চ্যাম্পিয়ন্স লিগ
Published : 01 Jun 2025, 03:56 AM
ধারাভাষ্যকার বলছিলেন, ‘দিজিরে দুয়ের সামনে এখন হ্যাট্রিকের সুযোগ।’ পরক্ষণেই তাকে তুলে নিলেন কোচ। ৬৫ মিনিট পর্যন্ত খেলে এই তরুণ প্রতিভা যা করলেন, ম্যাচের ফল নিয়ে সংশয় ততক্ষণে বলা যায় শেষ। শুরুতে সতীর্থের গোলে রাখলেন অবদান, পরে নিজে প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠালেন দুইবার। মাঝে দেখালেন বেশ কিছু ঝলক। চোখধাঁধানো পারফরম্যান্সে পিএসজির অধরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের নায়ক হয়ে গেলেন তিনি ২০তম জন্মদিনের দুই দিন আগে।
ক্যারিয়ারের প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের উপলক্ষ রেকর্ড গড়া পারফরম্যান্সে রাঙালেন দুয়ে। মিউনিখের ফাইনালে শনিবার রাতে ইন্টার মিলানকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করে, ৫-০ গোলের বিশাল জয়ে প্রথমবার ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন হলো পিএসজি।
দুটি গোল ও একটি অ্যাসিস্ট করে, বেশ কিছু রেকর্ড-কীর্তি গড়ে ফাইনালের সেরা ফরাসি উইঙ্গার দুয়ে।
দ্বাদশ মিনিটে দারুণ নৈপুণ্যে দলের প্রথম গোলে অবদান রাখেন তিনি। ভিতিনিয়ার পাস ডি-বক্সে ধরে সামনে একপলকে দেখলেন গোলরক্ষক তার দিকে এগিয়ে আছে, মুহূর্তেই তিনি পাস বাড়ালেন অন্য পাশে আশরাফ হাকিমিকে। ফাঁকায় বল পেয়ে বিনা বাধায় জালে ঠেলে দেন মরক্কোর রাইট-ব্যাক।
আট মিনিট পর দুয়ে তার প্রথম গোলটা পেয়ে যান কিছুটা সৌভাগ্যের ছোঁয়ায়। প্রতিপক্ষের একটি আক্রমণ রুখে দিয়ে, তড়িৎ পাল্টা আক্রমণে ওঠে পিএসজি। সতীর্থের পা থেকে ডি-বক্সে বল পেয়ে শট নেন দুয়ে, সামনে ইন্টার ডিফেন্ডার ফেদেরিকো দিমার্কোর পায়ে লেগে একটু দিক পাল্টে বল যায় জালে।
তার (১৯ বছর ৩৬২ দিন) চেয়ে কম বয়সে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে গোল করতে পেরেছেন কেবল দুজন- ১৯৯৫ সালে আয়াক্সের হয়ে এসি মিলানের বিপক্ষে পাট্রিক ক্লাইভার্ট (১৮ বছর ৩২৭ দিন) ও ২০০৪ সালে পোর্তোর হয়ে মোনাকোর বিপক্ষে কার্লোস আলবের্তো (১৯ বছর ১৬৭ দিন)।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে একই সঙ্গে গোল ও অ্যাসিস্ট করা ষষ্ঠ খেলোয়াড় দুয়ে। তবে তার চেয়ে কম বয়সে এই জোড়া স্বাদ পাননি আর কেউ।
৬৩তম মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোলে স্কোরলাইন ৩-০ করে, তিনবারের ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন ইন্টারের ঘুরে দাঁড়ানোর আশা প্রায় শেষ করে দেন দুয়ে। গতিময় আক্রমণে ভিতিনিয়ার থ্রু পাস ডি-বক্সে পেয়ে নিখুঁত শটে জাল খুঁজে নেন তিনি।
প্রথম টিনএজার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে দুটি গোল করলেন দুয়ে। ১৯৬৪ সালের পর ইউরোপিয়ান কাপ বা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে দুটি গোল ও একটি অ্যাসিস্ট করা প্রথম খেলোয়াড়ও তিনি।
পিএসজির হয়ে দুয়ের প্রথম মৌসুম এটি। আরেক ফরাসি ক্লাব রেন থেকে ২০২৪ সালের অগাস্টে প্যারিসের ক্লাবটিতে যোগ দেন তিনি পাঁচ বছরের চুক্তিতে। অভিষেক মৌসুমেই দলের ‘কোয়াড্রপল’ বা মৌসুমে চার শিরোপা জয়ে রাখলেন উল্লেখযোগ্য অবদান।
লিগ আঁয় ৩১ ম্যাচে ৬ গোলের পাশাপাশি দুয়ে অ্যাসিস্ট করেন ৮টি। ফরাসি কাপে ৬ ম্যাচে তার গোল ও অ্যাসিস্ট সমান ৪টি করে। এর মধ্যে ফাইনালে ৩-০ ব্যবধানের জয়ে দলের প্রথম দুটি গোলেই করেন সহায়তা। ক্যারিয়ারের প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আসরে ১৬ ম্যাচে তার গোল ৫টি, অ্যাসিস্ট ৪টি।
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে মৌসুমে ক্লাবের হয়ে ৫৪ ম্যাচে ১৫ গোলের পাশে অ্যাসিস্ট ১৬টি। সঙ্গে চারটি শিরোপা, নতুন ঠিকানায় অভিষেক মৌসুমে এর চেয়ে বেশি কিছু আর চাইতে পারতেন না দুয়ে!
ওহ হ্যাঁ, এখনও ক্লাব বিশ্বকাপ বাকি!