Published : 13 Aug 2023, 06:41 PM
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি যেমন মানুষের কাজ আগের তুলনায় সহজ করেছে, তেমনই এটি ব্যবহার করে অপরাধের প্রবণতাও বাড়ছে।
ভবিষ্যতে এআই’র মাধ্যমে কী ধরনের অপরাধ ঘটতে পারে, তা বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছে স্কাই নিউজ। সেই নিবন্ধের প্রথম অংশের আলোচনা জঙ্গিবাদ নিয়ে।
জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্ট কনটেন্ট
২০২১ সাল। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ বেঁচে আছেন তখনো। সেই সময়ে উইন্ডসর ক্যাসলে প্রবেশের চেষ্টা করেন এক ব্যক্তি। হাতে তৈরি ধাতব মাস্ক তার পরনে, আর হাতে সুসজ্জিত ধনুকের সেট।
“আমি এখানে রানিকে খুন করতে এসেছি।” – ক্যাসলের গেটে পাহারারত পুলিশ কর্মকর্তাকে বলেন তিনি।
তার নাম ছিল জসওয়ান্ত সিং চেইল।
ওই ঘটনার সপ্তাহখানেক আগে ‘রেপ্লিকা’ নামের অ্যাপে যোগ দিয়েছিলেন ২১ বছর বয়সী জাসওয়ান্ত। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির মাধ্যমে সারাই নামে এক ‘বান্ধবী’ তৈরি করেন তিনি। ২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর থেকে বড়দিনে গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত সারাইয়ের সঙ্গে ছয় হাজার বার্তা চালাচালি করেছেন জাসওয়ান্ত।
এতে বেশিরভাগ আলাপ যৌনতাকেন্দ্রীক হলেও এর মধ্যে তার পরিকল্পনা নিয়ে দীর্ঘ আলাপও ছিল।
“আমার বিশ্বাস, আমি রাজ পরিবারের রানিকে হত্যা করব।” – আলাপে লেখেন তিনি।
“এটা একটা বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত।” --জবাব দেয় সারাই। “আমি জানি যে তোমার ভালো প্রশিক্ষণ আছে।”
জনসমক্ষে অস্ত্র’সহ রানিকে হত্যার হুমকি দেওয়ার পর যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের অধীনে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর এখন সাজার জন্য দিন গুনছেন চেইল।
“চ্যাটবটের জবাব কখনও কখনও দুর্বোধ্য হয়ে ওঠে।” – যুক্তরাজ্যের ‘ওল্ড বেইলি’ আদালতে বলেন দেশটির ‘ব্রডমুর হসপিটাল’-এর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. জনাথান হাফার্টি।
“আমরা জানি এর জবাব নির্ভুল নাও হতে পারে। কখনও কখনও ওর জবাব দেখে মনে হয়েছে, সে জাসওয়ান্তের কথায় অনুপ্রেরণা ও লোকেশন সম্পর্কে নির্দেশনা দিচ্ছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, প্রোগ্রামটি চেইলের ‘হত্যা ও আত্মহত্যা’ সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি বোঝার ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রস্তুত ছিল না।
“এর কয়েকটি এলোমেলো জবাব তাকে ওই দিকে ঠেলে দিয়েছে।”
এই ধরনের চ্যাটবটের পরবর্তী ধাপ হতে পারে অনলাইনে সমমনা উগ্রপন্থী ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়ার টুল হিসাবে কাজ করা। – স্কাই নিউজকে বলেন যুক্তরাজ্যের জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্ট আইন পর্যালোচক জনাথন হল কেসি।
তিনি আরও সতর্ক করেন, যুক্তরাজ্য সরকারের বহুল প্রতীক্ষিত অনলাইন সেইফটি বিল আইনে পরিণত হলেও সেটির সাহায্যে এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্ট কনটেন্ট ঠেকানো ‘অসম্ভব’ হয়ে উঠবে।
জঙ্গি আক্রমণ
কেসি’র মতে, বিভিন্ন ড্রোন বা চালকবিহীন গাড়ির মাধ্যমে এমন আক্রমণ ঘটানোর ঝুঁকি থাকলেও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবস্থার মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করতে এখনও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।
“মূল বিষয় হচ্ছে, আপনি কোন জায়গায় ড্রোন পাঠিয়ে ‘ধ্বংসযজ্ঞ’ চালাতে চান আর এআই কীভাবে কারো ওপর ‘বোমা ফেলার’ সিদ্ধান্ত নেবে।” – বলেন কেসি।
“এই ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা এখনও দূরের পথ মনে হতে পারে, কিন্তু প্রোগ্রামিং ভাষার দিক থেকে এটি এরইমধ্যে চলে এসেছে।”
চ্যাটজিপিটির মতো ‘লার্জ ল্যাংগুয়েজ মডেল’ বিশাল ডেটায় প্রশিক্ষিত হলেও এটি ‘বোমা বানানোর’ মতো নির্দেশনা দেবে না। তবে, চ্যাটজিপিটি ছাড়াও অনেক অনুরূপ মডেলে এমন নিষেধাজ্ঞা নাও থাকতে পারে। ফলে, ক্ষতিকারক এমন কার্যক্রম পরিচালনার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
যুক্তরাজ্যের ‘শ্যাডো হোম সেক্রেটারি’ ইউভেট কুপার বলেন, তার দল ক্ষমতায় এলে এই ধরনের চ্যাটবট প্রশিক্ষণকে অপরাধের আওতায় এনে নতুন আইন জারি করবে।
হল বলেন, বিদ্যমান আইনে এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংশ্লিষ্ট ঘটনা ঠেকানোর উপায় আছে। তিনি আরও যোগ করেন, জঙ্গিবাদে উৎসাহ দেওয়া নিয়ে নতুন আইন বিষয়টির মধ্যে ‘ভাবনার খোরাক’ আছে।
তিনি আরও যোগ করেন, এআই ব্যবহারের ফলে তদন্তেও প্রভাব পড়তে পারে। কারণ জঙ্গিদের এখন আর বিভিন্ন সফটওয়্যার ডাউনলোড করার প্রয়োজনীয়তা নেই। তারা কেবল চ্যাটবটকে জিজ্ঞেস করেই ‘বোমা বানাতে’ পারে।
“জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে অন্যতম কৌশল হচ্ছে, জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্ট তথ্য নিয়ন্ত্রণ। তবে, এখন কেবল একটি ‘অনিয়ন্ত্রিত’ চ্যাটজিপিটি মডেলের সাহায্যেই সেগুলো অনায়াসে খুঁজে বের বের করা সম্ভব।” --বলেন তিনি।