Published : 04 Jun 2025, 09:06 PM
দুর্লভ খনিজ, মিশ্রণ ও ম্যাগনেট রপ্তানিতে চীন বিধিনিষেধে দেওয়ায় বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদকরা বিপাকে পড়েছেন।
বৈশ্বিক গাড়ি উৎপাদকরা মঙ্গলবার মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো তাদের উদ্বেগের কথা হয়ে জানিয়ে বলেছে, চীনের এই রপ্তানি বিধিনিষেধ দ্রুত প্রত্যাহার না হলে কোনো কোনো পণ্যের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
গত সপ্তাহে ভারতীয় একটি ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের পর এবার জার্মান গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলোও সতর্ক করে বলেছে, তাদের স্থানীয় অর্থনীতিতে চীনের এ বিধিনিষেধের প্রভাব পড়বে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, এপ্রিলে চীন নানান ধরনের দুর্লভ খনিজ ও চুম্বকের রপ্তানি স্থগিত করায় বিশ্বজুড়ে গাড়ি, মহাকাশ, সেমিকন্ডাক্টর এবং সামরিক সরঞ্জাম নির্মাতাদের সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাপক ওলটপালট দেখা যাচ্ছে।
দুর্লভ খনিজে চীনের যে আধিপত্য তা এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আরও স্পষ্ট হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সাথে চলমান বাণিজ্য সংঘাতের মধ্যে বেইজিং একে কৌশলগত চাল হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসন চীনের সাথে বাণিজ্য ভারসাম্য পুনরুদ্ধার ও উৎপাদন শিল্প ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছে। তবে চীনও পাল্টা শুল্ক দিয়ে জবাব দিয়েছে এবং এখন সরবরাহ শৃঙ্খলে তার নিয়ন্ত্রণকে কাজে লাগাচ্ছে।
এই সপ্তাহে ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা, যেখানে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় থাকবে বলে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট জানিয়েছেন।
“চীন জেনিভা বাণিজ্য চুক্তি মেনে চলছে কিনা তা আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি,” বলেছেন তিনি।
ট্রাম্প এর আগে বলেছিলেন, বিরল খনিজ রপ্তানিতে বিধিনিষেধ ধীরগতিতে তুলে চীন জেনেভা চুক্তির লঙ্ঘন করছে।
বেইজিংয়ের দেওয়া বিধিনিষেধে গাড়ি, ড্রোন, রোবট থেকে শুরু করে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য অত্যাবশ্যক চুম্বকের চালান অনেক চীনা বন্দরে আটকে গেছে; অনেকের এ পণ্য রপ্তানির লাইসেন্সের আবেদন চীন এখনও খতিয়ে দেখছে ।
তাদের বিধিনিষেধের কারণে টোকিও থেকে ওয়াশিংটন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের সরকার ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক দুশ্চিন্তায় পড়েছে। তারা দ্রুত বিকল্প উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। তাদের আশঙ্কা, নতুন উৎস না পাওয়া গেলে এবং চীনের বিধিনিষেধ অব্যাহত থাকলে অনেক প্রতিষ্ঠানের গাড়ি ও অন্যান্য পণ্যের উৎপাদন গ্রীষ্মের শেষে এসে পুরোপুরি থেমে যেতে পারে।
“যদি দ্রুত পরিস্থিতির পরিবর্তন না হয়, তবে উৎপাদনে বিলম্ব কিংবা বন্ধ হওয়া অনেকটাই অনিবার্য,” বলেছেন জার্মান গাডি নির্মাতাদের লবির প্রধান হিলডেগার্ড মুলার।
২০২৩ সালে চীন ১৬টি দুর্লভ খনিজ ও সংশ্লিষ্ট পণ্যের রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করে। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পূরক শুল্কের জবাবে ওই তালিকায় তারা আরও সাতটি খনিজ যোগ করেছে।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে জ্বালানি সম্পদ বিভাগে সহকারী সচিবের দায়িত্ব পালন করা ফ্রাঙ্ক ফ্যানন বলছেন, যারা বিষয়টির খোঁজখবর রাখেন, তাদের কাছে চীনের বিধিনিষেধে বিশ্বজুড়ে এই বিঘ্ন অবাক করার মতো নয়।
“আমাদের (যুক্তরাষ্ট্রে) উৎপাদন নিয়ে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, এবং আমাদের সরকারের সব সংস্থাকে একত্রে কাজে লাগিয়ে এসব সম্পদ দ্রুত সংগ্রহ করা এবং ঘরোয়া সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। এটা করার সময়সীমা আসলে ‘গতকাল’ ছিল — অর্থাৎ, আর এক মুহূর্তও দেরি করার সুযোগ নেই,” বলেছেন তিনি।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় জাপান, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিক ও শিল্পখাতের নেতারা চীনের সাথে জরুরি আলোচনায় বসার চেষ্টা করছেন। ভারতের বাজাজ অটো ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছে, চীন থেকে চুম্বক আমদানিতে বিলম্ব হলে তা তাদের ইভি উৎপাদনকে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করতে পারে।
এর আগে, মে মাসে জেনারেল মোটরস, টয়োটা, ভক্সওয়াগেন ও হুন্ডাইয়ের মতো শীর্ষ গাড়ি নির্মাতারা ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়ে দ্রুত এই সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছিল। অ্যালায়েন্স ফর অটোমোটিভ ইনোভেশন সতর্ক করে বলেছে, এই দুর্লভ খনিজ ছাড়া গাড়ির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ তৈরি করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।