Published : 04 Nov 2023, 03:28 PM
সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে বিটলসের শেষ গান ‘নাও অ্যান্ড দেন’, যেখানে প্রযুক্তির সহায়তায় পুরোনো ক্যাসেট থেকে জন লেননের কণ্ঠস্বর ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এই গান নিয়ে কাজ করার অনুভূতিকে ‘যাদুকরী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন তারই কিশোর বয়সের বন্ধু পল ম্যাকার্টনি।
এ গানের লেখক ও গায়ক জন লেনন নিজেই। আর পরবর্তীতে, এটি নিয়ে কাজ করেছিলেন ব্যান্ডের আরেক সদস্য জর্জ হ্যারিসন। তবে, সে সময় গানটি অপ্রকাশিত থেকে গেলেও মূল রেকর্ডিংয়ের কয়েক দশক পর গানটির কাজ শেষ করেছেন ব্যান্ডের বাকি দুই সদস্য পল ম্যাকার্টনি ও রিংগো স্টার।
ব্রিটিশ সংবাদপত্র ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গানটিকে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে বিটলসের শেষ গান হিসেবে, যেখানে লেননের কন্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করে প্রযুক্তির সহায়তায় গানটির কাজ শেষ করা হয়।
“মৃত্যুর আগে জন কিছু গান নিয়ে কাজ করছিলেন। ইয়োকো ওনো (লেননের স্ত্রী) এ বিষয়ে জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে একটি ক্যাসেট আছে, যেখানে জনের কয়েকটি অসমাপ্ত গান রয়েছে। তুমি কী এগুলো শেষ করতে চাও?” --বিবিসি রেডিও ১’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গানের মূল প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন ম্যাকার্টনি।
“আমরা ভেবে দেখলাম যে কাজটা ভালোই হবে। এর মাধ্যমে আমরা একেবারে নতুন এক উপায়ে জনের সঙ্গে ফের কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি, যেটা এক সময় কল্পনাতীত বিষয় ছিল।” - বলেন তিনি।
“আমি রিংগো’র সঙ্গে কথা বলি, জিজ্ঞেস করি, এ গানের জন্য সে ফের ড্রামসের স্টিক হাতে নেবে কি না।”
পল বলে চললেন, “তারপর ভাবলাম, আমিওতো এতে খানিকটা বেইজ বাজাতে পারি। আর তাই আমিও ফের বেইজ গিটার হাতে নিলাম। আমাদের কাছে জর্জের গিটারের বাদন ও জনের কণ্ঠস্বর আগে থেকেই ছিল। আর আমি এতে যে অনুভূতি পেয়েছি যাদুকরী।”
“একে আমরা সত্যিকারের রেকর্ডিংয়ের আদলেই শেষ করি। সেটাই আপনারা শুনতে পাবেন।”
এ তো গেল কারিগরি বিষয়। কিন্তু আসলেই কাজের সময় কেমন লেগেছে সত্তরোর্ধ এই বিটলের?
“আমরা যখন স্টুডিও’তে ছিলাম, আমাদের কানে জনের কণ্ঠ ভাসছিল। আমার মনে হল, ও পাশের রুমের ভোকাল বুথেই আছে। আবার আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ওর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা পাইনি। হঠাৎ করেই মনে হলো, আমরা একসঙ্গে। আর সেই পুরোনো জনির সঙ্গেই কাজ করছি আমরা।”
ম্যাকার্টনি আরও বলেন, তিনি আশা করেন যে ভক্তরা এ গানে ‘ভালোবাসার অনুভূতি’ পাবেন। “আমাদের রেকর্ডিংয়ের সময়ও একই প্রচেষ্টা ছিল, সেটা হল ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়া। তবে, এ গান করতে গিয়ে মন খারাপও হয়েছে আমদের।”
“এখানে জন ‘আই মিস ইউ’ ও এ ধরনের বেশ কিছু কথা বলেছে…আমি মনে করি, এটা আবেগ। এই আবেগ শব্দটিকেই শ্রোতারা এর মূল বিষয় হিসেবে নেবেন।”
২০২১ সালে নিউজিল্যান্ডের পরিচালক পিটার জ্যাকসনের বানানো ‘দ্য বিটলস: গেট ব্যাক” তথ্যচিত্রেও ‘অডিও রেস্টোরেশন’ প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যান্ডের সদস্যদের কণ্ঠস্বর, মিউজিক ও কথোপকথন ফেরানো হয়েছিল।
২০২২ সালে বিটলসের চার গানের অ্যালবাম ‘রিভলভার’-এও মাস্টার টেপ থেকে এ প্রযুক্তির সহায়তায় নতুন করে গান মিক্সিং করেছিলেন জ্যাকসন ও তার সাউন্ড দল, যেটির নেতৃত্বে ছিলেন তার স্বদেশী গীতিকার এমিল দে লা রে। আর ‘নাও অ্যান্ড দেন’ গানের বেলাতেও একই ঘটনা ঘটল, যেখানে লেননের কণ্ঠস্বরকে পিয়ানো ও মূল রেকর্ডিং থেকে পৃথক করা হয়েছে।
এই প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন সম্পর্কে ম্যাকার্টনি বলেন, এর বিভিন্ন নিরীক্ষা ব্যান্ডের মূল ভাবধারার সঙ্গে মিলে যায়।
তিনি বলেন, “যখন গানের কারিগরী বিষয় কিছুটা ‘অফবিটে’ চলে গিয়েছিল, মানে, আমি যখন প্রথমবার একটি টেপ ভুল করে উল্টো দিক থেকে শুনেছি, তখনই আমি বলেছি যে, ‘হায় হায়, এটা আবার কী?” আমি বললাম, এটা আমরা রেকর্ডিংয়ে রাখতে চাই। বাকিরা হৈ হৈ করে উঠল– ‘আরে, টেপটা ঠিকভাবে চালাও আগে’।”
“তবে, আমরা সবসময়ই পিটার জ্যাকসনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো যোগ করেছি গানে। সে এমনভাবে গানটিকে সাজিয়েছে, শুনলেই যাদুকরী মনে হয়। আর জনের সঙ্গে আবারও গান গাইতে পারার বিষয়টিও আমার কাছে খুবই স্পেশাল।”
গানটি প্রকাশ পেয়েছে বৃহস্পতিবার। যেখানে ব্যবহার করা হয়েছে ১৯৬২ সালে ব্যান্ডের প্রথম গান ‘লাভ মি ডু’র ‘ডাবল এ-সাইড’ ফনোগ্রাফ রেকর্ডিং। আর এর প্রচ্ছদ তৈরি করেছেন মার্কিন শিল্পী এড রুসকা।
গানটির মিউজিক ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে ৩ নভেম্বর।