Published : 26 Jun 2025, 01:25 PM
লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির প্রাচীন এক নকশা আধুনিক ড্রোনের শব্দকে আরও কমিয়ে আনতে পারে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
রেনেসাঁ যুগের ইতালীয় প্রতিভা দ্য ভিঞ্চি যে ধরনের হেলিকপ্টার নকশার কথা প্রথম কল্পনা করেছিলেন নতুন গবেষণা বলছে, সেই ধরনের নকশা আধুনিক ড্রোনের শব্দকে আরও কমিয়ে আনতে বা নীরব করতে সহায়তা করবে।
ড্রোন বাতাসে ওড়ার সময় এর প্রপেলার বা ঘূর্ণায়মান পাখা এক ধরনের জোরালো শব্দ তৈরি করে। এসব রিমোটচালিত ড্রোন সাধারণত কোথাও প্যাকেট পৌঁছানো, ছবি তোলা, জরুরি সেবা দেওয়া ও যুদ্ধে ব্যবহারের মতো নানা কাজে যত বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে ততই এর শব্দ দূষণের পরিমাণও বাড়ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
‘জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি’র নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, দ্য ভিঞ্চি প্রায় ৫০০ বছর আগে যে যন্ত্রটি আবিষ্কার করেছিলেন, সেটি হয়ত আরও কম শব্দ করে চলতে পারে এমন ড্রোন প্রযুক্তি তৈরির চাবিকাঠি হতে পারে।
‘মোনা লিসা’ ও ‘দ্য লাস্ট সাপার’-এর মতো চিত্রকর্মের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত দ্য ভিঞ্চি একজন প্রকৌশলী এবং স্থপতিও ছিলেন। অ্যারোপ্লেনের যুগ শুরু হওয়ার বহু শতক আগেই উড়ুক্কু যন্ত্রের ধারণা দিয়েছেন তিনি, যার মধ্যে হেলিকপ্টারের আদিম রূপ বা প্রোটোটাইপ একটি।
পনেরশ শতকে দ্য ভিঞ্চির কল্পনা করা ‘এরিয়াল স্ক্রু’ হচ্ছে এমন এক প্রাচীনতম নকশাগুলোর একটি, যা বাতাসে ভেসে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ওঠার শক্তি তৈরি করতে পারে, অর্থাৎ এটি ছিল এক ধরনের ঘূর্ণায়মান পাখা বা রোটরের প্রাথমিক ধারণা।
এরপরও এ যন্ত্রের বায়ুগতিগত ও শব্দ সম্পর্কিত কার্যকারিতা নিয়ে এখনও খুব কম বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়েছে, বলেছেন এ গবেষণার লেখক ও ‘জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি’র যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক রাজাত মিত্তাল।
গবেষণাটি বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে এখনও পর্যালোচিত না হলেও দ্য ভিঞ্চির ‘এরিয়াল স্ক্রু’ নকশার আধুনিক রূপের বায়ুগতিগত শক্তি ও শব্দ উৎপাদনের মাত্রার কম্পিউটার সিমুলেশন চালিয়েছেন গবেষক ড. মিত্তাল ও তার দল।
ড. মিত্তাল বলেছেন, “দ্য ভিঞ্চির দৃষ্টিদীপ্ত এরিয়াল স্ক্রু, যেটি আধুনিক হেলিকপ্টারেরও আগের তৈরি এক ধারণা– আমাদের গবেষণার মূল অনুপ্রেরণা।”
এই যন্ত্রকৌশলবিদ বলেছেন, “আমাদের ধারণাটি ছিল ইতিহাস থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন ড্রোন তৈরি করা, যা অনেক কম শব্দ তৈরি করবে।”
আধুনিক ড্রোনের শব্দ সাধারণত প্রপেলার শীর্ষে বাতাসের ঘূর্ণায়মান ধারা বা ‘এয়ার ভর্টেক্স’ তৈরি হওয়ার কারণে হয়। ওই ঘূর্ণায়মান বাতাস প্রপেলারের পাতলা ও ঢালে থাকা পাখার সঙ্গে ধাক্কার ফলে শব্দ তৈরি হয়। ড্রোনের শব্দের প্রধান কারণ হচ্ছে, বাতাসের গতিবিধি এবং প্রপেলারের আকৃতি ও চলাচল।
গবেষকরা বলছেন, দ্য ভিঞ্চির নকশার মতো স্ক্রু আকৃতির ও একটি পাখা বিশিষ্ট প্রপেলার বাতাসের ঘূর্ণিকে আশপাশে ছড়িয়ে দিতে পারে এবং সেই কারণে ড্রোনে শব্দ কম হতে পারে।
কম্পিউটার সিমুলেশন চালিয়ে এ নিয়ে পরীক্ষা করেছেন বিজ্ঞানীরা, যেখানে বিভিন্ন ধরনের বাতাসের গতির মধ্যে ওই নকশার ওঠার শক্তি, যান্ত্রিক শক্তি ও শব্দ বেরিয়ে আসার মাত্রা কেমন হয় তা খতিয়ে দেখেছেন গবেষকরা।
দ্য ভিঞ্চির স্ক্রু আকৃতির প্রপেলার থেকে পাওয়া বিভিন্ন ফলাফলকে এমন এক প্রচলিত দুই পাখাওয়ালা প্রপেলারের সঙ্গে তুলনা করেছেন গবেষকরা, যেটি বাতাসে প্রায় একই পরিমাণ ওঠার শক্তি তৈরি করে। এর মাধ্যমে গবেষকরা দেখেছেন, কোন নকশা বেশি কার্যকর ও কম শব্দ তৈরি করে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, আধুনিকভাবে তৈরি দ্য ভিঞ্চির নকশা একই পরিমাণ ওঠার শক্তি তৈরি করলেও কম শব্দ তৈরি করেছে।
গবেষণাটিতে গবেষকরা লিখেছেন, “দ্য ভিঞ্চির এরিয়াল স্ক্রু প্রতি একক ওঠার শক্তির জন্য অনেক কম যান্ত্রিক শক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি কম শব্দও তৈরি করে।”
তারা বলছেন, দ্য ভিঞ্চির এরিয়াল স্ক্রু সর্পিলাকৃতি বা স্পাইরালের মতো বাঁকানো আকৃতির হওয়ায় এর রোটরের পাখা ও বাতাসের ঘূর্ণির ধারা একে অপরকে কম স্পর্শ করে। ফলে সেখান থেকে হওয়া শব্দও কমে যায়।
গবেষকরা লিখেছেন, “এরিয়াল স্ক্রুর একটি ধারাবাহিক একক পাখার ডিজাইন থাকার কারণে তা প্রপেলার ও বাতাসের ঘূর্ণির মধ্যে সংঘর্ষ থেকে যে শব্দ তৈরি হয় তা অনেক কমিয়ে দেয়, যা রোটরের শব্দের প্রধান কারণ।”
গবেষকদের মতে, গবেষণার এসব ফলাফল থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, সাধারণ রোটরের বাইরে নতুন ধরনের বিভিন্ন নকশা ড্রোনের শব্দ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, বিশেষ করে যেখানে শব্দের মাত্রা কম থাকা খুব জরুরি।