) যখন পেনাল্টিতে ব্যর্থ হয়, তখন তাকে দেখে স্পষ্টই বোঝা যায় এবং এটা তার ওপর প্রভাব ফেলে। হয়তো সে ভেবেছে, ওয়েম্বলিতে পেনাল্টি নেওয়া তার জন্য অনেক বেশিই (চাপ) হয়ে যায়! হতেও পারে এমন, সেও তো মানুষ।”
সিটির হতাশাজনক মৌসুমেও সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩০টি গোল করেছেন হলান্ড। সাত পেনাল্টির তিনটিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
সিটির হয়ে ওয়েম্বলিতে আগে পাঁচটি ম্যাচ খেলেও গোলের দেখা পাননি হলান্ড। সেই খরা কাটানোর সুযোগ পেয়েও এবার নিলেন না তিনি।
রুনির মতে, হলান্ডের মতো ফুটবলারদের সঙ্গে মেসি-রোনালদোর মতো কিংবদন্তিদের বড় একটি পার্থক্য এখানেই।
“সে অবশ্যই বিশ্বমানের ফরোয়ার্ড, তবে যখন লিওনেল মেসি ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর মতো ফুটবলারদের কথা আসবে… ওরা কখনোই এমন মুহূর্তে অন্য কাউকে পেনাল্টি নিতে দিত না। এটাই এই দুজনকে আলাদা করে তোলে আর্লি হলান্ড বা কিলিয়ান এমবাপে কিংবা এই ধরনের ফুটবলারদের থেকে। ওরা দুজন মরিয়া এবং প্রতি ম্যাচেই গোল করতে চায়।”
গুয়ার্দিওলার কোচিংয়ে প্রথমবার ট্রফিবিহীন মৌসুম নিশ্চিত হওয়ার পর সিটির এখন চ্যালেঞ্জ আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা করে নেওয়া। দুই ম্যাচ বাকি রেখে পয়েন্ট তালিকার ছয়ে আছে তারা। প্রিমিয়ার লিগ থেকে এবার পাঁচটি দল খেলবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে।