Published : 03 Jul 2023, 04:44 PM
‘টুইট দেখার সংখ্যায় লাগাম টানা’র ঘোষণা দিয়েছেন ইলন মাস্ক। এর পরপরই ‘উন্মুক্ত ইন্টারনেট’ বজায় রাখার আহ্বান জানালেন টুইটারের সাবেক প্রধান ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি।
মাস্কের টুইট দেখার সংখ্যায় অস্থায়ী সীমাবদ্ধতার ফলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ছড়ানোর পর ডরসি বলেন, ‘টুইটার চালানো সহজ নয়’।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ব্লুস্কাই’-এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন টুইটারের এই সাবেক সিইও।
তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, সামাজিক মাধ্যমটি ‘সেন্সরশিপমুক্ত উন্মুক্ত প্রোটোকল’ বানাবে, যা ‘সবার জন্য ভালো হওয়ার পাশাপাশি উন্মুক্ত ইন্টারনেট সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’ রাখবে।
এই সপ্তাহান্তে হাজার হাজার ব্যবহারকারী টুইটারের সমস্যা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে টুইট পুনরুদ্ধার করতে না পারা, টাইমলাইন ও ফলোয়ার হারিয়ে ফেলার মতো বিষয়াদি।
রোববার শুরু হয়ে সোমবার পর্যন্ত বিভ্রাট পর্যবেক্ষক সাইট ‘ডাউন ডিটেকটর’-এ নিয়ে অভিযোগের বন্যা বয়ে যায়।
গেল শনিবার টুইটার ভেরিভাইড অ্যাকাউন্টে দৈনিক পোস্ট দেখার সংখ্যা ছয় হাজারে সীমিত করার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই এই প্রতিক্রিয়া শুরু হয় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
পরবর্তীতে এই সংখ্যা মাত্রা বাড়িয়ে ‘ভেরিফাইড অ্যাকাউন্টে আট হাজার, আনভেরিফাইড অ্যাকাউন্টে আটশ ও নতুন অ্যাকাউন্টে চারশ’ করা হয়।
লাগামছাড়া ‘ডেটা স্ক্র্যাপিং ও সিস্টেম ম্যানিপুকেশন’ ঠেকানোকে ওই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন মাস্ক।
নতুন এই পদক্ষেপের পরপরই ব্যবহারকারীরা নিজেদের হতাশার কথা জানিয়েছেন। তাদের নোটিফিকেশনে লেখা ছিল, “দুঃখিত, আপনার রেট সীমিত। দয়া করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার চেষ্টা করুন।”
সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিটির এমন পদক্ষেপে শিল্প বিশেষজ্ঞরাও বিস্মিত, যেখানে নভেম্বরে মাস্কের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই বিজ্ঞাপনদাতা ধরে রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা করতে হচ্ছে সেবাটিকে।
“মানুষের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার বন্ধ করা, আর, ব্যবসার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার পায়ে কুড়াল মারার এমন উদ্যোগ আমি আর কোনো সামাজিক মাধ্যম নেটওয়ার্ককে নিতে দেখিনি।” --বলেন সামাজিক মাধ্যম পরামর্শক ও শিল্প বিশ্লেষক ম্যাট নাভারা।
পাশাপাশি, এই পদক্ষেপকে ‘ইলন মাস্কের আরেকটি পাগলাটে সিদ্ধান্ত’ হিসেবে আখ্যা দেন তিনি।
বাজার বিশ্লেষক কোম্পানি ‘ইনসাইডার ইনটেলিজেন্স’-এর প্রধান বিশ্লেষক জ্যাসমিন ইনবার্গ বলেন, নতুন এই পদক্ষেপ টুইটারের বিজ্ঞাপনী ব্যবসায় ‘সর্বনাশ’ ডেকে আনতে পারে। এরইমধ্যে এই খাত থেকে আয় কমে গেছে কোম্পানির।
নিজেদের বিজ্ঞাপনী ব্যবসা ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে ‘এনবিসিইউনিভার্সাল’-এর সাবেক বিজ্ঞাপন প্রধান লিন্ডা ইয়াকারিনোকে প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিযুক্ত করে টুইটার।
বিজ্ঞাপন পরামর্শক কোম্পানি ‘এজেএল অ্যাডভাইজরি’র প্রতিষ্ঠাতা লউ পাসকালিসের মতে, সর্বশেষ ‘এই সীমাবদ্ধতা’ থেকে এমন মার্কেটপ্লেসের ইঙ্গিত মেলে, যেখানে লিন্ডাকে ডেকে এনেও ‘নিজের তৈরি সমস্যা থেকে নিজেকে বাচাতে পারছেন না’ মাস্ক।
টুইটার চালানো যে ‘সহজ নয়’, সেটি স্বীকার করেও ডরসি বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন দলটি ‘সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নিজেদের সেরাটা কাজটি করছে’।
“দূর থেকে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করা সহজ। আমি এই দোষ স্বীকার করে নিচ্ছি। তবে আমি জানি, টুইটারের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো রাজত্ব করা। আর তারা এটা করে দেখাবে।” --বলেন তিনি।
হাজার হাজার লোক প্ল্যাটফর্ম বিভ্রাট সংশ্লিষ্ট অভিযোগ অব্যাহত রাখায় এই সীমাবদ্ধতা কতদিন টিকবে, সেটি পরিষ্কার নয়।